তিনিই প্রথম শিল্পী, যিনি পিয়ানোতে সন্তুরের সুর বাজিয়েছেন। মার্কিন পত্রিকার বিচারে তিনিই দ্রুততম কিবোর্ড শিল্পী। তাঁর জন্ম লন্ডনে। বাবা, পাকিস্তানি বায়ুসেনার আধিকারিক। মা নৌরিন ছিলেন জম্মু কাশ্মীরের মেয়ে। তিনি আদনান সামি। তাঁকে বলা হয় সঙ্গীতের সুলতান।
১৯৭১ সালের ১৫ অগস্ট আদনানের জন্ম লন্ডনে। তাঁর বড় হওয়া এবং পড়াশোনা ইংল্যান্ডে। তাঁর বাবা আরশাদ সামি খান ছিলেন পাশতুন প্রজাতির। পাকিস্তানি বায়ুসেনার পাইলট আরশাদ পরে কূটনীতিক হন। চোদ্দটি দেশে তিনি পাকিস্তানের দূত হয়ে কাজ করেছেন।
আরশাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন আফগানিস্তানের রাজ বংশীয়। আফগান সেনার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন তাঁরা। আরশাদের ঠাকুরদা আগা মেহফুজকে হত্যা করা হয় আফগানিস্তানে। তারপর তাঁদের পরিবার পাড়ি দেয় অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে।
ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস-এর রাগবি স্কুল থেকে পড়াশোনার পরে লন্ডনের কিংস কলেজ। এরপর লিঙ্কনস ইন থেকে আইনজীবী হিসেবে উত্তীর্ণ হন আদনান। পাঁচ বছর বয়স থেকেই পিয়োনা বাজাতেন তিনি। নয় বছর বয়সে প্রথম সুর রচনা। ছুটিতে ভারতে এলে তিনি পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার কাছে সন্তুর বাজানো শিখতেন।
তাঁর প্রথম সিঙ্গল ‘রান ফর হুজ লাইফ’ ছিল ইংরেজিতে। মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে। মধ্যপ্রাচ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয় তাঁর গান। ১৯৯৫ সালে সিনেমার গানে পথ চলা শুরু। পাকিস্তানি সিনেমা ‘সরগম’-এ তিনি ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক এবং অভিনেতা। এটাই তাঁর অভিনীত একমাত্র সিনেমা। পাকিস্তানে বেস্ট সেলিং অ্যালবামের মধ্যে অন্যতম ‘সরগম’।
২০০০ সালে আশা ভোঁসলের সঙ্গে আদনান সামির বিখ্যাত অ্যালবাম ‘কভি তো নজর মিলাও’। আদনানে সুরে এই ভিডিয়ো ছিল ইন্ডিপপে চূড়ান্ত সফল ও জনপ্রিয়। অ্যালবামের সবথেকে বেশি হিট হয়েছিল ‘কভি তো নজর মিলাও’ এবং ‘লিফ্ট করা দে’।
এরপর বলিউডে গান ও অভিনয়, দু’দিকেই সুযোগ আসতে থাকে আদনানের কাছে। ‘আজনবি’, ‘চোর মচায়ে শোর’, ‘আওয়ারা পাগল দিওয়ানা’, ‘সাথিয়া’, ‘কোই মিল গয়া’, ‘জগার্স পার্ক’, ‘পেজ থ্রি’, ‘গরম মশালা’, ‘খোলসা কা ঘোসলা’, ‘ডার্লিং’, ‘ধামাল’-এর মতো সিনেমায় আদনান সামির গান শ্রোতাদের মনে দাগ কাটে। বলিউডে তাঁর শেষ কাজ এখনও অবধি ২০১৫ সালে, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে।
১৯৯৩ সালে পাকিস্তানি অভিনেত্রী জেবা বখতিয়ারকে বিয়ে করেন আদনান সামি। তাঁদের একমাত্র ছেলের নাম আজান সামি খান। বিয়ের তিন বছর পরে ভেঙে যায় এই দাম্পত্য। তাঁদের মধ্যে এখন বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁদের একমাত্র ছেলে আজানেরও।
২০০১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে দুবাইয়ের ব্যবসায়ী সাবাহ গালাদরিকে। তাঁদের দু’জনেরই এটা ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। দেড় বছরের মাথায় ভেঙে যায় আদনানের দ্বিতীয় বিয়েও।
২০০৬ সালের জুন মাসে আদনান জানান, তাঁর দেহের ওজন ২৩০ কেজি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ভাবে থাকলে তাঁর আয়ুষ্কাল হবে মাত্র ৬ মাস। এরপর কঠোর ডায়েটিং ও শরীরচর্চায় তিনি ১৬ মাসে ১৬৭ কেজি ওজন কমান।
কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আদনান সামি লাইপোসাকশন করিয়েছেন। কিন্তু এই দাবি নস্যাৎ করে আদনান জানান, তাঁর মতো বিশালদেহীর জন্য লাইপোসাকশন যথেষ্ট নয়। তিনি ওজন কমিয়েছেন লো কার্ব প্রোটিন ডায়েট এবং শরীরচর্চায়।
২০০১ সালে থেকে সামি ভারতে থাকছিলেন ভিজিটর্স ভিসায়। ২০০৮ সালে মুম্বই এসে তাঁকে আবার বিয়ে করেন দ্বিতীয় স্ত্রী সাবাহ। কিন্তু এই পুনর্বিবাহও এক বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি।
আট বছর পরে চতুর্থ বারের জন্য বিয়ের মঞ্চে আদনান সামি। ২০১০ সালে বিয়ে করলেন রোয়া সামি খানকে। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেদিনা সামি খান।
২০১৫ সালে তিনি ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেন ভারতীয় নাগরিকত্বের। ২০১৬ সালে তাঁর আবেদন মঞ্জুর হয়।