বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী কপূর পরিবারে জন্ম। তার পরেও তাঁকে দেখা যায়নি ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা হওয়ার দৌড়ে। স্বজনপোষণ নিয়ে চাপানউতোরে মধ্যে উজ্জ্বল শশী ও জেনিফার কপূরের একমাত্র মেয়ে সঞ্জনা।
সঞ্জনার জন্ম ১৯৬৭ সালের ২৭ নভেম্বর। এক দিকে কপূর পরিবার, অন্য দিকে কেন্ডেল পরিবার। দুই পরিবারের ধারায় আশৈশব সিনেমা ও থিয়েটারের আবহে কেটেছিল সঞ্জনার।
সঞ্জনার দাদু জিয়োফ্রে কেন্ডেল এবং দিদিমা লরা কেন্ডেল থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। থিয়েটারের দল নিয়ে এসেছিলেন ভারতে। সেই শো সূত্রেই আলাপ হয়েছিল শশী-জেনিফারের। পরবর্তীতেও তাঁদের পরিবারে বজায় ছিল থিয়েটারের আবহ।
বম্বে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী সঞ্জনার অভিনয় শুরু ১৯৮১ সালে। তাঁর বাবা শশী কপূরের প্রযোজনা এবং অপর্ণা সেনের পরিচালনায় ’৩৬, চৌরঙ্গি লেন’ ছবিতে।
ছবিতে প্রধান চরিত্রে ছিলেন জেনিফার কপূর। তাঁর শৈশবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মেয়ে সঞ্জনা। শশীর প্রযোজনায় ১৯৮৪ সালে ‘উৎসব’-এও অভিনয় করেছিলেন সঞ্জনা।
বলিউডের ছবিতে প্রথম মুখ্য ভূমিকায় সঞ্জনা অভিনয় করেন ১৯৮৯-এ, ‘হিরো হীরালাল’-এ। বক্স অফিসে সফল হয়েছিল ছবিটি।
মীরা নায়ারের ‘সালাম বম্বে’ ছবিতেও সঞ্জনার অভিনয় প্রশংসিত হয়। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে অভিনয় ছেড়ে দেন সঞ্জনা। তখন তাঁর জীবনে একমাত্র ধ্যানজ্ঞান থিয়েটার। থিয়েটারের দুনিয়ায় অবদানের জন্য ফরাসি সম্মান ‘শেভালিয়ের দঁ লোর্দ্রর দে আর্ত এ দে লের্ত্র’ বা ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ উপাধিতে।
ঠাকুরদা পৃথ্বীরাজ কপূরের নামে তৈরি পৃথ্বী থিয়েটারের দায়িত্বে সঞ্জনা ছিলেন ১৯৯৩ থেকে ২০১২ অবধি। তার পর তিনি এই সংস্থা ছেড়ে ‘জুনুন থিয়েটার’ শুরু করেন। বাচ্চাদের মধ্যে থিয়েটারের প্রতি ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সঞ্জনার ভূমিকা ছিল। তার মাঝে কিছু কাজ করেছিলেন টেলিভিশনেও।
সঞ্জনার প্রথম স্বামী ছিলেন আদিত্য ভট্টাচার্য। ‘রাখ’ ও ‘মাণ্ডি’ ছবির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার আদিত্য হলেন প্রয়াত পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যর ছেলে।
আদিত্যর সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে সঞ্জনা বিয়ে করেন ব্যাঘ্র বিশারদ বল্মীক থাপারকে। তাঁদের একমাত্র পুত্রের নাম হামীর থাপার।
ছবি থেকে দূরে সঞ্জনা এখন ব্যস্ত তাঁর নাটকের দল ‘জুনুন’ নিয়ে। নামকরণের সঙ্গে শশী কপূরের ‘জুনুন’ ছবির কোনও সম্পর্ক নেই বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সঞ্জনা।
কাজের জন্য তাঁকে দেশের বিভিন্ন অংশে ঘুরতে হয়। ফলে তাঁর বহু দিনের একটা স্বপ্ন সফল হয়েছে, জানান সঞ্জনা। কারণ তাঁর বহু দিনের স্বপ্ন ছিল জিপসি হয়ে ক্যারাভান চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো।
দুই দশক ধরে ‘পৃথ্বী থিয়েটার’-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে তিনি নাটকের খুঁটিনাটি শিখেছেন। এখন দিল্লিতে থাকলেও মুম্বইয়ের জীবন এখনও তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে আছে, জানান সঞ্জনা।
সঞ্জনার আগে কপূর পরিবারে থিয়েটার থেকে সিনেমায় পা রাখার নজির ছিল। কিন্তু সঞ্জনার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিপরীত ছবি। তিনি থিয়েটারের জন্য পিছনে ফেলে এসেছেন সিনেমার কেরিয়ার।
কপূর ও কেন্ডেল পরিবারই তাঁর শিক্ষার ভিত্তি। স্বীকার করেন সঞ্জনা। তবে দুই পরিবারের ছায়ায় না থেকে নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন সঞ্জনা। সেই পথেই পা রেখেছেন তিনি। লাইট সাউন্ড ক্যামেরার হাতছানি পেরিয়ে হাতে তুলে নিয়েছেন পৃথ্বী থিয়েটার এবং জিয়োফ্রে কেন্ডেলের নাটকের দল ‘শেক্সপিয়ারানার’- রেখে যাওয়া ব্যাটন।