সরোজ খান নিজেই বলতেন, তিনি সারা জীবনই দিয়ে দিয়েছেন বলিউডকে। ইন্ডাস্ট্রির সবার সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ভাল। কিন্তু অন্য় ছবিও আছে। বলিউডের এক তারকার সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক বহু বছর ধরে খারাপ ছিল।
অথচ সেই খান-তারকার কেরিয়ার শুরু হয়েছিল সরোজ খানের হাত ধরেই। তিনি সলমন খান। ১৯৯৫-এ ‘অন্দাজ অপনা অপনা’ ছবির পরে তিনি কাজ করেননি সরোজের সঙ্গে।
সলমনের প্রথম ছবি ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’-তে কোরিয়োগ্রাফার ছিলেন সরোজ। তখন সলমন তারকা হননি। কিন্তু সরোজ সেই ‘তেজাব’ থেকেই ইন্ডাস্ট্রির সেরা কোরিয়োগ্রাফার। ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ থেকেই সলমন-সরোজ পরিচয়।
কিন্তু সেই আলাপ তিক্ততায় বদলে গেল ‘অন্দাজ অপনা অপনা’ ছবির সেটে। এমনিতেই এই ছবির শুটিংয়ে আমির-সলমনের ইগো-সঙ্ঘাত ছিল চরমে। কারণ দু’জনেরই একে অন্যের চরিত্রটা বেশি পছন্দ করতেন।
সে সময় সলমনের কেরিয়ারও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। ‘সাজন’-এর পরে পর পর তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি ফ্লপ হয়েছিল। ফলে সলমনের অভিযোগ ছিল ‘অন্দাজ অপনা অপনা’ ছবিতে তাঁর তুলনায় তারকার মর্যাদা পেয়েছেন আমির-ই।
এই ছবির সেটে এক বার সরোজকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন সলমন। তিনি নাকি হুমকির স্বরে বলেছিলেন, যখন তারকা হবেন তখন সরোজকে দেখে নেবেন!
সলমনের অভিযোগ ছিল, নাচের যা কিছু ভাল ভাল স্টেপ ছিল, সব আমিরকে দিতেন সরোজ খান। তাঁকে শুধু ঢোল ধরে থাকতে হত! সলমনের অভিযোগ ছিল, আমিরের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন সরোজ।
এই বৈরিতা বজায় ছিল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। সলমন তারকা হওয়ার পরেও তিক্ততা বা রাগ সবই উগরে দিয়েছিলেন। তিনি কোনও দিন সরোজের সঙ্গে কাজ করেননি।
২০১৬-এ আবার এক বার সলমন-সরোজ বিরোধ বাঁধে। সরোজের পরিচিত এক বিশেষ ভাবে সক্ষম তরুণী চেয়েছিলেন, এক বার ফোনে শুধু সলমন তাঁকে ‘হ্যালো’ বলুন। সেই ইচ্ছে রাখতে এক চেনা বন্ধুর মাধ্যমে সরোজ খান যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন সলমনের সঙ্গে।
সরোজে অভিযোগ, তিনি ফোন করেছেন শুনে সলমন ওই পরিচিতর হাত থেকে ফোন ধরেনইনি। তিনি নাকি ইশারায় জানিয়ে দেন ফোন ধরবেন না। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সরোজ সংবাদমাধ্যমে সলমনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
এর মাশুল দিতে হয়েছিল সরোজকে। অভিযোগ, সমনের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে বলার ফলে কাজ হারাতে থাকেন সরোজ। বেশ কয়েক বছর তাঁর হাতে কোনও কাজ ছিল না। অনেক দিন পরে তিনি কোরিয়োগ্রাফির সুযোগ পান ‘ঠগস অব হিন্দুস্তান’ ছবিতে।
কিন্তু ক্যাটরিনা কইফের কথায় সরোজকে বাদ দিয়ে প্রভুদেবাকে সুযোগ দেওয়া হয়। সরোজ আক্ষেপ করেছিলেন, এই প্রজন্মের নায়িকাদের কাছে নাচের গুরুত্ব কমে গিয়েছে বলে। সে সময় সরোজের কাছে কোনও কাজ ছিল না। সুযোগ হারিয়ে মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন তিনি।
বিপদে তাঁর পাশে এগিয়ে এসেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। তাঁর কথাতেই নাকি সরোজকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ‘কলঙ্ক’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফি করার। যদিও, মাধুরী বলেছিলেন, সরোজ খান নিজের প্রতিভার জোরে সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর মতো প্রতিভা বলিউডের কারও নেই বলে মনে করেন মাধুরী।
শেষ অবধি সলমনের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন সরোজ। ২০১৯-এ বাধ্য হয়ে সলমনের কাছে যান সরোজ। বলেন, তাঁর কাজের খুবই দরকার। সলমন তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তিনি দেখবেন যাতে সরোজ কোরিয়োগ্রাফির সুযোগ পান।
কিন্তু তাঁকে সাহায্য করার কোনও সুযোগ সলমনকে দিলেন না সরোজ খান। কাজের সুযোগ আসার আগেই তিনি পাড়ি দিলেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ২৫ বছর ধরে তাঁর আর সলমন খানের সম্পর্ক অমসৃণ হয়েই থেকে গেল।