Kalikaprasad Bhattacharya

মেয়ে আশাবরীর বেড়ে ওঠা দেখতে দেখতে কালিকাপ্রসাদকে আরও কাছে পাই: ঋতচেতা

প্রসাদের জন্মদিনে আজও আমরা মিষ্টি খেয়েছি। আশাবরী ছবি এঁকেছে বাবার জন্মদিনে। আজ সন্ধেবেলা ভার্চুয়াল মাধ্যমে দোহারের অনুষ্ঠান হবে।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৩২
Share:

কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে ঋতচেতা।

শনিবার কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের ৫১ তম জন্মদিন। তাঁর স্ত্রী ঋতচেতা গোস্বামীর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যখন যোগাযোগ করে, তখন কালিকাপ্রসাদের বাড়িতে তাঁর জন্মদিনের মিষ্টি খাওয়া চলছে। ঋতচেতা বললেন, “দেখতে দেখতে মেয়েটা বড় হয়ে গেল। প্রসাদ খুব খুশি হত মেয়ে যখন নিজের হাতে ছবি এঁকে বা কার্ড তৈরি করে বাবাকে জন্মদিনে উপহার দিত। মেয়ের আঁকার শখ দেখে বাবা ঠিকই করে নিয়েছিল যে বড় হয়ে ও যদি ছবি আঁকা নিয়েই পড়াশোনা করতে চায়, তা হলে তাই করবে।”

হৈ হৈ করা মানুষ ছিলেন কালিকাপ্রসাদ। জন্মদিন বলে তাঁর মা বাড়িতে পায়েস আর ক্ষীর তৈরি করতেন। পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পায়েস বানানো হত সুগার ফ্রি দিয়ে। সেই স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঋতচেতা বললেন, “প্রসাদ বলত সুগার ফ্রি দেওয়া ওই পায়েসের বাটি শুধু আমার। তোমরা কেউ তার ভাগ পাবে না, আর আমি বলতাম ওই সুগার ফ্রি দেওয়া পায়েস কারও খাওয়ার ইচ্ছে নেই...।”

জন্মদিনে বাড়ি জুড়ে উৎসবের আমেজ। নতুন জামা পেলে সে দিনই পরে নিতেন কালিকাপ্রসাদ। যত ব্যস্ততাই থাক, নিয়মের হেরফের হত না। জন্মদিনে ঋতচেতার মা-বাবাকে প্রণাম করতে তিনি কোনও দিন ভুলে যাননি।

Advertisement

মেয়ে আশাবরীর সঙ্গে কালিকাপ্রসাদ এবং ঋতচেতা।

বদলে যায় সময়। অভ্যাস বদলায় না। মানুষ থেকে যায় আড়ালে। এ বছরও আশাবরী ছবি এঁকেছে বাবার জন্মদিনে। শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে 'দোহার'-এর অনুষ্ঠান হবে। গান হবে। ২০১৭ থেকেই ‘জন্মদিনে কালিকাপ্রসাদ’ অনুষ্ঠান করে 'দোহার'। নতুন গান তৈরি করা, পুরনো গান খোঁজা, লোকশিল্পকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া এবং প্রাচীন সঙ্গীত পদ্ধতিকে সমসাময়িক করে তোলার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন কালিকা। গান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঋতচেতা বললেন, “প্রসাদ আমাকে কত বার বলেছে পড়ানো ছেড়ে গানের মন দিতে। ওর জেদে আর আমার ভালবাসায় স্কুলের চাকরি তো ছাড়তেই গিয়েছিলাম কিন্তু...। স্কুলের চাকরি ছিল বলে বেঁচে গেলাম।”

জন্মদিনে ফিরে আসছে পুরনো কথা। মনে আসছে শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতনে একটি জমি কিনেছিলেন কালিকাপ্রসাদ। নিজের হাতেই এঁকেছিলেন বাড়ির নকশা। সেই বাড়ি নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে আলগোছে কথোপকথন মনে পড়ে গেল ঋতচেতার। বাড়ির নীচের তলায় এক বিশাল ঘরের ছবি দেখে ঋতচেতা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, “নিচের তলায় শুধু এত বড় একটা ঘর!”

কালিকা বলেছিলেন, “গান বাজনা হবে। সবাই আসবে। আড্ডা মারবে। চাইলে অনুষ্ঠানও হয়ে যেতে পারে।” ঋতচেতার অবিশ্বাস কমার চেয়ে আরও বেড়েছিল। “মানে নীচের তলায় কোনও শোওয়ার ঘর, নিদেনপক্ষে রান্নাঘর হবে না?”, প্রশ্ন করেছিলেন তিনি। কালিকাপ্রসাদ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, গানবাজনার ঘর বড় হতে হবে।

আলগোছে হেসে বললেন ঋতচেতা, “সাংগঠনিক ক্ষমতায় ও দক্ষ ছিল, কিন্তু সংসারের কিছু বুঝত না, বা বুঝতে চাইত না।”

কালিকাপ্রসাদ নেই, তা আজও ভাবতে পারেন না ঋতচেতা।


শান্তিনিকেতনের সেই বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কালিকাপ্রসাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নাম হয়েছে ‘কোমল ঋষভ’। পরবর্তী কালে যিনি বাড়ির নকশা করেছিলেন, তিনি নিচের তলায় শুধু একটা বড় ঘরই রাখলেন। কালিকার জয় হল। কলকাতার বাড়িও গানময়। মেয়ে বাবার গান গাইছে। মায়ের কাছে নিচ্ছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম। ঋতচেতা বললেন, ‘‘আমি হারমোনিয়াম নিয়ে বসি। মেয়েকে গান শেখাই। মেয়ে আবার নিজে পছন্দ করে গান শেখে। এই তো কিছু দিন আগে ভূপালি শেখাচ্ছিলাম। তার পর রবীন্দ্রনাথের ‘প্রচণ্ড গর্জনে’ গানটি গাইলাম। পাশাপাশি এক রাগের সুরটা ওকে বোঝাতে চাইছিলাম। ‘প্রচণ্ড গর্জনে’ শুনে বলল ‘এটা শিখব আমি’ ।”

কলকাতার বাড়ির নিচের তলায় স্টুডিয়ো হয়েছে এখন। দোহারের গান রেকর্ড করা হয়। অন্য শিল্পীরাও গান গাইতে আসেন। স্টুডিয়োর নাম রাখা হয়েছে, ‘প্রসাদ কহে’।

শুধু গান শেখাই নয়, আশাবরী তাঁর দাদা সৌম্যর সঙ্গে ইউটিউবে একটা গানও রেকর্ড করে ফেলেছে। বাবা লেখা এই গানের নাম ‘যা খুশি তা করো ইচ্ছে’।

Advertisement

মেয়ের মধ্যে বাবার কী কী গুণ দেখা দিচ্ছে? প্রশ্ন করতেই ঋতচেতা খানিক থামলেন। তার পর বললেন, “মেয়ের বড় হওয়ার মধ্যে আমি প্রসাদকে দেখি, প্রসাদকে পাই। কোথায় যেন অগোচরেই প্রসাদের প্রতিবিম্ব হয়ে উঠছে আশাবরী।”

সন্ধে নেমে আসছে। এ বার জন্মদিনে কেক কাটার পালা। কালিকাপ্রসাদ নেই, তা আজও ভাবতে পারেন না ঋতচেতা। তাঁর মনে হয় আগে যেমন কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় বাইরেই থাকতে হত কালিকাকে, তেমনই আজও গানের জন্যই বাড়ি থেকে বেশ দূরে আছেন। সন্ধের আলো জ্বলে ওঠে বাড়িতে। একটু পরে শুরু হবে দোহারের গান। তার আগেই নতুন জামা পরে মেয়ের সঙ্গে কেক কেটে ফেলবেন কালিকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement