সাহানা বাজপেয়ী।
‘অন্ধ হয়ে বন্ধ কিছু মানুষ…আটকে আছে হিসেব ভরা ঠোঙায়...’
একটা গল্প বলা গান। গল্প, বন্ধ জীবনে হঠাৎ বন্দি হয়ে যাওয়ার। যেখানে মাঝে মাঝে সঙ্গী হয়েছে এক ফালি আকাশ। আর ছাদ সারিসারি। দিন-মাস-বছরের—হিসেব মেনে বয়ে যাওয়া তাদের নিয়েই। আবার সৃষ্টিকে হাতড়ে বেড়ানোও সেখানেই। বিদায় নিতে চলা বছরটাকে যদি একটা খাতা ভাবি, তবে তার পাতায় পাতায় ভরা এমনই অনেক হাতড়ানো চিন্তা ভাবনার হিজিবিজি। গানটার পরতে পরতে লেগে আছে সেই ভাবনাগুলোই। শিল্পী সাহানা বাজপেয়ী একটা একটা ভাবনা কোলাজের মতো গেঁথে নিয়েছেন নিজের কণ্ঠে। বছরের শেষ দিনে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর ‘শূন্য খাতার গান’। সাহানা জানালেন, ‘‘গানটার ভিডিয়ো অদ্ভুত সুন্দর। আমার নিজের ভালো লেগেছে। ছক ভাঙা একদল ছেলেমেয়ে তাদের আবেগ দিয়ে সাজিয়েছে গানটাকে। কোনও স্পনসর ছিল না। নিজেরাই টাকা যুগিয়েছে। লিখেছে, সুর করেছে, অ্যারেঞ্জ করেছে। এখনকার ভাষায় যাকে বলে ইন্ডিপেনডেন্ট সং। সেটাই করে ফেলেছে ওরা। এই কভার গান গাওয়ার রমরমা বাজারে স্বাধীন ভাবে তৈরি করেছে একটা মৌলিক বাংলা গান। ‘সিঙ্গলস’ বলতে পারেন এঁকে। ওরা চেয়েছিল, এই সিঙ্গলস আমি গাই। আমি সেটুকুই করে এগিয়ে দিতে চেয়েছি ওদের।’’
গানটির এক মিনিটেরও কম সময়ের একটি ভিডিয়ো এসে পৌঁছেছিল হাতে। এক ঝলক দেখতে মনে পড়ল অনেকদিন আগে ভাইরাল হওয়া পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানের একটি ‘ফ্যান মেড ভিডিয়ো’র কথা। সুররিয়াল বা অধিবাস্তব কতগুলো বিষয়কে গানের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই ভিডিয়োয়। যার তুলনা টানা হয়েছিল স্পেনের সুররিয়াল চিত্রশিল্পী সালভাদোর দালি আর ওয়াল্ট ডিজনির তৈরি ‘ডেস্টিনো’র সঙ্গে। ডেস্টিনো এখনও সুররিয়ালিজমের ক্লাসিক উদাহরণ। সাহানার গানের ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিয়োতেও মিলল সুররিয়ালিজমের অল্প একটু ঝলক। ঠিক যেমন গানের কথাতেও ছড়ানো ছিটনো রয়েছে অধিবাস্তবতা। গানটি ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়েছে গান শোনার বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। তবে অফিসিয়াল ভিডিয়ো মুক্তি পাবে বছরের শেষ দিনেই।
আরও পড়ুন: রহমানকে 'জিজু' সম্বোধন সুস্মিতার আত্মীয়ের! বিয়ে করতে চলেছেন তাঁরা?
সাহানা জানিয়েছেন, ভিডিয়োটি বানিয়েছেন শিঞ্জন নিয়োগী। গানের কথা দেবস্মিতা কর্মকারের। আর সুর দিয়ে গানটি অ্যারেঞ্জ করেছেন আদর দাস। এঁরা প্রত্যেকেই একে অপরের বন্ধু। ‘‘সুন্দর একটা দল ওদের। এখন তো স্বাধীন মৌলিক বাংলা গান সে ভাবে সামনে আসছে না। যেগুলো সামনে আসছে তা ওই সিনেমার দৌলতেই। আমাদের সময় কিন্তু, ব্যাপারটা তা ছিল না। সুমনদার গান আমরা আলাদা করে শুনেছি। আবার সিনেমার গানও হয়েছে আলাদা ভাবে। দু’রকম গানের আলাদা ধরন ছিল। ইদানীং তো ব্যান্ডের গানও শোনা যাচ্ছে না সে ভাবে। এই ছেলেমেয়েগুলো সেই না হওয়ার ভাবনা নিয়ে থেমে যায়নি। নিজেদের মতো করে পুরোপুরি নিজেদের চেষ্টায় একটা গান বানিয়েছে। সেটা প্রশংসার যোগ্য।’’
আরও পড়ুন: বছর শেষে কোথায় চললেন রণবীর-দীপিকা?
বন্ধ জীবনের কথা বলা হয়েছে গানে। লক ডাউনের বন্দি জীবন নিয়েই কি এই গান? ‘‘মজার ব্যাপার হল এই গানটার বিষয় অদ্ভুতভাবে খাপ খেয়ে গিয়েছে এই বছরটার সঙ্গে। অথচ গানটা লেখা থেকে শুরু করে তৈরি হওয়া সবকিছুই হয়ে গিয়েছিল গত বছর। তখন প্যানডেমিক বা এই ধরণের কোনও পরিস্থিতি যে আসতে চলেছে, তা ভাবতেও পারিনি আমরা। কিন্তু, এ বছর এই পরিস্থিতির জন্য গানটা অনেকদিক থেকে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।’’ বললেন সাহানা।