কালিকাপ্রসাদ
এক বছর আগে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য চলে যাওয়ার পরেই মুক্তি পেয়েছিল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘বিসর্জন’। সেই সময়ে শোনা গিয়েছিল, ‘বিসর্জন’-ই কালিকাপ্রসাদের করে যাওয়া শেষ কাজ। বাংলা ছবির সঙ্গীত পরিচালনা হিসেবে প্রথম কাজও বটে। তবে বিষয়টা খানিক পাল্টেছে। পরিচালক পাভেলের দাবি, ‘রসগোল্লা’ই কালিকাপ্রসাদের শেষ কাজ। তিনি বললেন, ‘‘আমি যত দূর জানি, ‘রসগোল্লা’ই বাংলা সিনেমায় কালিকাদার শেষ কাজ। কারণ কালিকাদা যে দিন চলে যান, তার দু’দিন আগেও রেকর্ডিং করে গিয়েছিলেন। এটা সকলেই জানেন। তবে এটাকে আমি কালিকাদার শেষ কাজ বলে প্রচার করতে চাই না। আমার বিশ্বাস, এটা কালিকাদার শ্রেষ্ঠ কাজ।’’
ছবিতে রয়েছে ‘খোদার বান্দা’, ‘বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে’, ‘কেন আসিবে বলে আস না কানাই’-এর মতো কালিকাপ্রসাদের করে যাওয়া বেশ কিছু না-শোনা গান। পাভেলের কথায়, ‘‘সত্তর শতাংশ সাউন্ডস্কেপ কালিকাদার করে যাওয়া। তবে যেটা আমার কাছে ইতিহাস, সেটা হল ‘রসগোল্লা’র অ্যালবামে সব ক’টা গানই লাইভ ইনস্ট্রুমেন্টের সঙ্গে করা।’’
ছবিটা যেহেতু উনিশ শতকের কথা বলে, তাই পাভেলই কালিকাপ্রসাদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন ১৮৬০ সালের পরে আবিষ্কৃত কোনও যন্ত্রানুষঙ্গ ব্যবহার না করা হয়। পরিচালকের কথায়, ‘‘কালিকাদা প্রথমে আমাকে বলেছিলেন— ‘ইম্পসিবল। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।’ আমরা কিন্তু সত্যিই করে দেখালাম! ছবির গানে বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িকে ওয়র্ম প্যাড ব্যবহার করেননি কালিকাদা। এমনকী হারমোনিয়ম পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। কারণ হারমোনিয়ম তার পরে এসেছে। অথচ গোটা ব্যাপারটা শুনলে মনে হবে ২০১৮-র সাউন্ডস্কেপ!’’ জানালেন, তাঁদের দু’জনকেই এই পিরিয়ড সাউন্ড করার জন্য জাদুঘরে গিয়ে ওই সময়কার ইনস্ট্রুমেন্টের তথ্য জোগাড় করে, তার পর সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছিল।
পাভেল চেয়েছিলেন, ছবিতে একটি ফকিরি গান রাখতে। কিন্তু লাগসই গান প্রচুর ঘেঁটেও পাননি। তার পরে নিজেই লিখে ফেলেন ‘খোদার বান্দা’। কালিকাপ্রসাদকে অবশ্য ‘লাজুক’ পরিচালক সেটা বলতে পারেননি! ‘‘পরে যখন কালিকাদা জানতে পারেন আমি লিখেছি, জড়িয়ে ধরেছিলেন আমাকে। বলেছিলেন, ওঁদের অ্যালবামের জন্য গান লিখে দিতে,’’ স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন পরিচালক। ছবিতে কালিকাপ্রসাদের কম্পোজ়িশনে গানগুলো গেয়েছেন অর্ক মুখোপাধ্যায়, মৌসুমী দত্ত, অমিত সুর এবং ঋষি।