তাঁর পরিবারে মেয়েদের ছবিতে অভিনয় করার রীতি ছিল না। তিনি পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথে যাননি। বরং, তিনি নিজের পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য বৃত্তে। হয়ে উঠেছিলেন দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী এবং বিমা-পরামর্শদাতা। তিনি রাজ কপূরের বড় মেয়ে, ঋতু।
রাজ ও কৃষ্ণা কপূরের বড় মেয়ে তথা দ্বিতীয় সন্তান ঋতুর জন্ম ১৯৪৮ সালের ৩০ অক্টোবর। দাদা রণধীর, ভাই ঋষি, রাজীব এবং বোন রিমার সঙ্গে ঋতু বড় হয়ে ওঠেন সাবেক বম্বে, আজকের মুম্বইয়ে।
রাজ কপূরের খুব আদরের মেয়ে ছিলেন ঋতু। পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তাঁর জীবনের সবথেকে দুঃসহ স্মৃতি হল বাবার জীবনের শেষ মুহূর্তগুলির সাক্ষী থাকা।
১৯৮৮-র ২ জুন প্রয়াত হন রাজ কপূর। তার আগে এক মাস তিনি ভর্তি ছিলেন এমস-এ। কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় প্রায় রোজই ঋতু চিকিৎসকদের কাছে শুনতেন তাঁর বাবার শেষ দিন আসন্ন। হাসপাতালে ঋতুর চোখের সামনেই প্রয়াত হন চিকিৎসাধীন রাজ কপূর। সেই মুহূর্তটা সারা জীবন ঋতুকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছে।
তবে বাবা হিসেবে রাজ কপূরকে খুব বেশি পাননি ঋতু। তিনি ব্যস্ত থাকতেন বলে ঋতু এবং তাঁর ভাইবোনের সময় কাটত মা কৃষ্ণাকে ঘিরে। পরে রাজ কপূরকে নিয়ে লেখার সময় ঋতু বলেছেন, বাবাকে তাঁর যে যে কথা বলার ইচ্ছে হত, তিনি একটা চিঠিতে লিখে রেখে আসতেন বাবার বালিশের নীচে।
বাবার সঙ্গে দেখা না হলেও চিঠির ইচ্ছে ঠিক পূরণ হয়ে যেত। সে আইসক্রিমের বায়না-ই হোক, বা পুতুলের বিয়ে নিয়ে কোনও আবদার! ছোটবেলার এই টুকরো কোলাজ পরে বার বার ফিরে এসেছে ঋতুর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন, শৈশবে সান্নিধ্য সে ভাবে না পেলেও তাঁর পুরো জীবন জুড়েই আছেন তাঁর বাবা, রাজ কপূর।
কপূর পরিবারের ঐতিহ্যও ঋতুর ছায়াসঙ্গী ছিল জীবনভর। তবে পাশাপাশি, তিনি নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলতেও সফল হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে ঋতুর বিয়ে হয়েছিল শিল্পপতি রাজন নন্দর সঙ্গে।
শ্বশুরবাড়ির ধারা অনুসরণ করে ঋতুও পরিবর্তন আনেন নিজের জীবনধারায়। তাঁর প্রথম ব্যবসা অবশ্য কিছুদিন চলার পরেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ব্যর্থতায় হার মানেননি ঋতু। ফের নতুন উদ্যমে যাত্রা শুরু করেন ঋতু। এ বার তিনি বিমা পরিষেবার অফিস শুরু করেন।
এক দিনে সতেরো হাজার পেনশন পলিসি বিক্রি করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম রেখে গিয়েছেন ঋতু। কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন তিনি। বিমা সংস্থার পাশাপাশি আরও দু’টি সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন ঋতু।
রাজন-ঋতুর দুই সন্তান, ছেলে নিখিল এবং মেয়ে নাতাশা। বর্তমানে দেশের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিদের মধ্যে নিখিল অন্যতম। নিখিলের সঙ্গে অমিতাভ-জয়ার মেয়ে শ্বেতার বিয়ে হয় ১৯৯৭ সালে। তাঁদের দুই সন্তান। অগস্ত্য এবং নব্যা নবেলী।
আদরের নাতি নাতনি এবং বাকি পরিজনদের ফেলে রেখে ক্যানসার আক্রান্ত ঋতু প্রয়াত হন চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। তিন মাসের মধ্যে প্রয়াত হন তাঁর ভাই, ঋষি কপূর। তিনিও ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন।
কপূর পরিবারের সব প্রজন্মের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ঋতু। শাশুড়ি হিসেবে পুত্রবধূ শ্বেতারও খুব কাছের ছিলেন তিনি।