শ্রেয়স তলপড়ে। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা। বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি অন্য ঘরানার সমান্তরাল ছবিতেও তাঁর সাবলীল বিচরণের প্রমাণ দর্শক পেয়েছেন।
মুম্বইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শ্রেয়সের বলিউড জার্নি ছিল খুবই অনিশ্চিত।
কোনও স্টারকিড না হওয়া সত্ত্বেও এবং বলি ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও পরিচয় না থাকা সত্ত্বেও নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন শ্রেয়স। এর নেপথ্যে রয়েছে একটি ব্যর্থতা। শ্রেয়সের জীবনে ওই ব্যর্থতা না এলে হয়তো এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না তিনি।
প্রথম থেকেই বলি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না শ্রেয়স। বরং তিনি ছিলেন সচিন তেন্ডুলকরের ভক্ত। ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন। তাই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই সচিনের কোচ রমাকান্ত আচরেকরের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন।
এ দিকে শ্রেয়সের মায়ের ইচ্ছা ছিল, ছেলে পড়াশোনা করে ব্যাঙ্কের পরীক্ষায় বসুক। বড় ব্যাঙ্কার হোক। মায়ের ইচ্ছা পূরণেরও চেষ্টা করেছিলেন শ্রেয়স, কিন্তু ব্যর্থ হন। আর এই ব্যর্থতাই শ্রেয়সকে বলিউডে নিয়ে এসে ফেলে।
১৯৭৬ সালে মুম্বইয়ে জন্ম শ্রেয়সের। পরিবার সূত্রে বলিউডে খুব একটা পরিচিতি ছিল না তাঁর। তাই স্টারকিডদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। কিন্তু দক্ষ অভিনয়ে শ্রেয়স প্রমাণ করে দেন, বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে স্টারকিড হওয়ার প্রয়োজন নেই।
কলেজে পড়ার সময় থেকে অভিনয়কে ভালবাসতে শুরু করেন তিনি। প্রথমে কলেজ ড্রামায় অংশ নিতেন। সেখান থেকে মরাঠি থিয়েটারে সুযোগ পান। মহারাষ্ট্র জুড়েই স্টেজ পারফর্ম করতে শুরু করেন।
তার পর ১৯৯৮ সালে জি টিভিতে সম্প্রচারিত একটি সিরিয়ালে সুযোগ পান। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এর পর মরাঠি সিরিয়াল ‘দামিনী’ তাঁকে বহুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
তাঁর প্রথম বলি ব্রেক পরিচালক নাগেশ কুকুনুরের ‘ইকবাল’ ছবিতে। এই ছবিতে তিনি মূক-বধির এক তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই তরুণের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার জার্নি নিয়েই এই ছবি। শ্রেয়সই ছিলেন এ ছবির মুখ্য চরিত্র। আগে থেকে ক্রিকেট জানার জন্যই সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এ রকম সমান্তরাল ছবি দিয়েই বলিউডে অভিনয় শুরু তাঁর। সমান্তরাল ছবির পাশাপাশি বাণিজ্যিক ছবিতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। তবে ‘ইকবাল’ সুপারহিট হওয়ার পর তেমন কোনও ভাল অফার তিনি পাচ্ছিলেন না।
২০০৭ সালে দুটো ব্লকবাস্টার ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ‘আপনা স্বপ্না মানি মানি’ এবং ‘ওম শান্তি ওম’।
‘ওম শান্তি ওম’ সুপারহিট হয়। অন্য দিকে ‘আপনা স্বপ্না মানি মানি’ও বক্স অফিসে সাফল্য পায়। তিনি যে বাণিজ্যিক ছবিতেও সমান পারদর্শী, দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শ্রেয়স।
এ ছাড়া 'ওয়েলকম টু সজ্জনপুর', 'গোলমাল রিটার্নস', 'হাউসফুল ২', 'হেল্প', 'ক্লিক', 'গোলমাল ৩', 'এন্টারটেনমেন্ট' সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সিরিয়াস অভিনয়ের পাশাপাশি নিজেকে কমেডিয়ান হিসেবেও প্রমাণ করেছেন।
ওয়েব সিরিজেও কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি প্রযোজনার কাজও শুরু করেছেন। তাঁর একটি প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে। ২০১৭ সালে ‘পোস্টার বয়েজ’ নামে একটি কমেডি ড্রামা ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি।
ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শ্রেয়সের জীবনে সাফল্য এসেছে অন্য পথে। খেলোয়াড়ের স্পিরিট নিয়েই ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন তিনি।
শ্রেয়সের স্ত্রী দীপ্তি একজন মনোবিদ। তাঁদের এক মেয়ে।