সলমন
তাঁর ছবিরই একটি জনপ্রিয় সংলাপ, ‘একবার ম্যায়নে জো কমিটমেন্ট কর দী, উসকে বাদ তো ম্যায় খুদকী ভি নেহি শুনতা।’ সলমন খান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘রাধে’ সিনেমা হলেই রিলিজ় করবেন। অতএব নিজের কমিটমেন্টের ভার তাঁকেই বহন করতে হচ্ছে। কোভিডের এই দাপটের মধ্যেও তিনি ছবিটি রিলিজ় করছেন ১৩ মে। কিন্তু সলমন প্রতিশ্রুতি রাখার যে পন্থা নিয়েছেন, তা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রশ্ন উঠেছে। সিনেমা হলের পাশাপাশি ‘রাধে’ ওটিটি-তে পে পার ভিউ মোডে দেখা যাবে। অর্থাৎ ওই ওটিটি-র সাবস্ক্রিপশন থাকলেও, ‘রাধে’ দেখার জন্য আলাদা টাকা দিতে হবে। বর্তমানে দেশের খুব অল্পসংখ্যক সিনেমা হল খোলা। সে অর্থে ছবিটি ওটিটি রিলিজ় হিসেবেই দেখছেন ইন্ডাস্ট্রির একাংশ। সলমনের এই ‘হাইব্রিড’ বিপণন পন্থা নিয়ে আপত্তি সিনেমা হল মালিক, ডিস্ট্রিবিউটরদের। অনেকের আশঙ্কা, এটিই না ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়ায়।
কোভিড সংক্রমণ বাড়ার সময়েই এ রাজ্যের বেশ কিছু হল মালিক নিজেদের সিদ্ধান্তে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। বসুশ্রী, নবীনা, প্রিয়ার মালিকেরা জানিয়ে দেন, তাঁরা সলমনের ছবির জন্যেও হল খুলবেন না। এর পর ৩০ এপ্রিল রাজ্য সরকারের তরফে নোটিস জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়— সব সিনেমা হলই বন্ধ রাখতে হবে। ফলে মাল্টিপ্লেক্সের দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই। সে ক্ষেত্রে সলমনের ছবি কত সংখ্যক হলে মুক্তি পাচ্ছে, তা আর কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
পে পার ভিউ মোডে সাধারণত ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি দেখা যায়। এ দেশে বড় স্টারের কোনও ছবি এ ভাবে মুক্তি পাওয়ার উদাহরণ নেই। গত বছর ঈশান খট্টর ও অনন্যা পাণ্ডের ‘খালি পিলি’ এই পদ্ধতিতেই রিলিজ় করেছিল। কিন্তু সে ছবি একেবারেই প্রভাব ফেলেনি। ডিস্ট্রিবিউটর-হল মালিক শতদীপ সাহা অবশ্য এই নতুন পদ্ধতি নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁর মতে, ‘‘দর্শক এই পদ্ধতিতে সিনেমা দেখবেন না। যে প্ল্যাটফর্মে আসছে, সেটি ততটাও জনপ্রিয় নয়। ঘরে বসে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দেখার চেয়ে, দর্শক টেলিভিশনে ছবি আসার জন্য অপেক্ষা করবেন। যখন হল খুলেছিল ‘গডজ়িলা’, ‘রুহি’, ‘মুম্বই সাগা’ ভাল ব্যবসা করেছে। তাই সব ঠিক হলে দর্শক ফের সিনেমা হলে আসবেন।’’ ইম্পার কোষাধ্যক্ষ শান্তনু রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘সলমন খান এটা চালাকি করলেন। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে কাউকে কিছু বলা সম্ভবও নয়। উনি তো হল মালিকদের কথা ভেবেই ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ় করাচ্ছিলেন, তা হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছবিটি হোল্ড করতে পারতেন।’’
এই হাইব্রিড পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্তের। তাঁর কথায়, ‘‘সিনেমা হল খোলা থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও ছবি ওটিটিতে পে পার ভিউ মোডে আসে, তা হলে আমরা সেই ছবি চালাব না। আর নির্মাতাদের এটা ভাবার সময় এসে গিয়েছে, তাঁরা কোন মাধ্যমের জন্য ছবি বানাচ্ছেন, সেটা ঠিক করে নেওয়া। ‘রাধে’ যখন শুট হচ্ছিল, তখন পরিস্থিতি এতটা ভয়ানক হয়নি। এখন তাঁরা ওটিটি-তে দিয়ে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এই পদ্ধতিতে কতজন ছবিটি দেখবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’’ নবীনা সিনেমার মালিক নবীন চৌখানি অবশ্য এই জটিলতার মধ্যে ঢুকতে চান না। তাঁর মতে, ‘‘প্রযোজকের স্বাধীনতা রয়েছে, তাঁর ছবি নিয়ে তিনি কী করবেন। আমার কথা তিনি শুনবেনই বা কেন!’’
পে পার ভিউ মোডে ছবিটি আদৌ ব্যবসা করতে পারবে? সে প্রশ্নও রয়েছে। সূত্রের খবর, সলমন নাকি ২৩০ কোটি টাকার বিনিময়ে ছবিটি দিয়েছেন ওটিটি-কে। সাম্প্রতিক সময়ের নিরিখে চমকে দেওয়ার মতো অঙ্ক। এই ছবিটিকে কেন্দ্র করে জ়ি নতুন সাবস্ক্রিপশন অফারও এনেছে। অভিনেতার মূল ভরসার জায়গা আন্তর্জাতিক মার্কেট। ট্রেন্ড অ্যানালিস্টরা সন্দিহান, এতে ইন্ডাস্ট্রির কতটা লাভ হবে। আরও একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, গোটা তিনেক গান নিয়ে ‘রাধে’ এক ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের ছবি। সলমনের ছবি এত কম সময়ের হয় না সাধারণত। একাংশের মতে, মূল কনটেন্ট নিয়ে নির্মাতারা খানিক ধন্দে, তাই আর তাঁরা ছবি হোল্ড করেননি।
অন্য দিকে সলমনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে আগে থেকে শুট করে রাখা ছবি বেশি দিন আটকে রাখলে বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতি হত। এ-ও জানা গিয়েছে, ‘রাধে’ থেকে যে রেভিনিউ আসবে তা করোনা মোকাবিলার জন্য ব্যবহার করা হবে।