গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ইরফানের গুণমুগ্ধ আমি। ব্যক্তিগত পরিচয়ের জায়গা থেকে বার বার মনে হয়েছে,অত বড় অভিনেতা, কিন্তু কথায় সেই অ্যাটিটিউড নেই। কান চলচ্চিত্র উৎসবেআমার ছবি নিয়ে যখন গিয়েছি, দেখেছি ‘লাঞ্চ বক্স’-এর জন্য ওঁকে মানুষ কী ভাবে সম্মান জানাচ্ছেন। ছবিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কেমন করে নিয়ে যেতে হয়, ইরফান দেখিয়েছিলেন। ওম পুরি, নাসিরুদ্দিন শাহ, ইরফান, এঁরা অভিনয়ের মাধ্যমে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। কারও সঙ্গে কারও তুলনা চলে না।কী খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা... একের পর এক মৃত্যু। ‘এক ডক্টর কি মত’-এর মতো ছোট ছবি থেকে তাঁর এই বিশ্বব্যাপী উত্থান বিশ্ব সিনেমায় আজীবন থেকে যাবে।
অনুপম রায়
বড্ড মনখারাপ হয়ে গেল। আর সকলের মতো আমিও ইরফানের গুণমুগ্ধ। ওম পুরি, নাসিরুদ্দিন শাহ, পরবর্তীকালে ইরফান, এক জন সাধারণ দর্শক হিসেবে মনে হয়, এই ধারায় ইরফান অভিনয়ের ক্রাফটটা আরও আধুনিক করলেন। না, এই সম্মানীয়দের কোনও নম্বর দেওয়ার স্পর্ধা আমার নেই। তবে কিছু স্মৃতি আছে আমার। সেগুলো আজ মনে পড়ছে। সুজিতদার অফিসে প্রথম দেখা। উনি ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে
এসেছিলেন। আলাপ হল। ভদ্র ব্যবহার। ‘পিকু’-তে কাজ করার সুযোগ এল। মনে হল ইরফান খান অভিনয় করবেন, ওঁর অভিনয় সব। আমার সামান্য মিউজিকের কাজ থাক। তাই ছিল। মুম্বইতে প্রিমিয়ার হল।ইরফান এলেন। ছবি দেখে সবাই খুশি। খোশমেজাজে রাতে আড্ডাও হয়েছিল। সেই আড্ডায় মজা করে বলে বসলেন, “পিকুতে আমার রোম্যান্টিক গান আছে। যেমন হিরোদের গান থাকে। ভাবা যায়! আমার এখন অচ্ছে দিন!” সব্বাই খুব হেসেছিলাম সে দিন। ‘পিকু’-তে অভিনয় দেখে ওঁর
অভিনয়ের প্রশংসা করতেই উনি আমার মিউজিক নিয়ে বলেছিলেন। ওঁর গানটা ভাল লেগেছিল। প্রিমিয়ারে ভাবছি, দীপিকার সঙ্গে যদি একটা সেলফি তোলা যায়।ইতস্তত করছি। দীপিকার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যাব, ওমা, হঠাৎ দেখি পেছন থেকে ইরফান এসে গেলেন। তিন জনে ছবি তুললাম।
ভাগ্যিশ! আজ ওই ছবি সবচেয়ে বড় স্মৃতি।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়
নাসিরুদ্দিন শাহ, আশা ভোঁসলে আর অল্প হলেও অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করা হয়ে গিয়েছে আমি মারা যাওয়ার আগেই। তেমনই হল না ঋতুদাকে অ্যাসিস্ট করা বা ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করা। বহু বার মিটিং হয়েছিল ‘হেমলক সোসাইটি’-র হিন্দি নিয়ে, কিন্তু ‘আনন্দ কর’ আর হল না। শরীর নিয়ে ওঁর যুদ্ধের সময়ের কথাগুলোই মনে রেখে দেব।
প্রসেনজিৎ
ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেতা যাঁকে আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের সঙ্গে তুলনা করা যেত। সিনেমায়নায়কের ধারাটাই পাল্টে দিলেন তিনি। ছোট ছোট চরিত্র করতেকরতে নায়কের ভাবনাটাই বদলে দিলেন তিনি। আগে একটা সময় বলতাম, মাল্টিপ্লেক্সের স্টার হল ইরফান। সেই কারণেই আজকের পরিচালকেরা বিভিন্ন অভিনেতাকে নিয়ে নায়ক করে ছবি করতে পারে। এর জন্য দায়ী ইরফান। এমন
বিপজ্জনক সময়ে এত তাড়াতাড়ি চলে গেল ভাবতেই পারিনি। ব্যক্তিগত ভাবে আমিআমার বন্ধুকে হারালাম। ওর শেষ ছবি দেখেছি। অসাধারণ কাজ। ভারতীয় সিনেমা ইরফানকে ভুলবে না।
মিমি চক্রবর্তী
ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল। আর এই ক্ষতি কেউ পূরণ করতে পারবে না। মুম্বইতে অতি অভিনয়ের ধারায় ইরফান সহজাত স্বাভাবিক আক্টিং নিয়ে এলেন। বলিউড সিনেমা অন্য ভাবে ছবি করতে শুরু করল। আমি খেয়াল করে দেখেছি, একটা লাইটের বিজ্ঞাপনেও ইরফান এত সহজ করে কথা বলত! বিজ্ঞাপনের অভিনয়ে যেলাউডনেস থাকে সেটাও ভেঙে দিয়েছিল ইরফান। খুব মন খারাপ। মনে হচ্ছে এই বছরটাই জীবন থেকে মুছে দিই।
যিশু সেনগুপ্ত
খুব খারাপ লাগছে। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ছিলেন। ‘পিকু’তে কাজ করতে গিয়ে একটা আত্মিক যোগাযোগ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কখনও মনে হয়নি হলিউডে কাজ করেছেন তিনি। ভীষণ অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন। সেটে আড্ডা দিতেন। মজা করতেন খুব।
পার্ণো মিত্র
‘ডুব’-এ একসঙ্গে কাজ করেছি। উনি এমন একজন বড় মাপের অভিনেতা যাঁকে দেখে কাজ শিখতে পেরেছি। কো-অ্যাক্টর হিসেবে ওঁর সত্যি তুলনা হয় না। অনেক মিস করব ওঁকে। উনি যেন ভাল থাকেন ওই দুনিয়ায়, এ টুকুই চাওয়া।
অঙ্কুশ হাজরা
আমার সঙ্গে সামনাসামনি কোনও দিন দেখা হয়নি। কিন্তু ওঁর খুব কাছের মানুষ যাঁদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ভাবে পরিচয় ছিল। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ ছিলেন উনি। কী বলব, জানি না। লকডাউনের আগে শেষ যে ছবি দেখেছি তা ‘আংরেজি মিডিয়াম’। তখনও কী ভাবতে পেরেছিলাম সেই ছবি ওঁর শেষ ছবি হতে চলেছে? মানুষটার মধ্যে আলাদাই একটা ক্যারিশমা ছিল। আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই।