ঋতুপর্ণর ‘অসুখ’ ছবিতে কাজ করেছিলেন শিলাজিৎ।
আপনি গায়ক না অভিনেতা? আকছার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে থাকেন শিলাজিৎ মজুমদার। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভেও তাঁর কাছে এই একই প্রশ্ন রেখেছিলেন অনুরাগীরা। জানতে চেয়েছিলেন নিজের কোন সত্তাকে এগিয়ে রাখেন শিলাজিৎ।
সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রায় দু’দশক আগের একটি ঘটনা মনে পড়ল শিলাজিতের। সেই সময়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁকে ‘অসুখ’ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এক দিকে দেবশ্রী রায়, অন্য দিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দুই দক্ষ শিল্পীর সঙ্গে অভিনয়ের কথা ভেবে ততক্ষণে উত্তেজনায় ফুটছেন শিলাজিৎ। অন্য দিকে, শিলাজিৎকে ছবিতে নেওয়ার কথা সৌমিত্রকে জানিয়েছেন ঋতুপর্ণ। তবে গায়ক শিলাজিৎ ক্যামেরার সামনে কতটা স্বচ্ছন্দ হবেন, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা। পরিচালককে প্রশ্ন করেছিলেন, “শিলাজিৎ কি এই চরিত্রটা করতে পারবে?” সৌমিত্রর এই দ্বিধার কথা শিলাজিতকে জানিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। খানিক মজার সুরে শিলাজিৎ বলেন, “আমি ঋতুকে চট করে বিশ্বাস করতাম না। ঋতু খুব ঢপ দিত। ও গল্প তৈরি করতে পারত। নিমেষে গল্প তৈরি করে দিত।”
ঋতুপর্ণর কাছে সৌমিত্রের সেই কথা শুনে খানিক আশাহত হয়েছিলেন শিলাজিৎ। কিন্তু সব খারাপ লাগা ভুলে শ্যুট শুরু করেন তিনি। ঋতুপর্ণ এই ছবির জন্য শিলাজিতের মতোই একজনকে চেয়েছিলেন। তাঁর ‘লুক’, বাচনভঙ্গি-- সবই মিলে গিয়েছিল পরিচালকের ভাবনার সঙ্গে। শিলাজিৎ জানান, ছবিতে সৌমিত্রের সঙ্গে খুব বেশি কাজ ছিল না তাঁর। এক দিন ঘণ্টা দুয়েকের জন্য এক সঙ্গে শ্যুট করেছিলেন তাঁরা। অবশেষে ছবির কাজ শেষ হয়। ছবি মুক্তিও পায়। রিলিজ পার্টিতে অবশেষে মুখোমুখি হন শিলাজিৎ এবং সৌমিত্র। বর্ষীয়ান অভিনেতাকে সামনে দেখেই তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন ‘ঝিন্টি’-র গায়ক। এর পরেই সরাসরি শিলাজিৎকে নিয়ে নিজের সন্দেহের কথা তাঁকে জানান সৌমিত্র। তিনি বলেন, “প্রথম যখন স্ক্রিপ্টটা শুনেছিলাম তখন আমার সন্দেহ ছিল, তুমি করতে পারবে কি? আমি ছবিটা দেখলাম। তুমি তো বেশ পরিণত অভিনেতাদের মতো করেছ।” সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সেই প্রশংসা শিলাজিতের কাছে জাতীয় পুরস্কারের থেকে কিছু কম নয়। খানিক তৃপ্তির হাসি হেসে তিনি বললেন, “এই যে সৌমিত্রদার থেকে আমি প্রশংসা পেয়েছিলাম, এটাই আমার কাছে হাজারটা জাতীয় পুরস্কারের সমান।”