দর্শক তাঁকে প্রথম দেখেছিল হকি স্টিক হাতে। চিনেছিল ‘চক দে ইন্ডিয়া’-র ‘প্রীতি সভরওয়াল’ নামে। পর্দার বাইরেও তিনি ছিলেন হকি খেলোয়াড়। পরবর্তী ব্যক্তিগত জীবনেও সাগরিকা ঘাটগে বাঁধা পড়েন খেলার সঙ্গেই।
তবে অফস্ক্রিন আর হকি নয়। জাহির খানকে বিয়ে করে তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেল ক্রিকেট।
৩ বছরের প্রেমপর্বের পরে বয়সে ৮ বছরের বড় জাহিরকে সাগরিকা বিয়ে করেন ২০১৭-র নভেম্বরে। সে বছরই মে মাসে তাঁদের বাগদান হয়।
হিন্দু ধর্মে বিয়ে অথবা মুসলিম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিকাহ, দু’টিই সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। পরিবর্তে তাঁরা শুধুই রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করেন।
ভিন ধর্মে বিয়ে নিয়ে তাঁদের পরিবারে কোনও আপত্তি ছিল না। জানিয়েছিলেন, জাহির এবং সাগরিকা, দু’জনেই। তাঁদের অভিভাবকরা ধর্মের তুলনায় প্রাধান্য দিয়েছিলেন যোগ্য জীবনসঙ্গী নির্বাচনের উপরেই।
তবে জাহির এবং সাগরিকার প্রেমের পথ মসৃণ করেছেন তাঁদের বন্ধুরা। প্রথম আলাপের পরে দু’জনেই আড়ষ্ট ছিলেন। বেশ কয়েক দিন সম্পর্ক সীমাবদ্ধ ছিল শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়ে।
দু’জনের কমন বন্ধুরাই নাকি টের পেয়েছিলেন তাঁরা বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে প্রেমেও পড়তে পারেন। তখনও নাকি নিজেরা কিছু বুঝতে পারেননি। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সাগরিকা।
কিন্তু কে প্রথম জানালেন? সেখানে অবশ্য জাহিরই প্রথম এগিয়েছিলেন। প্রথমে তাঁরা বন্ধুদের দলে একসঙ্গে দেখা করতেন। এক দিন সাহস করে জাহিরই ডিনারের প্রস্তাব রাখেন সাগরিকার কাছে। তখন জানতেনও না সাগরিকা আদৌ তাঁকে পছন্দ করেন কি না।
সেই নৈশভোজেই অন্তরঙ্গতার সূত্রপাত। তিন বছরের দাম্পত্যেও প্রেম ফিকে হয়নি বলে জানিয়েছেন এই পাওয়ার কাপল। জাহিরের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন সাগরিকা।
জাহির আবার মানুষের গুণাগুণ নিয়ে অত ভাবেন না। তিনি নির্দিষ্ট মানুষকে তাঁর সহজাত গুণেই ভালবাসেন। তবে জাহিরের অতি-ঠান্ডা মেজাজে মাঝে মাঝে রেগেও যান সাগরিকা।
একটা বিষয়ে দু’জনের মিল খুব বেশি। তা হল, দু’জনেই ব্যক্তিগত জীবন পর্দার ঘেরাটোপে রাখতে ভালবাসেন। বন্ধু বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দু’জনেই খুঁতখুঁতে। ঘনিষ্ঠ বৃত্তে খুব সহজে কারও প্রবেশ মেনে নিতে পারেন না।
সাগরিকা রাজরক্তের উত্তরাধিকারী। তাঁর বাবার জন্ম মহারাষ্ট্রের কোলহাপুরের রাজবংশে। সাগরিকার ঠাকুমা ছিলেন ইনদওরের বিখ্যাত হোলকার পরিবারের মেয়ে। কিন্তু সাগরিকা জানিয়েছেন, তিনি নিজে মরাঠিতে সাধারণত কথা বলেন না।
অন্য দিকে তাঁর মায়ের সঙ্গে জাহির স্পষ্ট মরাঠিতে কথা বলেন। বিয়ের আগে হবু জামাইয়ের এই গুণেই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন ঊর্মিলা ঘাটগে।
আর জাহির নাকি বাড়িতে সাগরিকার নাম জানানো মাত্র সকলে বসে পড়েছিলেন ‘চক দে! ইন্ডিয়া’ দেখতে। তবে শাহরুখের সঙ্গে প্রথম সিনেমার পরে সাগরিকার কেরিয়ার খুব বেশি দূর এগোয়নি।
ব্যক্তিগত জীবনের মতো কেরিয়ার নিয়েও তিনি খুঁতখুঁতে। উচ্চাশার বদলে তাঁর পছন্দ বাছাই ছবিতে অভিনয় করা। গত ১৩ বছরে সাগরিকা অভিনয় করেছেন হাতেগোনা কিছু ছবিতে।
‘চক দে! ইন্ডিয়া’ ছাড়া সাগরিকার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য ‘ফক্স’, ‘মিলে না মিলে’, ‘রাশ’ এবং ‘দিলদরিয়াঁ’। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন পঞ্জাবি ও মরাঠি ছবিতেও। করেছেন টেলিভিশন শো এবং ওয়েব সিরিজেও।
তবে জাহিরের জীবনে সাগরিকাই প্রথম প্রেম নন। এর আগেও তিনি বিনোদন দুনিয়ার সুন্দরীদের প্রেমে পড়েছিলেন। অভিনেত্রী ঈশা শর্বাণীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন লিভ ইন করেছিলেন জাহির।
ক্রিকেট ম্যাচ থেকে পার্টি। সর্বত্র জাহিরের বাহুলগ্না থাকতেন ‘কিসনা দ্য ওয়ারিয়র পোয়েট’-এর নায়িকা ঈশা। গুঞ্জন ছিল, তাঁরা বিয়ে করতে চলেছেন। থাকার জন্য বাড়িও নাকি কেনা হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সব জল্পনায় অবসান। ২০১২ সাল থেকে হঠাৎ দেখা যায় মাঠে জাহির খেলছেন, কিন্তু স্টেডিয়ামে ঈশা নেই। জানা যায়, তাঁদের ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছে।
বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে কোনও দিন মুখ খোলেননি তাঁরা। তবে শোনা গিয়েছিল ভিডিয়ো জকি তথা গায়িকা রমোনা অ্যারিনার সঙ্গে জাহিরের ঘনিষ্ঠতাই নাকি ঈশার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
তবে পরে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন ঈশা। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি আর জাহির কোনও দিন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেননি। যে সময়ে বিচ্ছেদ হয়, সে সময় কেরিয়ারই ছিল তাঁদের জীবনের পাখির চোখ।
বর্তমানে ঈশা অভিনয় থেকেও অনেক দূরে। ছেলে এবং মায়ের সঙ্গে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সেখানে সিঙ্গল পেরেন্ট ঈশা ব্যস্ত তাঁর নৃত্যচর্চা নিয়ে।
পুরনো সম্পর্ক ছায়া ফেলেনি জাহির-সাগরিকার দাম্পত্যে। শোনা যাচ্ছে, এখন তাঁরা অপেক্ষা করছেন তাঁদের প্রথম সন্তানকে স্বাগত জানানোর জন্য। তবে এ বিষয়ে সাগরিকা বা জাহির কিছু জানাননি।