Rudranil Ghosh

Rudranil Ghosh: আফগান শরণার্থীরা থাকতে চাইলে স্বরা ভাস্কর নিজের বাড়ি দেবেন তো? প্রশ্ন রুদ্রনীলের

ও দিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে মন্দির। তা হলে কি কট্টরপন্থী ইসলামের দাপটে বিপদ ঘনিয়ে আসছে সবার?

Advertisement

রুদ্রনীল ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ১৯:০২
Share:

রুদ্রনীল এবং স্বরা

‘‘যে ভাবে বাংলাদেশ চলছে, তাতে মনে হচ্ছে, আরও কড়া হাতে ইসলামকে নিয়ে এগোতে হবে।’’ থমকে গিয়েছিলাম ইসলামিক দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে এক তালিবানের এই বক্তব্য শুনে। মনে পড়ছিল, সেই সব ছবি এবং ভিডিয়োর কথা। প্রাণ হাতে নিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার লোক। যেন ইসলামিক কট্টরপন্থী তালিবানের হাতে তিলে তিলে মরার চেয়ে বিমানের চাকা থেকে পড়ে গিয়ে মরাও তাঁদের কাছে ভাল। ও দিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে মন্দির। দোকানে চলছে লুঠতরাজ। আক্রান্ত অ-মুসলিম মানুষ। তা হলে কি কট্টরপন্থী ইসলামের দাপটে বিপদ ঘনিয়ে আসছে সবার?

Advertisement

কাজে এক, কথায় আর এক। রাজপ্রাসাদে ঢুকেই তালিবান যোদ্ধারা ঘোষণা করল, ‘‘সমস্ত কিছু একই থাকবে। শান্তি থাকবে। মহিলাদের অধিকার থাকবে শরিয়ত আইন মেনে’’ ইত্যাদি। কিন্তু তার পরেই আমরা দেখছি, আদপেই সেটি হচ্ছে না। চলছে নির্যাতন, নিখোঁজ গনতন্ত্র। যাতে পৃথিবীর অন্যান্য মানবতাপ্রেমী দেশগুলি বিমুখ না হয়ে যান, তাই মুখে তালিবানের এ সব মিথ্যে ঘোষণা! তালিবান যোদ্ধারা যে ভাবে ক্ষমতা দখল করল, তাতে বোঝা যাচ্ছে, এরা কতখানি মারাত্মক! তারা নিজেরাই বলেছে শরিয়ত আইন চলবে, কিন্তু গণতন্ত্র থাকবে না। প্রচুর মানুষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে, পালিয়েছে কেউ কেউ। কিন্তু এখানে আমার একটিই প্রশ্ন, সে দেশের প্রায় ৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে পলাতক মানুষের সংখ্যা আর কতটুকু? যাঁরা সে দেশে থেকে গিয়েছেন, তাঁরা কি তালিবানের হাতে শরিয়তি আইনের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত নন? নিশ্চয়ই জানেন।

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালিবানি শাসনের প্রথম দফার অত্যাচার সবই দেখেছেন আফগানরা। কিন্তু আফগানিস্তানের বেশ কিছু মানুষের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছাড়া এ ভাবে তিন মাসের মধ্যে ক্ষমতা দখল সম্ভব হত কি? অন্য দিকে কিছু অংশের মানুষ এই শাসনের ভয়াবহতা জেনে শিকড় ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।

Advertisement

আফগানিস্তানের চিত্র

তবে শুধু আফগানিস্তানের মানুষ নন, আমরাও জানি তালিবানি শাসন কী হতে পারে। বিভিন্ন মাধ্যমে তার ছবি ভি়ডিয়ো দেখেছি। এদের হাতে শরিয়তি আইনের ক্ষমতা যদি পুরোপুরি কায়েম হয়ে যায়, তা হলে বোঝা যাবে, অধিকাংশ মানুষ আদিমতার পক্ষে। ধর্ম আর ধর্মীয় আইনের কট্টর প্রয়োগ, দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা। অবাক হয়ে যাই, অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করের টুইট পড়ে। (টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা তালিবানি সন্ত্রাস নিয়ে আতঙ্কিত হব, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস নিয়ে মাথা ঘামাব না— এই মানসিকতাও যেমন ভুল, তেমনই তালিবানি সন্ত্রাসের কথা শুনে নিশ্চিন্তে বসে থাকব আর কল্পিত হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করব— এটাও ভুল।’) তালিবান সন্ত্রাসের সঙ্গে তিনি হিন্দু ধর্মকে কী করে গুলিয়ে ফেললেন?

আমি জানতে চাই, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসটা কী জিনিস? কট্টর হিন্দুত্ববাদী আইন বলেও তো হিন্দু ধর্মে কিছু নেই! হয়তো স্বরা ভাস্কর স্বপ্নে কিছু দেখেছেন। এ ধরনের স্বপ্নই তাঁর মতো মানুষদের মানসিক গঠনের পরিচয়। এ সব বললে, তাঁর বিরুদ্ধে যে জনমত তৈরি হবে, সে তো স্বাভাবিক (টুইটারে ট্রেন্ড চলছে, ‘অ্যারেস্ট স্বরা ভাস্কর’ অর্থাৎ তাঁকে গ্রেফতার করা হোক)। যে সম্প্রদায় শরিয়তি আইন মেনে চলে, তার সঙ্গে সনাতন হিন্দু ধর্মের তুলনা কী ভাবে হতে পারে?

তালিবানি কবলে কাবুল

উল্লেখযোগ্য, তালিবান নিয়ে চিন এবং পাকিস্তান কোন অবস্থান নিল, সেটা স্বরার মতো মানুষেরা ভুলে যাচ্ছেন। তালিবানের হাত ও মন শক্ত করার জন্য যা যা দরকার, এই দু’টি দেশ সেটাই করে যাচ্ছে নেপথ্যে। এ দিকে চিনে মুসলিমদের অবস্থা শোচনীয়। তাদের তালিবানি কায়দায় দমবন্ধ করে রেখে দিয়েছে সেই তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ কমিউনিস্ট চিন! স্বরাদেবীরা বা আমাদের রাজ্যের বামপন্থী মানুষরা অবশ্য সযত্নে এড়িয়ে যান এ সব তথ্য। তাই তারা প্রকাশ্যে এক বারও এ কথা বলছেন না যে, আসলে কমিউনিস্ট চিন এবং পাকিস্তান তালিবানের হাত মজবুত করে ভবিষ্যতে ভারতকে বিপদে ফেলতে চায়।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আফগান শরণার্থীদের এ দেশে জায়গা পাবেন? উল্টে আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই, নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে তার শাসকের সঙ্গে বিবাদ হয়েছে বলে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এসে ভারতে জায়গা চাইলে জায়গা দেওয়া যাবে তো? স্বরা ভাস্কর নিজের বাড়ির দলিল তাদের হাতে তুলে দেবেন তো? শুধু আমরা কেন, পৃথিবীর যে কোন মানবতাবাদী দেশ তাঁদের ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে পারবে তো? করোনা অতিমারির জন্য গত দু’বছর ধরে অর্থনীতিকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে অনেক পরিশ্রম করেছে আমাদের দেশ। সব ধর্মের মানুষ মিলে আবার বাঁচার চেষ্টা করছি। সমস্যা হল, তার মধ্যে এই ধরণের উস্কানিমূলক মন্তব্য দুঃখজনক। আমাদের দেশের হিন্দুধর্মের একাংশ মানুষ নিজেদের ধর্মের প্রতি উদাসীন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজের ধর্মকে ঘিরে অপমানজনক মন্তব্য করে অন্য ধর্মের পাশে দাঁড়ান। শুধু তা-ই নয়, এ ভাবে পাশে দাঁড়ানোটাই যেন তাঁদের কাছে ‘মানবিকতা’। নেটমাধ্যম ও গণমাধ্যমে তারা এ সবই প্রচার করার চেষ্টা করেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রবণতার ঘোর বিরোধী। আমার কাছে সব ধর্মই সম্মানের। তবে,আমি যে ধর্মের মানুষ, সেই ধর্মই আমার কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে, তার পর অবশ্যই অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান জানাতে প্রস্তুত আমি। কিন্তু কিছু ‘প্রগতিশীল মানুষ’ নিজের ধর্মকে ছোট করে, যে ভাবে ইফতার পার্টিতে গিয়ে নেটমাধ্যমে ছবি তুলে নিজেকে ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ বলে দাবি করেন, তা হাস্যকর ও অযৌক্তিক। নিজের ধর্মকে অসম্মান করে এ সব করা আসলে হীন মানসিকতার পরিচয়।

রুদ্রনীল এবং জয়া

সম্প্রতি আমার সহকর্মী এবং অভিনেত্রী জয়া আহসান একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানে আজ যা হচ্ছে, কাল তা আমার দেশে বা কলকাতাতেও হতে পারে।’’ বাংলাদেশের মানুষ হয়ে জয়ার এই ভয় পাওয়াই তো সত্য ও স্বাভাবিক। ও পার বাংলা-এ পার বাংলা, দু’টি কথা একসঙ্গে উচ্চারণ করে আমরা বেশ খুশি হই। আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। বাংলাদেশ কিন্তু ইসলামিক রাষ্ট্র। সে দেশে এখন হিন্দু জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ২৭ লক্ষে এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ হিসেব করলে দাঁড়ায় মাত্র ৮.৫৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে সেই ‘ও পার বাংলায়’ একাধিক মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনাগুলি কি সে দেশের হিন্দু ও বৌদ্ধদের জন্য হুমকির সমান নয়? তাঁদের একটা বড় অংশ চলে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন ভারত বা পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে! চাই বন্ধ হোক বিশ্বজুড়ে যে কোন ধরণের ধর্মীয় কট্টরপন্থী অত্যাচার। বন্ধ হোক আমার দেশকে অসম্মানের চেষ্টা।

আফগানিস্তানের মানুষদের জন্য এইটুকুই চাই, যাতে তাঁরা সুস্থ থাকেন, মানুষের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারেন এমন শাসন আসুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement