ছবির দৃশ্য।
ইনি এমন এক বাঙালি, যাঁর নাম অধিকাংশ বাঙালি জানেন, গর্ব করেন। তবে তাঁর ইমেজ সম্পর্কে জনমানসে বিশেষ ধারণা নেই। তাই দু’ঘণ্টা সতেরো মিনিট ধরে পর্দায় নবীনচন্দ্র দাসের হাসি-কান্না, প্রেম-ব্যথা দেখতে দেখতে ইতিহাসের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে চরিত্রটাকে মেলাতে হয় না। তা ছবি করিয়ে ও অভিনেতার জন্য বাড়তি সুবিধে। এই সুবিধেকে দায়িত্বপূর্ণ ভাবে সদ্ব্যবহার করেছেন ছবির লেখক ও চিত্রনাট্যকার পাভেল এবং স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। সেই চিত্রনাট্যের সুফল পেয়েছেন পরিচালক পাভেল।
রসগোল্লা শুধু মিষ্টি নয়, ‘রসের গোল্লা’ বাঙালির আবেগ, পরিচিতি। বাঙালি সেন্টিমেন্টের রসে ছবির চিত্রনাট্যকে জারিয়ে নিয়েছেন পরিচালক। কী নেই তাতে! বিধবা মা ও কিশোর নবীনের দিনযাপনের কষ্ট, সরল নবীনের জীবিকা নির্বাহের জন্য লড়াই, ফকিরের গান, কবিয়ালদের সঙ্গ... তবে সব কিছু ছাপিয়ে ছবির ইউএসপি নবীন ও ক্ষীরোদের প্রেমকাহিনি। যে প্রেমেই নিহিত রসগোল্লা উদ্ভাবনের সূত্র।
রসগোল্লা পরিচালনা: পাভেল অভিনয়: উজান, অবন্তিকা, রজতাভ, খরাজ, বিদীপ্তা ৬.৫/১০
ছবিতে নতুনত্ব নেই। কিন্তু চেনা গল্পকে সুচারু ভাবে বলতে ক’জন পারেন? ‘ফিকশনাল বায়োপিক’-এর আগাম সতর্কতাও ছবির শুরুতে বলে দেওয়া। তবে গল্পে কখনও ছন্দপতন হয়নি। বরং বৈকুণ্ঠভোগ খাইয়ে ক্ষীরোদের মানভঞ্জন দিয়ে ছবির সমাপ্তি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল।
নবীন ও ক্ষীরোদের চরিত্রে উজান ও অবন্তিকা সম্ভাবনাময়। জুটি হিসেবেও তাঁদের দিব্যি মানিয়েছে। তাঁদের সঙ্গ দিতে ছোট ছোট চরিত্রে রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, কৌশিক সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় মানানসই। নবীনের মায়ের চরিত্রে বিদীপ্তা চক্রবর্তীও নজর কাড়েন।
কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও অর্ণব দত্তের সঙ্গীত গল্পের রসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তবে ছবির ভিএফএক্স কিন্তু নিরাশ করেছে।
বিচ্যুতি আরও দু’-এক জায়গায়। ক্ষীরোদের শাশুড়ি যখন তাকে বলে, ‘‘বাড়ির বৌ দোকানে বসবে, লোকে কী বলবে?’’ তাতে ক্ষীরোদের উত্তর, ‘‘লোকের কথা আপনি ভাবলে লোকে কী ভাববে?’’ এমন সংলাপ পাভেল বলতে পারেন। তা বলে সে সময়ে দাঁড়িয়ে ক্ষীরোদমণিও কি?
আবার কিশোর নবীনের চুলের লক্স ঠিক করাও বিসদৃশ লাগে। অবশ্য দক্ষিণী কল্পনায় বাহুবলীর মতো ফ্যান্টাসি চরিত্র যদি এত কীর্তি করে, বাংলার নবীনচন্দ্র তো রক্ত মাংসের মানুষ! বয়সটাও মাত্র কুড়ি।