তাঁর হাসি ভুবনভোলানো। এ কথা বলেন প্রত্যেকেই। তিনি মাধুরী দীক্ষিত। তাঁর প্রেমে পড়ে নাকি নিজের অসুস্থ স্ত্রীকেও ভুলে গিয়েছিলেন বলিউডের এক নায়ক। বুঝতে পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে?
বলিউডের একাধিক জুটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে অন্যরকম উন্মাদনা কাজ করে। সেরকমই একটি জুটি হল মাধুরী দীক্ষিত এবং সঞ্জয় দত্ত। 'সজন', 'থানেদার', 'খলনায়ক'-সহ একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন দুজনে।
ছবিতে কাজ করতে গিয়েই নাকি দুজনে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। এই ঘনিষ্ঠতা এতটাই ছিল যে সবাই ভেবেছিলেন দুজনে নাকি সাত পাকে বাঁধা পড়বেন।
১৯৯১ সালে 'সজন' ছবি মুক্তির আগে ও পরে দুজনের প্রেমের সম্প্রক নিয়ে লেখালেখি হয়েছে একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং বলিউডের একাধিক পত্রপত্রিকায়।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে টানা কাজ করেছেন। সঞ্জয় তখন বিবাহিত। স্ত্রী রিচা শর্মা।
মাধুরী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সঞ্জুর মতো ভাল মানুষ হতে পারে না। ওঁর সঙ্গে কথা বললে সবসময় নাকি হাসি পায় মাধুরীর। সঞ্জয়ের মন অত্যন্ত উদার। রসিক মানুষ। সঞ্জয়ের মধ্যে কোনও জটিলতা নেই।
এই সাক্ষাৎকারের পরই রটে গেল সঞ্জয় নাকি স্ত্রী রিচা শর্মার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে মাধুরীকে বিয়ে করতে চলেছেন। সেই সময় রিচা ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
রিচার চিকিৎসা চলছিল। মস্তিষ্কে টিউমারের অস্ত্রোপচারের মধ্যেই মাধুরী সঞ্জয়ের ঘনিষ্ঠতা এবং বিয়ের খবর পেয়েই নাকি রিচা ফিরে আসেন মুম্বইয়ে।
যদিও রিচা বলেছিলেন, অনেক দিন তাঁদের দেখা হয়নি। সঞ্জয় মোটেও তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে চান না। তিনিও বিচ্ছেদ চান না। একসঙ্গে কিছুদিন থাকতে ফিরে এসেছেন। সেটা ১৯৯২ সাল।
কিন্তু ১৫ দিনের মাথাতেই রিচা আবারও নিউ ইয়র্ক ফিরে গিয়েছিলেন। বলিউডে তাঁর স্বামী সঞ্জয় ও মাধুরীকে নিয়ে গুঞ্জন যে সত্যি এমনই নাকি মনে হয়েছিল রিচার। ‘’যাই হয়ে থাক, আমি পাশে থাকবই’’ সাক্ষাৎকারে এমনই বলেছিলেন রিচা।
রিচার বোন এনা শর্মা একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করে বলেন, মাধুরীই দায়ী রিচা-সঞ্জয়ের সম্পর্ক ভাঙার জন্য। বলেছিলেন, যে নিজের অসুস্থ স্ত্রীকে ছেড়ে যেতে পারে, মাধুরী কীভাবে তেমন কাউকে পছন্দ করলেন। মাধুরী এতটা অমানবিক কী করে হতে পারলেন। যে পুরুষকে চাইবেন, তাঁকেই তো মাধুরী পেতে পারতেন!
আইনি বিচ্ছেদ না হলেও এরপর রিচা আলাদাই থাকছিলেন সঞ্জয়ের থেকে।তবে অনেকেই বলেছিলেন। এত দিন 'লং ডিসট্যান্স' বলেই সম্পর্কে অবনতি ঘটে। মাধুরী মোটেও দায়ী নয়। রিচার অসুস্থতার কারণেই নাকি সম্পর্কে বাধা পড়েছিল।
এরপর ১৯৯৩ সালে অস্ত্র আইনে সংশোধনাগারে যেতে হয় সঞ্জু বাবাকে। মাধুরী একবারও কিন্তু সঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করেননি তখন। বরং দূরেই থেকেছিলেন।
সামান্য সময়ের জন্য জামিন পেয়ে সঞ্জয় নাকি একটি সাক্ষাৎকারে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, মাধুরী তাঁর সহকর্মী। তিনি নাকি ক্ষমাও চেয়েছেন তাঁর সঙ্গে মাধুরীকে জড়িয়ে নানা রকম রটনার ফলে। তবে গুঞ্জন ছিল অন্যরকম, সঞ্জয় নাকি ভেবেছিলেন মাধুরী তাঁর পাশে থাকবেন।
সব সহকর্মীই তাঁর বন্ধু। তাই ঘনিষ্ঠতা দেখে যে কাউকেই সঞ্জুর প্রেমিকা বলে দাগিয়ে দেওয়া সহজ, তিনি দুঃখপ্রকাশ করে এমনই বলেছিলেন।যদিও মাধুরী এ নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে সঞ্জয় দত্তের বায়োপিকের সময় নাকি মাধুরী অস্বস্তিতে পড়েন।
মাধুরী কিংবা সঞ্জয় দত্ত দু’জনের কেউই কখনও এই সম্পর্কের সত্যতা স্বীকার করেননি। রিচা মারা যান ১৯৯৬ সালে। সঞ্জয় এবং রিচার একটি মেয়েও রয়েছে। নাম ত্রিশলা।
পরবর্তীতে রিয়া পিল্লাই এবং তারও পরে ২০০৮ সালে মান্যতা দত্তের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন সঞ্জয়। মান্যতার সঙ্গে সুখেই রয়েছেন সঞ্জু। মাধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে চিকিৎসক শ্রীরাম নেনের। তিনিও দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই সময় কাটাচ্ছেন।
২০১৯ সালে 'কলঙ্ক' ছবিতে তাঁদের দুজনকেই কাজ করতে দেখা গিয়েছে। সবরকম বিতর্ককে দূরে সরিয়ে দুই পেশাদার প্রমাণ দিয়েছেন পেশাদারিত্বের।