শৌনক সেন। ফাইল চিত্র ।
বাঙালি খ্যাতনামীদের তালিকায় তাঁর নাম সদ্যই ঢুকেছে। ‘ল’ওয়েল ডি‘অর’ পুরস্কার জয়ী সেই শৌনক সেন যখন আনন্দবাজার অনলাইনের ফোনের ও পারে, তখন তিনি গাড়িতে। ফ্রান্সের কানের মান্দেলিউ বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছুটছে সেই গাড়ি। উড়ান ধরার চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তাঁর মধ্যেই স্পষ্ট টের পাওয়া গেল, খুশি উপচে পড়ছে কণ্ঠস্বরে। তিনি খুশি। খুবই খুশি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাঙালির বিজয়কেতন তো সদ্য তাঁর হাত দিয়েই উড়ল। কথার ফাঁকে জানিয়ে দিলেন, বাংলা রয়েছে তাঁর ভাবনায়। বাংলা চলচ্চিত্রে রয়েছে তাঁর গভীর আগ্রহ। যদিও সেই আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে, অবশ্যই, তথ্যচিত্র।
শৌনক সেন। সদ্যই তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’একমাত্র ভারতীয় ছবি হিসেবে কান-এ ‘ল’ওয়েল ডি‘অর’ পুরস্কার জিতেছে। পাকাপাকি থাকেন দিল্লিতে। পড়াশোনাও করেছেন সেখানে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কলকাতাতে যাতায়াত রয়েছে নিয়মিত। শেষ বার মাস তিনেক আগে। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘আমার তথ্যচিত্র বানাতে খুব ভাল লাগে। বাংলায় যে সমস্ত তথ্যচিত্র হয়, তার মান অত্যন্ত ভাল। সুপ্রিয় সেন, সৌরভ সারঙ্গী— ওঁদের কাজ আমার তো খুবই ভাল লাগে।’’ তা হলে বাংলায় কাজ করবেন? শৌনক বলছেন, ‘‘কেন করব না! যদি ভাল আইডিয়া পাই, নিশ্চয়ই করব।’’ আর কাহিনিচিত্র ? কান-জয়ীর কথায়, ‘‘এখনই ফিচার নিয়ে কিছু ভাবছি না।’’
ছোটবেলায় কলকাতায় প্রতি গরমের ছুটিতে শৌনককে আসতেই হত। ঠাকুমা-দিদিমার বাড়ি ছিল যে! বলছিলেন, ‘‘সে সব ছিল মজার দিন। তবে সম্প্রতি শুধু কাজের জন্যই আসা হয়। তার মজা অন্য রকমের।’’ ‘অল দ্যাট ব্রিদস’-এর কাজ গত তিন বছর ধরে করেছেন শৌনক। ৯০ মিনিটের ছবির জন্য এই সময়কাল কি বেশি? শৌনক বলছেন, ‘‘মোটেও নয়। যত্ন নিয়ে কোনও কাজ করতে গেলে, সময়ের কথা ভাবলে চলে না। আমার ছবির পোস্ট প্রডাকশনের কাজ হয়েছে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে। আমার পছন্দের সম্পাদকের হাতে। শার্লট মাঞ্চ বেন্গস্টেন। উনি ডেনমার্কে থাকেন। আমি তাঁর কাছেই করাতে চেয়েছিলাম। আমার ভাবনা শুনে রাজি উনি হয়েছিলেন।’’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে বলেই মনে করেন শৌনক। তাঁর কথায়, ‘‘সময় বদলায়। তবে দর্শনটা এক থেকে যায়। সেই ভাবনা থেকেই কাজ করি। ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ একটা বড় প্ল্যাটফর্মে দেখানো হল। অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। অন্য দিকে, এর একটা সুবিধা আছে। অনেক মানুষ জানতে পারেন। দেখতে পারেন। গত ৩ ঘণ্টায় আমি অন্তত ২৫টা ফোন কল পেয়েছি বিভিন্ন জায়গা থেকে। এটা খুবই আনন্দ দেয়। আসলে দর্শক যদি কাজ দেখেন, তার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই।’’
শৌনকের এই তথ্যচিত্র ভারতেও দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দেশে তথ্যচিত্রের কাজ ভালই হয় বলে মনে করেন শৌনক। তবে পরিকাঠামো ভাল হলে আরও ভাল কাজ হবে বলে মনে করেন প্রবাসী এই কৃতি বাঙালি। তিনি সম্পর্কে বিশ্বাস করেন। পশুপাখির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তাঁর কাছে একটা দর্শন। সেই দর্শন নিয়েই কাজ করতে চান চলচ্চিত্র বিষয়ে পিএইচডি করা শৌনক।
কয়েক মাস আগে বাবা শুভঙ্কর সেনকে হারিয়েছেন শৌনক। সাফল্যের এই দিনে বাবাকে খুবই ‘মিস’ করছেন। শৌনক বলছেন, ‘‘কয়েক মাস আগে বাবাকে হারিয়েছি। এমন খুশির মুহূর্তে বাবা থাকলে আরও ভাল লাগত। এই তথ্যচিত্র বাবাকে ডেডিকেট করলাম।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।