বলা হয়, বলিউডে বেশির ভাগ সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কই লোকদেখানো। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা চোপড়া এবং করিনা কপূরের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত যে, তাঁরা কোনওদিন জনসমক্ষেও ভদ্রতার ধার ধারতেন না।
প্রিয়ঙ্কা ও করিনা দু’জনে একসঙ্গে প্রথম কাজ করেন ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অ্যাতরাজ’-এ। ছবিতে করিনা ছিলেন নায়িকা। প্রিয়ঙ্কা অভিনয় করেছিলেন খলনায়িকার ভূমিকায়।
শুটিংয়ের সময় দু’জনের সম্পর্ক ভাল ছিল। একে অন্যকে কমপ্লিমেন্টও দিতেন। কিন্তু সুর কাটল ছবি মুক্তি পাওয়ার পর।
প্রচারের সব আলো শুষে নিলেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর অভিনয় সমাদৃত হল সব মহলে। নায়িকা করিনাকে সব দিক থেকে ছাপিয়ে গেলেন খলনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করা প্রিয়ঙ্কা।
সে সময় প্রিয়ঙ্কা সবে দু’বছর হল ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছেন। করিনা তার আগেই অভিনয় শুরু করেছেন। শোনা যায়, তিনি এত অল্প সময়ে প্রিয়ঙ্কার খ্যাতি মেনে নিতে পারেননি।
বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণী অনু্ষ্ঠানে বলা হত করিনার কথা। সেখানে প্রিয়ঙ্কার ভাগ্যেই জুটত ছবির সাফল্যের কৃতিত্ব। এখান থেকেই শুরু দু’জনের প্রতিযোগিতা।
এর পর দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায় ‘ডন’ ছবিতে। সেখানে নায়িকা ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। করিনা করেছিলেন আইটেম ডান্স। ছবিতে প্রিয়ঙ্কার অভিনয় চূড়ান্ত প্রশংসিত হয়। তবে করিনার নাচও দর্শকদের নজর কেড়েছিল।
২০০৭-এ সব হিসেব উল্টোপাল্টা হয়ে গেল। সে বছর মুক্তি পায় ‘জব উই মেট’। এই ছবিতে করিনার ‘গীত’ চরিত্রটি আইকনিক হয়ে ওঠে নতুন প্রজন্মের কাছে।
কিন্তু প্রিয়ঙ্কার কাছে ২০০৭ ছিল চূড়ান্ত ব্যর্থতার বছর। ‘সলামে ইশক’, ‘বিগ ব্রাদার’-সহ তাঁর সব ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
তার পরের বছর আবার ‘ফ্যাশন’, ‘দোস্তানা’ ছবিতে প্রিয়ঙ্কার অভিনয় তুমুল জনপ্রিয় হয়। ‘ফ্যাশন’-এ অভিনয় প্রিয়ঙ্কাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।
কিন্তু সে বছর করিনার জন্য মোটেও ভাল ছিল না। ‘টসন’ বা ‘গোলমাল রিটার্নস’ দুটো ছবিই দর্শকদের পছন্দের তালিকায় আসতে ব্যর্থ হয়।
সে বছর করিনার কাছ থেকে শাহিদ কপূরকেও কেড়ে নেন প্রিয়ঙ্কা। করিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে শাহিদ তখন প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে ডেট করছিলেন।
এর পর করিনা প্রকাশ্যে প্রিয়ঙ্কাকে আক্রমণ করেন। কর্ণ জোহরের শো-য়ে গিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন প্রিয়ঙ্কার উচ্চারণভঙ্গি নিয়ে। পরে ওই একই শো-এ পাল্টা উত্তর দেন প্রিয়ঙ্কাও। বলেন, তিনি ওই উচ্চারণভঙ্গি রপ্ত করেছেন সেখান থেকে, যেখান থেকে সইফ আলি খান উচ্চারণভঙ্গি শিখেছেন।
কাদা ছোড়াছুড়ি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, করিনা এক বার বলেন, তিনি প্রিয়ঙ্কাকে নায়িকা হিসেবে মনেই করেন না! ক্ষত আরও গভীর করতে ছাড়েননি প্রিয়ঙ্কাও। তিনি বলেন, করিনা তাঁর সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করতেই পারেন। কারণ করিনা অনেক সিনিয়র। বয়স নিয়ে এই খোঁচা হজম করতে পারেননি রণধীর-কন্যা।
প্রিয়ঙ্কার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া নিয়েও বলতে ছাড়েননি করিনা। তিনি বলেন, তাঁর কাছে জাতীয় পুরস্কার গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং, তিনি মনে করেন কোনও ছবির জন্য দর্শকদের ভালবাসা-ই শেষ কথা। শুনে প্রিয়ঙ্কা বলেছিলেন, যিনি জাতীয় পুরস্কার পাননি, তাঁর কাছে আঙুরফল টক-ই থাকে।
২০১৫ সালে প্রিয়ঙ্কা ও করিনা, দু’জনেই একে অন্যকে রীতিমতো টেক্কা দিয়ে যান। করিনা অভিনয় করেন ‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ। অন্য দিকে প্রিয়ঙ্কার সে বছর তুরুপের তাস ছিল ‘মেরি কম’।
এর পর হলিউডের আকাশেও ডানা মেলেন প্রিয়ঙ্কা। অন্য দিকে, বলিউডে তখন বিদ্যা বালনের যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘কহানি’, ‘ডার্টি পিকচার’-এর মতো ছবি দিয়ে তিনি শাসন করছেন ইন্ডাস্ট্রি। পাশাপাশি দ্রুত উঠে এসেছেন আলিয়া ভট্টও।
এ ছাড়া দীপিকা পাড়ুকোন তো ছিলেনই। কঙ্গনা রানাওয়াতও মজবুত করে নেন নিজের জায়গা। এঁদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন করিনা। তখন তিনি বিয়ের পরে কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নতুন সংসার নিয়েও।
যখন প্রতিযোগিতাই নেই, তখন আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোথা থেকে আসবে? তাই করিনা ও প্রিয়ঙ্কা নিজেদের মধ্যে অসূয়া মিটিয়ে নিলেন। কর্ণ জোহরের শো-এ দু’জনে একসঙ্গে আসেন। তখন তাঁদের দেখে কে বলবে একসময়ে দুই নায়িকার মধ্যে বৈরিতা আকাশে পৌঁছেছিল!
বরং যে বিষয়ে তাঁরা রেষারেষি করতেন, সে সবই তাঁদের কাছে রসিকতার বিষয় হয় ওঠে। এমনকি, শাহিদ কপূরকে নিয়ে তাঁরা বলেন ওই একটা বিষয়ই তাঁদের মধ্যে কমন! আজ দু’জনেই কেরিয়ারের পাশাপাশি সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আসলে, এক নম্বর জায়গা-ই যখন অন্য কারও দখলে, তখন আর অন্য দু’জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে কেন!