সুদর্শন, সঙ্গে অভিনয়ও ভাল করতেন। গত দশকের মাঝামাঝি এই দুইয়ের জোরে শাইনী আহুজা উঠে এসেছিলেন বলিউডের প্রথম সারিতে। কোনও গডফাদার ছাড়াই এক জন বহিরাগত হয়ে জয় করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীদের। কিন্তু কেরিয়ারের মধ্যগগনেই তলিয়ে গেলেন চোরাবালিতে।
শাইনীর বাবা সুরজপ্রকাশ ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল। মা, সীমা গৃহবধূ। বাবার কাজের সুবাদে শাইনী এবং তাঁর দিদির শৈশব কেটেছে দেশের বিভিন্ন শহরে। পড়াশোনাও বিভিন্ন সেনা স্কুলে।
স্কুলের দিনগুলি থেকেই খেলাধুলো এবং অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ। বেশ কিছু দিন ক্রিকেটের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজজীবনে পৌঁছে হৃদয় জুড়ে থাকল অভিনয়ই। যোগ দিতে থাকলেন বিভিন্ন ওয়ার্কশপে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করলেন শাইনী। কিন্তু পা রাখলেন না চাকরির জগতে। পরিবর্তে যোগ দিলেন ব্যারি জনের নাটকের দল ‘ত্যাগ’-এ। পরে তিনি প্রশিক্ষণ নেন দিল্লিতে ব্যারির অভিনয় শেখানোর প্রতিষ্ঠানেও।
কলেজ পেরিয়ে পেশাদার দুনিয়ায় পা রাখলেন শাইনী। প্রথমে এল বিজ্ঞাপনে কাজের সুযোগ। সদ্য তরুণ শাইনীর সপ্রতিভ চেহারা জনপ্রিয় হয়েছিল বিজ্ঞাপন দুনিয়ায়। অসংখ্য পণ্যের বিজ্ঞাপনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
নিজের ছবি ‘হাজারোঁ খাহিশেঁ অ্যায়সি’-র জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন পরিচালক সুধীর মিশ্র। বিজ্ঞাপনে শাইনীকে দেখে তাঁর পছন্দ হয়। ছবির বিক্রম মলহোত্র চরিত্রের জন্য দুশোর বেশি তরুণের সঙ্গে অডিশন দিয়ে মনোনীত হন শাইনী।
ছবিটি সমালোচকদের কলমে প্রশংসিত হয়। দেখানো হয় বিভিন্ন দেশের বহু চলচ্চিত্র উৎসবে। ভারতে ছবিটি বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তি পেয়েছিল ২০০৫-এ। বেশি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো না হলেও শাইনী-র অভিনয় দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছিল।
বিজ্ঞাপনের মতো ছবির ক্ষেত্রেও শাইনীর সুযোগ পেতে সমস্যা হয়নি। ‘গ্যাংস্টার’, ‘ওহ লমহে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘ভুল ভুলাইয়া’-র মতো ছবিতে শাইনীর অভিনয় দাগ কেটে গিয়েছে দর্শকদের মনে। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে বাকি ছবি হল ‘মাইগ্রেশন’, ‘ঢিমে ঢিমে’, ‘হাইজ্যাক’ এবং ‘গোস্ট’।
কিন্তু বেশি দিন বলিউডের আকাশে উজ্জ্বল তারা হয়ে থাকা হল না শাইনীর। ২০০৯-এ তাঁর বাড়ির পরিচারিকা শাইনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন।
কুড়ি বছর বয়সি ওই তরুণীর অভিযোগ ছিল, শাইনীর স্ত্রী যে সময় তাঁর বাবা মায়ের কাছে গিয়েছিলেন, সে সময় অভিনেতা তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন শাইনী।
তাঁর মতো প্রতিভাবান অভিনেতার গ্রেফতারিতে চাঞ্চল্য পড়ে যায় সব মহলে। জীবনের এই কঠিন সময়ে শাইনীর পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অনুপম। মূলত স্ত্রীর উদ্যোগে এবং তাঁর আইনজীবীর চেষ্টায় তিন মাস কারাবাসের পরে জামিন পান শাইনী।
দুই বছর পরে এই মামলায় বম্বে হাইকোর্ট শাইনীকে সাত বছরের কারাবাসের শাস্তি দেয়। কিন্তু এ সময় তাঁর পরিচারিকা জানান, যৌন সহবাসে তাঁরও সম্মতি ছিল। এ বারও জামিন পান অভিনেতা।
কিন্তু বলিউড তাঁকে আর ফিরিয়ে নেয়নি। কাজের সুযোগ অধরাই থেকে গিয়েছে শাইনীর কাছে। ২০১৫ সালে তাঁকে ‘ওয়েলকাম ব্যাক’ ছবিতে একটি ছোট ভূমিকায় তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন আনিস বাজমি।
তার পর শাইনীকে আর দেখা যায়নি ক্যামেরার সামনে। বেশ কিছু ছবিতে তাঁকে নেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি পরিবর্তে নেওয়া হয় অন্য কোনও অভিনেতাকে।
সোহা আলি খানের বিপরীতে ‘এক অ্যাকসিডেন্ট’ এবং প্রীতি জিন্টার সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘হর পল’— শাইনীর এই দু’টি ছবিও মুক্তি পায়নি কোনওদিন। এখন শাইনী কোথায় আছেন, কী করছেন, খবর রাখে না কেউ। মাঝে মাঝে তাঁর নাম বুদ্বুদের মতো ভেসে ওঠে। আবার হারিয়ে যায়।
বেশ কিছু বছর পরে শাইনীর নাম আবার আলোচনায় উঠে এসেছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃ্ত্যু এবং স্বজনপোষণ বিতর্কে। শাইনীর অনুরাগীদের অভিযোগ, ‘ষড়যন্ত্র’ করেই ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রতিভাবান, কিন্তু বহিরাগত এই অভিনেতাকে।