সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
এ যেন 'তুই জল ঘোলা করিসনি তোর বাবা করেছে’ দশা! শাসকদলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী দিন দুই আগে আরজি কর-কাণ্ডের কারণে অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি মতামত জানিয়েছিলেন। সেই মতামত সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত। খবর, মত জানানোর পর যথারীতি তা নিয়ে চর্চা শুরু এবং সেই চর্চা একটা সময়ের পর সামাজিক গণ্ডি ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণে পৌঁছয়। আক্রমণ শাসকদলের মুখপাত্রকে নয়, তাঁর লেখিকা স্ত্রী সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একদল নেটাগরিকের দাবি, স্বামীর রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেই তিনি খ্যাতনামী।
সম্রাজ্ঞী একাধারে কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার। সম্প্রতি, সান বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে’র জন্য গানও লিখেছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই এই অন্যায় কটাক্ষ ভাল লাগেনি তাঁর। সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “অরূপকে ট্রোল করতে গিয়ে দেখলাম, কেউ কেউ বলছেন যে তৃণমূলে আসার পর নাকি আমি সেলিব্রিটি কবি হয়েছি, আরও কী কী সব। একটা তথ্য দিয়ে রাখি। তৃণমূল সরকার এসেছে ২০১১ সালে। ২০১৮ সালে যখন সম্মানিত হই তখন কেন্দ্রে বিজেপি এবং তখনও রাজ্যের কোনও পুরস্কার আমি পাইনি। রজ্য সরকারের পুরস্কার পাওয়ার সময়কাল ২০২৩। এই ১২ বছরে বরং দু-একবার সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকতে ভুলে গিয়েছে এমনও হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সম্রাজ্ঞী। তাঁর কথায়, “শুধু স্বামী নন, আমার বাবাও রাজনীতি করতেন। তখনও এই ধরনের কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। ফলে, বিষয়টি গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। জানি, রাজনৈতিক তরজায় বিপক্ষে থাকা মানুষেরা ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়েন।” একাধিক জনপ্রিয় ছবি ও সিরিজ়ের কাহিনী-চিত্রনাট্যকারের দাবি, তাঁর আপত্তি অন্যত্র। তাঁর আত্মপরিচয় নিয়ে কেউ সন্দেহপ্রকাশ করলে সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না। সম্রাজ্ঞীর আফসোস, “আমরা নারী আন্দোলন নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছি। অথচ নারীর নিজস্ব পরিচয়টাই আমরা মানতে পারি না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “কিছু নারী হয়তো পিতৃ বা স্বামীর গরবে গরবিণী! তাঁদের পরিচয়ে বাঁচেন। তাঁদের সম্মান জানিয়েই বলছি, আমি নিজের পরিচয়ে বাঁচি।”
এখানেই শেষ নয়। তাঁর আরও বার্তা, “সমাজকে নারীর নিজস্ব পরিচয়কে সম্মান জানাতে হবে। একই সঙ্গে নারীকে বুঝতে হবে, তার ভাল বা মন্দের দায় শুধুই তার। এই নিয়ম আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।” এর পাশাপাশি সম্রাজ্ঞী এ কথাও জানাতে ভোলেননি, তাঁর স্বামী অরূপ তাঁকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকা সত্ত্বেও। সেই জায়গা থেকেই, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদী মিছিলে হেঁটে ফেরার পর কোনও দিন তাঁকে ‘কেন মিছিলে হেঁটেছিস’— এই প্রশ্ন করেননি।