শুভময় চট্টোপাধ্যায়।
গত দেড় বছর ধরে একটি চিত্রনাট্য লিখছি। শুভময় চট্টোপাধ্যায়কে মনে করে সেখানে একটি চরিত্রও আছে। গত মাসেও ওঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। চিত্রনাট্যের কাজ প্রায় গুটিয়ে এনেছি। কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো ফ্লোরে যাব। তার প্রাক আলোচনা-সঙ্গী শুভময়দা। ওঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মনে হচ্ছে, এ বার ওই ‘চরিত্র’ কাকে দেব? সবাই কি শুভময় চট্টোপাধ্যায়?
শুভময়দার সঙ্গে পরিচয় কি আজকের! আমার অভিনয়ে আসার শুরুর দিনগুলো দাদা নিজের হাতে গড়ে দিয়েছিলেন। লেখালেখি, পর্দায় এবং মঞ্চে অভিনয়, নির্দেশনা— সব ওঁর কাছ থেকে শেখা। সবেতেই তুখোড় ছিলেন মানুষটি। খুব ভাল শিক্ষকও। শুভময়দা না থাকলে রুদ্রনীল ঘোষ অভিনয় দুনিয়ায় অজানাই থেকে যেতেন। জানি, চলে যাওয়ার পরে শুভময়দাকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হবে। সবাই অনেক ভাল ভাল কথাও বলবেন। জীবিত সময়ে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা, যশ, খ্যাতি, কাজ— কিছুই পেলেন না।
কেন? এক, মানুষটি ভীষণ আত্মভোলা ছিলেন। বেহিসেবিও ছিলেন। মেপে চলতে জানতেন না। দুই, প্রভাবশালীদের তুষ্ট করে চলতে হয়, অনিচ্ছাতেও তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে হয়, এ কথা মানতেন না। ফলে, শুভময়দা তাঁর মতো লোকেদের সঙ্গেই ওঠাবসা করতেন। যাঁরা প্রতিভায় বিশ্বাসী। যোগাযোগে নয়! তাই কি যোগ্যতম হয়েও জনপ্রিয়তা অধরাই থেকে গেল? পেশাদার ব্যক্তিত্বরা তেমনই বলবেন। অপেশাদারিত্বের তকমা এঁটে দেবেন। শুভময়দার কিন্তু আক্ষেপ ছিল না। যেমন ছিল না শক্তি চট্টোপাধ্যায় বা ঋত্বিক ঘটকের। কে পুছল না পুছল, তার তোয়াক্কাই তাঁরা কোনও দিন করেননি। শেষ দিকে বেশ কিছু ভাল কাজ শুভময়দা পেয়েছিলেন। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’, সৌমিক সেনের ‘মহালয়া’, জিৎ প্রযোজিত ছোট ছবি ‘হরে কৃষ্ণ’ ইত্যাদি। শেষ সময়ে এই ছবিগুলো তাঁকে দৌড়ে এগিয়ে দিয়েছিল।
শুভময়দার বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ, তিনি নাকি সময়, আচরণবিধি মেনে কাজ করতে পারতেন না। তাই ভাল অভিনেতা হলেও তাঁর উপরে ভরসা করা যেত না। আজ টলিউডের থেকে খুব জানতে ইচ্ছে করছে, এমন বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন যাঁরা তুমুল পেশাদার। হয়তো সময়ে আসেন। রূপটানে নিজেদের সুন্দর ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপিতও করেন। কিন্তু অভিনয়ের বিন্দু-বিসর্গ জানেন না। তাঁরা বেশি যোগ্য, না শুভময়দা? অভিনয় দুনিয়ায় কার কদর বেশি, প্রতিভার না পেশাদারিত্বের?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।