আজ তিনি বলিউডের বেতাজ বাদশা। ৫৪টা বসন্ত পার করেও তাঁর ক্যারিশমায় মুগ্ধ আট থেকে আশি। তিনি শাহরুখ খান। তবে ব্যর্থতা, প্রত্যাখ্যান যে তাঁকেও পদে পদে সইতে হয়েছিল, সে গল্প অনেকেরই অজানা। বলিউডের নামকরা পরিচালক অডিশন নিয়েও নিজের ছবি থেকে অবলীলায় ছেঁটে ফেলে দিয়েছিলেন কিং খানকে। জেনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
নয়াদিল্লির এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় বেশ ভাল ছিল। পাল্লা দিয়ে চলছিল পড়াশোনা। ইচ্ছা ছিল খেলোয়াড় হবে সে। বাধ সাধে কাঁধেj চোট। এ দিকে অভিনয়ের প্রতিও আগ্রহ প্রবল। দিল্লির থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে নিয়মিত নাট্যচর্চা শুরু করেছেন তিনি। সময়টা ১৯৮৫।
সান্নিধ্যে এলেন বিখ্যাত অভিনেতা ব্যারি জোনসের। বাড়তে থাকল অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন মাসকমিউনিকেশন নিয়ে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ না করেই গেলেন ন্যাশানাল স্কুল অব ড্রামাতে।
ইতিমধ্যেই ‘ফৌজি’ ধারাবাহিকের অফার এসেছে তাঁর কাছে। মুখ দেখিয়েছেন আরও বেশ কিছু ধারাবাহিকে। কিন্তু মূল ধারার বলিউড ছবিতে কাজের অফার কিছুতেই পাচ্ছিলেন না শাহরুখ।
এক দিকে বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। মা অসুস্থ। অন্যদিকে অভিনয়ের খিদে।
ঠিক এমন সময়েই শাহরুখের পরিচয় হয় অভিনেতা বিবেক ভাসবানীর সঙ্গে। বিবেক সে সময় মুম্বইয়ের বেশ কিছু ছবিতে কাজ করতে শুরু করেছেন। কিন্তু শাহরুখের কাছে সে সময় থাকার মতো ছাদও নেই। তিনি থাকতে শুরু করেন বিবেকের সঙ্গে।
এ দিকে তখন অনিল কপূর বলিউডে রাজত্ব করছেন। বিবেকই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন অনিল কপূরের সঙ্গে। রাখঢাক না করেই শাহরুখ জানান, যে কোনও হিন্দি ছবিতে সাইড, ক্যারেক্টার, যে কোনও চরিত্র পেলেই তিনি করতে রাজি।
শাহরুখকে বেশ মনে ধরে অনিলের। তিনি আশ্বস্ত করেন কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই তিনি করবেন।
যেই কথা সেই কাজ। সালটা ১৯৯০। শুরু হয়েছে আইকনিক ছবি ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরির শুটিং। ছবিটি ১৯৯৪-এ মুক্তি পেলেও শুটিং চলেছিল দীর্ঘদিন ধরে। পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া। মুখ্য ভূমিকায় অনিল কপূর এবং মনীষা কৈরালা।
ওই ছবিতেই সাইড রোলের জন্য এক অভিনেতার প্রয়োজন ছিল। অনিল সুপারিশ করেন শাহরুখের নাম। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল পরিচালক বিধুবিনোদ চোপড়া তাঁর সিদ্ধান্তে সম্মতি জানাবেন।
ডাকা হয় শাহরুখকে। শুরু হয় অডিশন। সামনে বসে বিধুবিনোদ চোপড়া। নিজের সবটা দিয়ে অডিশন দেন শাহরুখ।
কিন্তু হায়, বিধুর মনে ধরে না শাহরুখের অভিনয়। বাদ পড়েন তিনি।
বিধুর বক্তব্য ছিল, ওই চরিত্রের জন্য তিনি একজন মধ্যবয়স্ক, ম্যাচিউরড অভিনেতা খুঁজছেন। শাহরুখের পক্ষে সেই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভবই নয় বলে মনে করেছিলেন বিধু। ওই চরিত্রে শাহরুখের বদলে নেওয়া হয় রঘুবীর যাদবকে।
পিছিয়ে যায় শাহরুখের সিনেমার অভিনয় হওয়ার স্বপ্ন। তবে ওই ছবিতে নির্বাচিত না হয়ে এক দিকে শাপে বরই হয়েছিল শাহরুখের। ভাবছেন তো কী করে?
ক্যারক্টার রোল দিয়ে নিজের ফিল্মি কেরিয়ার শুরু করলে শাহরুখের কোনওদিনই হয়তো হিরো হওয়া হত না। নাম তিনি হয়তো করতেন ঠিকই, কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেত।
‘হার কর জিতনে ওয়ালোকো বাজিগর কহতে হ্যায়’- ‘বাজিগর’ ছবিতে শাহরুখই বলেছিলেন সে কথা। তাঁর জীবনটাও অনেকটা সে রকমই। হেরেছেন, ভেঙেছে স্বপ্ন। কিন্তু পালিয়ে যাননি। বলিপাড়ার মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। আজ তিনি সুপারস্টার। ফ্যানেদের কাছে ‘দ্য কিং খান’।