১৯৮৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম ইসমিত সিংহের। সেখানকার গুরু নানক স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। এর পর লুধিয়ানা ছেড়ে পাড়ি দেন মুম্বই।সেখানকার এমএনসি কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ইসমিত।
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি গানের প্রতিও আগ্রহ ছিল তাঁর। কীর্তনের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন ইসমিত। তার পরেই ধীরে ধীরে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন লালন করতে থাকেন তিনি।
মুম্বইতে আসার পরেই স্বপ্ন পূরণের দিকে প্রথম পদক্ষেপ করেন তিনি। ২০০৭ সালে গানের রিয়্যালিটি শো ‘ভয়েস অফ ইন্ডিয়া’য় অংশগ্রহণ করেন তিনি। তখন ইসমিতের বয়স মাত্র ১৭ বছর। তিনিই ছিলেন সেখানকার কনিষ্ঠতম প্রতিযোগী।
প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে লতা মঙ্গেশকরের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
এখানেই সাফল্যের খিদে মেটেনি তরুণ গায়কের। এর পর ২০০৮ সালে তিনি ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ নামক রিয়্যালিটি শো-তে অংশ নেন।
তবে সেখানে জয়ীর মুকুট মাথায় ওঠেনি তাঁর। কয়েকটি এপিসোড পরেই বাদ পড়ে যান ইসমিত।
ইসমিত কথা দিয়েছিলেন, ‘ভয়েস অফ ইন্ডিয়া’র ফলাফল যাই হোক না কেন তিনি সর্বপ্রথম একটি ধর্মীয় অ্যালবাম প্রকাশ করবেন।
কথা রেখেছিলেন তিনি। জয়ী হওয়ার পর ‘সৎগুরু তুমরে কাজ সওয়ারে’ নামক অ্যালবামে গান করেন ইসমিত।
শুধু অ্যালবামেই নয়, ছবিতেও প্লে ব্যাক করেছিলেন ইসমিত।
পঞ্জাবি ছবি ‘সৎ শ্রী আকাল’-এ একটি শিখ স্তবগান করেছিলেন তিনি। সেই সময় সোনু নিগমের সঙ্গে তুলনা করা হত তাঁর।
জগজিৎ সিংহ সেই ছবিতে ইসমিতের গান শুনে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তরুণ গায়কের। তিনি বলেছিলেন, “ইসমিত খুব ভাল এক জন গায়ক। খুব অল্প বয়সেই ওর কণ্ঠ সব কিছু পেয়েছে।”
বলিউডের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক জুটি সেলিম-সুলেমান-এর সঙ্গেও কাজ করেছিলেন ইসমিত । তবে তার সঙ্গেই গুরুদ্বারেও গান করতেন তিনি। এ ছাড়াও হংকং, ব্যাঙ্কক, মালয়েশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশ ঘুরেও অনুষ্ঠান করছিলেন তিনি।
ঠিক এমনই একটি অনুষ্ঠানের জন্য মলদ্বীপে গিয়েছিলেন ইসমিত। গায়কের সঙ্গে ছিলেন ‘ভয়েস অফ ইন্ডিয়া’র কয়েক জন প্রতিযোগী।
২০০৮ সালের ১ অগস্ট অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর ৩ দিন আগে, ২৯ জুলাই রিসর্টের সুইমিং পুলে ডুবে মৃত্যু হয় তাঁর।
যদিও ইসমিতের পরিবার মৃত্যুর এই তত্ত্ব মেনে নিতে চায়নি। তাঁর মৃত্যুর পিছনে অন্য কারণ আছে বলে আশঙ্কা করেছিলেন তাঁরা।
তাঁদের দাবি, ইসমিতের সঙ্গীরা তাঁকে ডুবে যেতে দেখেও বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানা যায়। সেটি কী ভাবে হয়েছিল, তা জানা যায়নি। পঞ্জাব সরকার ফের ইসমিতের মৃত্যুর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
ইসমিতের পরিবার মলদ্বীপে গিয়ে সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে তদন্তের বিষয়েও কথা বলে। এর পর ১২ বছর কেটে গেলেও এই তরুণ গায়কের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আজও কাটেনি।
ইসমিতের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার ‘ইসমিত সিংহ মিউজিক ইনস্টিটিউট’ গড়ে তোলে। এই সংস্থার মাধ্যমে ইসমিতের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার সঙ্গেই তাঁর মতো নতুন প্রতিভাদের এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন তাঁরা।