লোপামুদ্রার সহজ দোসর। ছবি: লোপামুদ্রার ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।
কথা বলতে বলতে থমকান লোপামুদ্রা মিত্র, ‘‘গতকাল রাতে কালিকাকে স্বপ্ন দেখেছি! সারা রাত ধরে! শুধুই কি দেখা? বকেওছি ওকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে। মানে, ওর তো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, বকা তো খাবেই!’’ হয়তো ‘সহজ পরব’-এর সময় হয়ে এসেছে। আগামী ৩ থেকে ৫ অগস্ট রবীন্দ্রসদনে।কালিকাপ্রসাদও নিশ্চয় থাকবেনওই সময়ে, তাই হয়তো মনে হচ্ছে লোপামুদ্রার। হবে না-ই বা কেন? সহজে যে শিকড়ের গানের এমন বিশাল যজ্ঞ করা যায় শহর জুড়ে তা বেশ কিছু কাল ধরেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন লোপামুদ্রা আর কালিকাপ্রসাদ।এবার চার বছরে পা দিল সহজ পরব। তবে লোকগানের এই উৎসবে লোপামুদ্রা প্রোডাকশনের পাশে এ বার দোহার আর অবশ্যই কালিকার স্ত্রী ঋতচেতা।
কলকাতা কি দেখতে পাবে তার নিজের লোকায়ত আত্মার মুখ? আগামী প্রজন্ম কি কৌতূহলী হবে সেই মাটির আদলে গড়া সুরে ভিজতে? সেই কৌতূহল কি গড়ে দিতে পারবেন দোহার আর লোপামুদ্রা?
‘‘কালিকা সবসময় বলত লোকগানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে লোকশিল্পীদের মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে। এই জন্যই সহজ পরব। এই জন্যই দোহার এর সঙ্গে যুক্ত।’’ বললেন ঋতচেতা।
আরও পড়ুন, কমার্শিয়াল নয়, ‘মাটি’তে প্রয়োজন ছিল ভাল অভিনেতার, বললেন দুই পরিচালক
পদ্মশ্রী রতন থিয়ামকে দিয়ে এই উৎসবের সূচনা। বিশিষ্ট অতিথি পার্বতী দাস বাউল।
‘‘সহজ পরব এ বার এমন একজন মানুষকে মঞ্চে আনবেন যিনি ‘খন’ গানের শিল্পী। উত্তর দিনাজপুরের শ্রমজীবী মানুষের গানই হল ‘খন’ গান। যার মধ্যে পালা গানের ধারা আছে,’’বলছিলেন লোপামুদ্রা। এই ‘খন’ গানের শিল্পী তরণীমোহন বিশ্বাসকে সহজ পরব সম্মাননা জানাবে।
কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে লোপামুদ্রা। ছবি: লোপামুদ্রার ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।
আসছেন বাংলাদেশ থেকে লোকশিল্পী সুনীল কর্মকার। এমনকি, সহজ পরবের জন্যই বাংলাদেশের মানুষ দর্শক হিসেবে শহরে আসবেন। এবারের শিকড়ের উৎসব সেজেছে মুরালালা মাড়ওয়াডার কবীর দোহার সুরে, মণিপুরি থাং-তা নৃত্যের জাঁকজমকে। এই থাং-তা মার্শাল আর্টের ঘরানায় তৈরি, জানালেন লোপামুদ্রা। মহারাষ্ট্রের ‘তালবাদ্য’-এ যখন রবীন্দ্রসদন গমগম করবে তখন শিশির মঞ্চে শোনা যাবে বাংলার বাউল, কালীকীর্তন, সাঁওতাল গান। সঙ্গে ছো আর আলকাপ। থাকছে ময়মনসিংহ গীতিকা।
আরও পড়ুন, বান্ধবীরা বলে আমার দ্বারা প্রেম হবে না, বলছেন আবীর
এমন এক কঠিনউৎসবের নাম কী করে হল সহজ পরব? প্রশ্ন করায় লোপামুদ্রার জবাব: “লোকগানে, ভক্তিতে সহজিয়া সাধনার একটা ব্যাপার আছে। সেই সঙ্গে সহজ মানে যা সহজাত। যা আমরা নিয়ে জন্মেছি। আমরা নিয়ে জন্মেছি গ্রামগ্রামান্তের মেঠো পথের গান। কত রকম সঙ্গতের বাদ্যযন্ত্র। সহজ ভাবে ভাবা এই পরব। মানুষের সহজ মনটাকে খুঁজে বের করার জন্যই এই পরব। আর এই কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, নব্বই শতাংশ মানুষ আছেন যাঁরা লোকগানের ঐতিহ্যকে আঁকড়ে বাঁচতে চান। শুধু সহজ পরবের জন্য অর্থ দিয়ে শ্রম দিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’’
কালিকাপ্রসাদ এক সময় বলতেন, ‘‘সব সুর, সব গানই কোথাও গিয়ে একই বিন্দুতে মিলে যায়। আমরা বলতে চাইছি বহুত্বের কথা। যত রাজ্য তত সুর, তত ভাষা, তত শিল্প। রঙের বহুত্বের মধ্যেই আমাদের সাঙ্গীতিক শেকড়ের বিস্তার। ভারতের একই বৃক্ষে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে।’’
সেই সুর-বৃক্ষের অপেক্ষায় রয়েছে মহানগর!