ছবি: সংগৃহীত
প্রথম সিজ়নের শেষটা সুখকর ছিল না। সেই জায়গা থেকেই শুরু ‘ফোর মোর শটস প্লিজ়!’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন। দলের সবচেয়ে আদুরে সিদ্ধির (মানবী) খাতিরে ফের একজোট হয় উমঙ্গ (বাণী), অঞ্জনা (কীর্তি), দামিনী (সায়নী)। ইস্তানবুলের ঝকঝকে লোকেশনে নতুন করে বাঁচার মানে খোঁজে চার বন্ধু, নিজেদের মধ্যকার মন কষাকষি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে সমস্যা ছাড়া এই চারমূর্তির গল্প চালিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। তাই মুম্বই ফিরে এসেও তারা একের পর এক ভুল করে যথারীতি। আরও একবার নতুন করে সমস্যায় জড়িয়ে ফেলে নিজেদের। কর্মব্যস্ত, হাই-প্রোফাইল যাপনের বেসিক সমস্যাগুলোর দিকে আঙুল তুললেও তা থেকে উত্তরণের কোনও দিশা দেখায় না চার নারীর এই কাহিনি। তাই শেষ পর্যন্ত, যথেষ্ট মেলোড্রামা আর মোচড় থাকা সত্ত্বেও বাস্তববিমুখই থাকে ‘ফোর মোর শটস প্লিজ়’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন।
অনু মেনন নন, ‘ফোর মোর শটস...’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নূপুর আস্থানা। চার বন্ধুর এ বারের কাহিনি লিখতে কলম ধরেছিলেন দেবিকা ভগত, ঈশিতা মৈত্র, রঙ্গিতা প্রীতিশ নন্দী। সিরিজ় তৈরির নেপথ্য-দলের বেশিরভাগই নারী, তবু একপেশে ফেমিনিজ়মের ফাঁপা ফিকশন হয়ে রয়ে গেল কাহিনিটি। নিজের ভালবাসা আর গাইনিকলজিস্টের প্রতি আকর্ষণের মধ্যে গুলিয়ে ফেলে দামিনী, তার উপরে এ বারে রাইটার্স ব্লকের শিকার সে। সিঙ্গল মাদার অঞ্জনা ‘পারফেক্ট’ বয়ফ্রেন্ডের যত্নের আতিশয্য আর মেয়েকে কাছছাড়া করার চিন্তার মধ্যেই ফের নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সিদ্ধি স্ট্যান্ডআপ কমেডিতে খুঁজে নিতে চায় আত্মবিশ্বাসের শক্ত জমি। ছোট শহর থেকে আসা উমঙ্গকে নিজের সমকামী সম্পর্কের জন্য প্রথমে যতখানি কম্প্রোমাইজ় করতে হয়, সেটাই তাঁকে পরে শিখিয়ে দেয় নিজের পাশে দাঁড়াতে। তবে আগের সিজ়নের মতো এ বার সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পুরুষের দ্বারস্থ হতে হয়নি এই চার বন্ধুকে। হতাশায় ডুবে যেতে যেতে শয্যাসঙ্গী খোঁজেনি তারা। বরং কাঁধ এগিয়ে দিয়েছে পাশের বন্ধুকে। একে অন্যের সহায় হয়েছে বিপদে। কোনও কোনও সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে নিজেরও। তবে জীবনযুদ্ধে যে জেনুইন সমস্যার মধ্যে সাধারণত পড়তে হয়, এই সিরিজ়ের চরিত্রদের প্রতিকূলতা সে সবের চেয়ে যোজনখানেক দূরে। অনেক সময় মনে হয়, জীবনের বেশির ভাগ দিক থেকেই যে তারা প্রিভিলেজড, সেটাই যেন খুঁজে নিতে ভুলে গিয়েছে এই চারজন। তাই তাদের সমস্যাগুলিও ডেকে আনা বা আরোপিত বলে মনে হতে থাকে।গার্ল পাওয়ার, ভিক্টিম ব্লেমিং, মেল ব্যাশিং, সিস্টারহুড— নারীবাদের এই ক্লিশে শব্দবন্ধগুলি বাস্তবিকই যেন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে চার দামাল শহুরে মেয়ের গল্প বলতে গিয়ে। যা আদতে তাদের সমস্যার শিকড়গুলি চিহ্নিত করে না। পোশাকের চাকচিক্য, শট গ্লাসের সংখ্যা এই সিজ়নে আরও বেশি, তবে উদ্দেশ্যহীন ভাবে। তার উপরে এপিসোডের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা মুশকিলের প্যাঁচ আরও যেন ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। সায়নী ভাল অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও বিপন্নতার কিছু মুহূর্তে যেন অতি-অভিনয় করে ফেলেছেন। কীর্তি বা মানবীর ক্ষেত্রেও সহায় হয়নি চিত্রনাট্য। বরং বাস্তবের বেশ কাছাকাছি বাণীর চরিত্রটি। উমঙ্গের ছোট ছোট জীবন্ত কষ্টগুলো ছুঁয়ে যায় রূঢ় বাস্তবকে। তেমন করেই যদি বাস্তবের আরও কাছাকাছি নেমে আসত অঞ্জনা, দামিনী, সিদ্ধিরা— লকডাউন টাইমপাসের রেকমেন্ডশনে হয়তো প্রথম দিকেই থাকত এই সিরিজ়।
ফোর মোর শটস প্লিজ়! (ওয়েব সিরিজ়: সিজ়ন টু) পরিচালনা: নূপুর আস্থানা অভিনয়: কীর্তি কুলহারি, সায়নী গুপ্ত, বাণী জে, মানবী গাগরু ৫/১০