বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঝলমলে তপসিয়ার ‘গ্রিন অর্কিড’। নীল-তৃণার বিয়ে যে! অতিথি থেকে খানাপিনা, কোনও খামতি রাখেননি টেলির ‘হ্যাপেনিং জুটি’।
দম্পতি হিসেবে নতুন পথ চলা শুরু এ দিন থেকে। কিন্তু নির্দিষ্ট এই দিনটিতে পৌঁছানোর আগে থেকেই বিয়ে উদ্যাপন শুরু হয়ে গিয়েছিল। মাস কয়েক আগে থেকেই জমজমাটি ‘ব্যাচেলরেট’, ‘প্রি ওয়েডিং ফোটোশ্যুট’, ‘আইবুড়ো ভাত’, ‘এনগেজমেন্ট’— নীল ভট্টাচার্য ও তৃণা সাহার সমাজমাধ্যমের দিকে মুখিয়ে ছিলেন নেটাগরিকরা। তাঁদের জীবনের খুঁটিনাটির ধরা পড়েছে সেখানেই। যার একটি ধাপ পেরনোর পালা ছিল এ দিন।
লাল-সাদা কাপড়ে সেজে উঠেছে সদর দরজা। বরের অপেক্ষায় বরণডালা নিয়ে তৈরি কনেপক্ষ। চলল বরণের পর্ব। মস্ত এক হুডখোলা গাড়িতে করে বরকর্তার সঙ্গে বিয়ে করতে এলেন নীল ভট্টাচার্য। পর্দা ও বাস্তব—দুই জীবনের পরিবারই নীলের পাশে রয়েছে তাঁকে সঙ্গ দিয়ে। অভিনেতা অশোক সেনগুপ্ত (‘কৃষ্ণকলি’ সিরিয়ালে নীলের দাদা) নীলের অন্যতম ভরসা।
কনেপক্ষের আদরে আপ্লুত নীল। বিয়ে করার আনন্দে নাচতে নাচতে অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকলেন অভিনেতা। শুধু কি তাই! গাড়ি থেকে নেমে নৌকায় ভেসে বিয়ের মঞ্চে পৌঁছলেন নীল। মঞ্চে ওঠার আগে ফাটানো হল আতসবাজিও।
শুরু হল রেজিস্ট্রি পর্ব। নীল ও তৃণার মাঝে একটি কালো চাদর টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে শুভদৃষ্টির আগে একে অপরের সঙ্গে চোখাচুখি না করেন বর-কনে। কিন্তু তাতে বিরহের আগুন ছিল দু’জনের মধ্যেই। নাটকীয় ভঙ্গিতে নীল চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘না! না!’ এতেও শেষ নয়। এ-পার থেকে ও-পারে ‘আই লাভ ইউ’ বলে প্রেম জাহির করলেন নীল।
সাবেক বাঙালি কনের সাজে সেজেছিলেন তৃণা। লাল বেনারসি, কপালে চন্দন, সোনার গয়নায় অপরূপ কনে। আর নীলের পরনে ছিল বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি। আর মুখে ছিল এক ঘর আনন্দ আর উত্তেজনা।
আশীর্বাদ পর্ব শেষ হতেই আরম্ভ হল বিয়ের মূল রীতিগুলি। পান পাতায় মুখ ঢেকে পিঁড়িতে বসে কনে এলেন মণ্ডপে। আর তার পর থেকে বরের উত্তেজনা সপ্তম সুরে। নীলের চারপাশে ৭ বার ঘোরানো হল তৃণাকে। আবহে চলছে উলু ধ্বনি ও হই-হুল্লোড়। কিন্তু সকলের গলা ছাপিয়ে নীলের চিৎকার ভেসে এল। খোদ বর উলু ধ্বনি দিতে শুরু করলেন। পাক গোনাতেও অংশগ্রহণ নীলের।
পান পাতা সরিয়ে বর-কনের শুভদৃষ্টি সম্পন্ন হল। তার পর শুরু হল প্রতিযোগিতা। কে কত উঁচুতে উঠতে পারে! কিন্তু কনেপক্ষের দাদারা এখানে হার মানত বাধ্য হলেন। বরপক্ষের সাহায্যে নীল প্রায় মণ্ডপের মাথা ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু পিঁড়িতে বসে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তৃণা। ‘বর বড় না বউ বড়’ খেলতে গিয়ে কনে পিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল প্রায়।
তার মধ্যেই মালা বদল পর্ব শেষ হল ধুমধামে। ফের মন্ত্র পড়লেন পুরোহিত। বর-কনের হাতে হাত, চলতে থাকল বিয়ে রীতি। পরিবারের উপস্থিতিতে ‘বিয়ে সম্পন্ন হইল’ উচ্চারণ পুরোহিতের।
এর পর নব দম্পতির একসঙ্গে ছবি তোলার পালা। স্ত্রীর গাল টিপে আদর করে দিলেন নীল। গলা জড়িয়ে ছবি তুললেন তাঁরা।
বিয়ে করে আনন্দে আত্মহারা ‘তৃনীল’। সারা কলকাতা সাক্ষী থাকল এই রাজকীয় বিয়ের। রাজনীতি থেকে চলচ্চিত্র জগত— সকলের উপস্থিতিতে এক হল চার হাত। শুরু হল বর-কনের নতুন পথ চলা।