বিনোদন জগত আর গ্ল্যামার যেন একে অপরে পরিপূরক। পর্দা হোক বা পর্দার বাইরে, মেকআপ ছাড়া অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আমরা ভাবতেই পারি না।
বিনোদন এবং গ্ল্যামারের এই সমীকরণের সম্পূর্ণ বিপরীতে হেঁটে নজির তৈরি করেছেন এই দক্ষিণী তারকা। কখনও মেকআপ করেন না ইনি! মুখের ব্রণর লাল দগদগে দাগ আর উস্কোখুস্কো চুল নিয়েই চুটিয়ে অভিনয় করে চলেছেন।
তাঁর পুরো নাম সাই পল্লবী সেন্থামারাই। ১৯৯২ সালে ৯ মে তামিলনাড়ুর নীলগিরি জেলার কোটাগিরিতে জন্ম তাঁর। ছোটবেলা কেটেছে কোয়ম্বত্তূরে। তবে মা-বাবা এবং বোনের সঙ্গে এখন কোচিতে থাকেন।
তাঁর বাবা আবগারি দফতরে কাজ করেন। মা এক জন নৃত্যশিল্পী। মাকে দেখেই ছোট থেকে নাচের প্রতি ভালবাসা তৈরি হয়েছে তাঁর। সাই পল্লবী কখনও নাচ শেখেননি। কিন্তু প্রশিক্ষিত না হয়েও তাঁর নাচ দর্শকদের মুগ্ধ করে।
শুধু অভিনয়ই নয়, তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং সাদামাটা থাকার অভ্যাস দর্শকদের তাঁকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে।
বিনোদন দুনিয়ার চাকচিক্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যখন নিজেদের প্রকৃত রূপ মেকআপের আড়ালে ধামাচাপা দেন প্রায় সমস্ত অভিনেতাই, সেখানেও নজির সাই পল্লবী।
ব্রণর লাল দগদগে দাগ এবং কোঁকড়ানো উস্কোখুস্কো চুল নিয়েই দাপিয়ে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। ত্বকের দাগগুলো কখনও মেকআপের আড়ালে লুকোনোর চেষ্টাও করেন না।
পর্দায় তিনি একেবারেই মেকআপ করেন না। কখনও স্ক্রিপ্টের চাহিদা অনুযায়ী করতে হলেও নামমাত্র মেকআপ করেন তিনি।
সাই পল্লবী এক সময় নিজের চেহারা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন। প্রথম দিকে অভিনয়ের সুযোগও পাচ্ছিলেন না। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। বাইরের রূপই যে সব কিছু নয়, তা প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা তাঁকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
তিনি সব সময়ই পাশের বাড়ির মেয়ের মতো দর্শকদের ভালবাসা পেয়ে চলেছেন। সাই পল্লবী প্রথম চর্চায় উঠে আসেন একটি গায়ের রং উজ্জ্বল করার ক্রিমের বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে।
একটি ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিমের বিজ্ঞাপনের জন্য দু’কোটি টাকার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ ধরনের বিজ্ঞাপন মেয়েদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করে তিনি এই কোটি টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তার পর শুধু ভারতের সংবাদমাধ্যমই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও তাঁর যথেষ্ট প্রশংসা হয়।
২০০৩ সালের ‘কস্তুরীমান’ এবং ২০০৮ সালের ‘ধাম ধুম’ ছবিতে শিশু শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ তাঁর। তার পর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় লম্বা বিরতি নেন অভিনয় থেকে।
২০১৪ সালে জর্জিয়ায় থাকাকালীন পরিচালক আলফোনসে পুথারেন ‘প্রেমাম’ ছবির প্রস্তাব দেন তাঁকে। সাই পল্লবী তখন জর্জিয়ার পড়াশোনা করছিলেন। ছুটিতে বাড়ি ফিরে তিনি ছবির শ্যুটিং করেন। প্রথম ছবি থেকেই তাঁর অভিনয় পছন্দ করতে শুরু করেন দর্শকেরা।
প্রথম ছবিতেই সাই পল্লবী প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, মুখের খামতি লুকিয়ে ‘সুন্দরী’ না হয়েও দর্শকদের মন জয় করা যায়।
এর পরের বছরই পড়াশোনা থেকে এক মাসের বিরতি নিয়ে তিনি দ্বিতীয় ছবি ‘কালি’-র শ্যুটিং করেন। ছবিটি ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল। মালয়ালি ছবিতে তাঁর কাজ ভাল লেগেছিল দর্শকদের।
তাই কেরিয়ারের খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি তেলুগু ছবিতেও সুযোগ পেয়ে যান। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া তাঁর প্রথম তেলুগু ছবি ‘ফিদা’। এর পর ‘দিয়া’, ‘মারি ২’-সহ একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০২০ সালের ফোর্বস ইন্ডিয়া’স ৩০ আন্ডার ৩০’-তে তালিকাভূক্ত হয়েছিলেন তিনি। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী যাঁর নাম এই তালিকায় ছিল।
শুধু মেকআপ ছাড়া ত্বক নিয়েই যে পর্দায় আসেন তা নয়, আরও দুটো নিয়ম নিজের জন্য বেঁধে রেখেছেন এই দক্ষিণী নায়িকা।
পর্দায় ছোট পোশাক একেবারেই পরতে চান না তিনি। স্ক্রিপ্টের চাহিদা অনুযায়ী খুব প্রয়োজন না হলে ছোট পোশাক এড়িয়েই চলেন। শ্যুটিং শুরুর আগে পরিচালকদের সাফ জানিয়েও দেন সেটা।
নিজের জন্য তাঁর আরও একটি বেঁধে রাখা নিয়ম হল পর্দায় কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় নয়। বিশেষ করে পর্দায় নায়কের সঙ্গে চুম্বন একেবারেই পছন্দ নয় তাঁর।
সাই পল্লবীর আরও একটি গুণ অনেকেই জানেন না। এক জন দক্ষ অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি তিনি এক জন চিকিৎসকও। ২০১৬ সালে জর্জিয়ার টিবিলিসি স্টেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।