(বাঁ দিক থেকে) শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, আবীর চট্টোপাধ্য়ায়, ঋতাভরী চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
নেপথ্যে একের পর এক ভেসে উঠছে নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পুজোর ছবি ‘বহুরূপী’র পোস্টার। পোস্টার জুড়ে ছবির অভিনেতাদের মুখ। আবীর চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে শুরু। তার পর ঋতাভরী চক্রবর্তী, কৌশানী মুখোপাধ্যায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। মুখ ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিনেতা নিজের চরিত্র নিয়ে কিছু না কিছু বলছেন। যেমন আবীর জানিয়েছেন, এই প্রথম তিনি পর্দায় পুলিশ অফিসারের উর্দি পরলেন। কৌশানী জানালেন, এই প্রথম তিনি কোনও ছবিতে গ্রামের মেয়ে। শিবপ্রসাদের নায়িকা। ঋতাভরী মুখ খুলতেই ঝাঁকুনি। তাঁর দাবি, “উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার ‘ফাটাফাটি’র জন্য অনেকটা ওজন বাড়াতে হয়েছিল। তখন নিন্দকেরা কটাক্ষ করেছিল, নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নাকি আমাকে মোটা করে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা বুঝে নিলেন। ওঁরা আর আমায় কাজ দেবেন না।” অভিনেত্রী নীরবে অপেক্ষা করেছেন। যেন যাচাই করতে চেয়েছেন, নিন্দকদের কটাক্ষের সত্যতা। বেশ কিছু দিন পরে প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে ফের ডাক পেতেই চওড়া হাসি হেসেছেন। সোমবার উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে সে কথা প্রকাশ্যে এনে জানিয়েছেন, আগের ছবি ‘ফাটাফাটি’র ‘ফুল্লরা’ আগামী ছবিতে ‘পরি’। যাকে দেখতে দেখতে অনেক মেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন।
নব্বইয়ের দশকের শেষাশেষি শহরের বুকে ঘটেছিল এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। তাকে পটভূমিকায় রেখে প্রযোজনা সংস্থার আগামী ছবি। ছবিতে আবীর পুলিশ অফিসার ‘সুমন্ত ঘোষাল’। আড়িয়াদহকাণ্ডে অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংহের তদন্তকারী অফিসার শ্রীমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়ায় এই চরিত্র তৈরি। এ দিন আবীর বলেন, এক জন সৎ, পরিশ্রমী পুলিশ অফিসারকে পর্দায় জীবন্ত করতে যতটা খাটনির দরকার, ততটাই খাটার চেষ্টা করেছেন। বাকিটা দর্শক বলবেন। ছবিতে তিনি পুলিশ হলে অপরাধী কে? শিবপ্রসাদ সরাসরি মুখে না বললেও প্রকাশ্যে আসা পোস্টার এবং টিজ়ার অনুযায়ী, ‘বিক্রম প্রামাণিক’ ওরফে প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতাই খলনায়ক। এ দিনের পোস্টারে পুলিশ-অপরাধীর মুখোমুখি সংঘাত ফুটে উঠেছে। সেই সংঘাত ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তোলার অনুরোধ ছিল উপস্থিত আলোকচিত্রীদের। কথা রাখতে গিয়ে শিবপ্রসাদ-আবীর হেসে খুন! পাঞ্জা লড়ার জন্য তৈরি হাত দুটোও তাই বন্ধুত্বের বন্ধনী তৈরি করে ফেলেছে। কৌশানী ওরফে ‘ঝিমলি’ ছবিতে একাধারে লাস্যময়ী নায়িকা, অপরাধীর যোগ্য দোসরও! নিজের চরিত্র নিয়ে তাই স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত তিনি। জানিয়েছেন, শিপবপ্রসাদ যাতে ‘সিন খেয়ে না ফেলেন’ তার জন্য দিনরাত এক করে নিজেকে তৈরি করেছেন।
বন্ধুত্বের বাঁধনে আবীর, শিবপ্রসাদ। সংগৃহীত ছবি।
রইলেন বাকি ঋতাভরী। নিন্দকদের বক্তব্য ফাঁস করার পাশাপাশি নিজের চরিত্র নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। নাম পরি হলেও পর্দায় এক সদাব্যস্ত পুলিশ অফিসারের প্রতি মুহূর্তে একা হয়ে যাওয়া ঘরনি। যে জানে, তার স্বামী সমাজের। কোনও ভাবেই তার একার নয়। এই একাকীত্ব পরিকে আরও অসহায় করেছে। তাঁর কথায়, “আগের ছবিতে আমি আর আবীরদা যত রোম্যান্টিক, এই ছবিতে ঠিক তার উল্টো। চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে আমি ভিতরে ভিতরে রক্তাক্ত হয়েছি।” এ-ও বলেছেন, “‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ কিংবা ‘ফাটাফাটি’তে সমাজে ঘটে চলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। ‘পরি’র যাবতীয় লড়াই নিজের সঙ্গে। স্বামীহীন খাঁ-খাঁ বাড়িতে একা জীবনযাপন, উজাড় করে ভালবেসেও তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় প্রতি মুহূর্তে দীর্ণ সে। আমিও অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। ফলে চরিত্রটির সঙ্গে একাত্ম হতে গিয়ে, ‘পরি’র কথা ভাবতে ভাবতে কেঁদে ফেলেছি। চরিত্র থেকে বেরোতে তাই অনেক সময় লেগেছে।”