সেটে কোয়েল।—ছবি: দেবর্ষি সরকার
শুটিং চলছে রাস্তার মাঝে। দুপুর প্রায় দুটো। বানানো হয়েছে বাঁশ ও ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ছোটখাটো এক চায়ের দোকান। সেখানে কয়েকটি নোট হাতে পরিচালক শট বুঝিয়ে দিচ্ছেন নায়িকাকে। খানিকক্ষণ কথোপকথনের পরে নায়িকা হেসে গড়িয়ে পড়লেন। পরিচালক সরতেই নায়িকা সিরিয়াস। শুরু হল শট...
বিবেকানন্দ পার্কের কাছে রাস্তার উপরে শুটিং চলছিল ‘রক্ত রহস্য’ ছবির। এ ছবির নায়িকা কোয়েল মল্লিক। শট শেষ হতেই পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের সঙ্গে পরবর্তী শট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সেটা ছিল শেষ দিনের শুটিং এবং শুট শেষ করতে হবে দিনের আলো থাকতে থাকতেই। তাই পরিচালক, নায়িকা-সহ ইউনিটের প্রত্যেকেরই খুব তাড়া! ঝটপট তৈরি হল হনুমান মন্দির। হাত লাগালেন পরিচালকও। তাঁর অ্যাপ্রন সিঁদুরের দাগে ভর্তি। ছবিতে কোয়েলের চরিত্রটির নাম স্বর্ণজা। সে ভালবাসে মানুষকে সাহায্য করতে। তা করতে গিয়েই সম্মুখীন হয় বিপদের। প্রযোজকের স্ত্রী হলেও শুটিংয়ের সময়ে কোয়েল যেন স্বর্ণজাই। সেটে সদাতৎপর তো বটেই, শট তাড়াতাড়ি ওকে হওয়ার জন্য সহ-অভিনেতাদের ক্যামেরার অ্যাঙ্গলও বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। কোয়েল তৈরি শট দিতে। ছবির গল্প স্বর্ণজার পাঁচ বছরের জার্নি নিয়ে। সেখানে এই হনুমান মন্দির ও চায়ের দোকানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ ফুলস্লিভ টি-শার্ট, নো মেকআপ লুকে তাঁর মুখে ভোরের স্নিগ্ধতা। সে কথা বলতেই ঝকঝকে হেসে বললেন, ‘‘আজ খুব ইমোশনাল লাগছে। এত রাত অবধি টানা ক’দিন শুট করেছি, সকলে খুব ইনভল্ভড হয়ে পড়েছি... স্বর্ণজাকেও মিস করব। আমার কাছে ছবিটা স্পেশ্যাল কারণ, স্ট্রং ক্যারেকটার আমি অনেক করেছি, কিন্তু এ রকম ‘বেচারি’ ধরনের চরিত্র প্রথম বার।’’
মাঝখানে একটা সময়ে একটু ফাঁকা পাওয়া গেল সৌকর্যকে। জানালেন, এ ছবির শুটিং শেষ করেছেন মাত্র ২১ দিনে। সৌকর্যর কথায়, ‘‘ছবিতে প্রচুর সিন রয়েছে। প্রতিটি দৃশ্যের জন্য আলাদা লোকেশন, সেটআপ, ক্যামেরা করতে হয়েছে। তাই একটু হেকটিক ছিল। আমার আগের ছবি ‘রেনবো জেলি’ মাত্র ১৫ দিনে শেষ করেছিলাম। কিন্তু এ বার কলকাতায় ৪৬টা লোকেশনে আমরা শুটিং করেছি। হাসপাতালে, দোকানে, মলে প্রচুর রাস্তাঘাটে শুট হয়েছে। তবে সমস্যা হয়েছে ভিড় সামলাতে গিয়ে। ক্যানিংয়ে যখন শুট করছিলাম প্রায় বারো হাজার লোক জমা হয়েছিল! সত্তর জন পুলিশ এসেছিল। অনস্পট রাস্তার মাঝে শুট করে বেরিয়ে আসব, কাউকে বিরক্ত না করে, যাতে ওই ফিলটা থাকে। পপুলার স্টারের প্রতি দর্শকের এত আগ্রহ— সে ব্যাপারে আমার ধারণা ছিল না।’’ ‘রক্তরহস্য’-এর জাল তো গোটানো হল, কিন্তু তা কতটা জমল— সেটা বোঝা যাবে মুক্তির পরেই।