দুই নারী, হাতে তরবারি— গল্পের মূল দুই সূত্রধর এসিপি সৌম্যা শুক্ল আর নেত্রা পাটিলের চরিত্র দুটোই মারকাটারি। কিন্তু টিপিক্যাল নারীকেন্দ্রিক গল্পের মতো এমপাওয়ারমেন্ট কিংবা ‘উওম্যান কার্ড’ খেলার বিশেষ চেষ্টা করা হয়নি এই সিরিজ়ে। বরং নিজের মতো করে নিজেরটা আদায় করে নেওয়ার স্মার্টনেস দেখিয়েছে এ গল্পের নায়িকারা। লারা দত্ত আর রিঙ্কু রাজগুরু তাঁদের ওয়েব ডেবিউ হিসেবে ‘হান্ড্রেড’ বেছে নিয়ে যে কোনও ভুল করেননি, তার প্রমাণ খোদ সিরিজ়টিই।
পুলিশ অফিসার সৌম্যা আর সরকারি চাকুরে নেত্রার ট্র্যাক সমান্তরালে চলতে শুরু করে। দু’জনের আচমকা দেখা হয়ে যায় সেই দিন, যে দিন নেত্রা (রিঙ্কু) জানতে পারে তার ব্রেন টিউমরের কথা। কর্কটরোগ আর মাত্র একশোটা দিন দিয়েছে তাকে জীবনে। এই একশো দিনের মধ্যে বেঁচে নিতে চাওয়া, আর তা করতে গিয়ে যাবতীয় গোলকধাঁধায় জড়িয়ে পড়ার সূত্রেই সিরিজ়ের নামকরণ ‘হান্ড্রেড’। নেত্রার পরিবারের তিনজন পুরুষই পরনির্ভরশীল। সে অর্থে তার বয়ফ্রেন্ডও। অন্য দিকে, এসিপি সৌম্যা তার পক্ষপাতদুষ্ট কাজের জায়গায় লড়ে যায় নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে। হাতে আর সময় নেই ভেবে বেপরোয়া হয়ে ওঠা নেত্রাকে ইনফর্মার হিসেবে কাজে লাগাতে শুরু করে সৌম্যা। নিজেকে প্রমাণ করতে বারবার ঝুঁকি নেয়, তার তদন্ত তার নিজের তদন্তই বুমেরাং হয়ে যায় কখনও, কিন্তু হাল ছাড়ে না। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকায় সৌম্যা। ‘জাজ করলো মুঝে, ঘণ্টা ফরক পড়তা হ্যায়’— এমন সংলাপে দর্শকের মন জিতে নেয় ‘দবং’ সৌম্যা। অন্য দিকে, ‘ডেয়ারিং’ কাজেকম্মে তাক লাগাতে থাকে নেত্রাও।
হান্ড্রেড
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: তাহের শাব্বির, আশুতোষ শাহ, রুচি নারাইন
অভিনয়: লারা, রিঙ্কু, কর্ণ, সুধাংশু, পরমিত, রাজীব,
মকরন্দ ৫.৫/১০
‘হান্ড্রেড’ আদতে ইচ্ছেপূরণের গল্প। এমন দু’জনের ইচ্ছেপূরণ, যাদের একজনের কিছুই হারানোর নেই, আর একজনের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। তবে এই বাকেট লিস্ট মেলাতে গিয়ে কখনও কখনও বাড়াবাড়িও করে ফেলেছেন চিত্রনাট্যকারেরা। অঙ্গ-পাচার কিংবা ড্রাগ ডিলারদের ডেরায় যে উপায়ে দুঃসাহসিক তদন্ত চালিয়ে বেরিয়ে এসেছে সৌম্যা, তা কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস্য। তেমনই, এত বড় প্রাণঘাতী অসুখের কথা জেনেও নেত্রার মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে একবারও কেন ফলো-আপ করায় না— সেই প্রশ্নও রয়ে যায়। প্রথম দু’-একটি এপিসোডে ধীর লয়ে গল্প শুরু হলেও মাঝে এবং শেষের দিকের পর্বগুলি গতি বাড়িয়ে দেয়। শেষেও রয়েছে পরবর্তী সিজ়নের আভাস।
আরও পড়ুন: মানবদরদি ইরফান নেই, স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচছে ‘হিরোর পাড়া’
অভিনেত্রী লারা দত্তকে বহু দিন পর এ রকম একটি চরিত্রে পাওয়াটা দর্শকেরই প্রাপ্তি। সেই সঙ্গে মন ভরিয়ে দিয়েছেন ‘সাইরাট’খ্যাত অভিনেত্রী রিঙ্কু রাজগুরুও। চিত্রনাট্য খানিকটা দায়সারা ফর্মুলা মেলানোর মতো করে হলেও এখনকার বেশির ভাগ ওয়েব কনটেন্টের মতোই চরিত্র-নির্বাচনে কোনও ফাঁকি রাখেননি ‘হান্ড্রেড’-এর নির্মাতারা। অ্যাসপায়ারিং ডিজে এবং সৌম্যার ইনফর্মার ম্যাডির চরিত্রে কর্ণ ওয়াহিকে যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনবদ্য। হিন্দি ডেলি সোপ যে অভিনয়ের কত কম সুযোগ দেয়, তা এই ধরনের সিরিজ়ের জোরালো পার্শ্বচরিত্ররা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। যে দুই পুরুষকে ক্রমাগত ডজ করতে করতে এগোয় সৌম্যা, সেই দুই চরিত্রে সুধাংশু পাণ্ডে এবং পরমিত শেঠিও যথাযথ। অসোলে, পেন্ডসে, মুলের মতো মরাঠি পুলিশ এবং রাজনীতিকদের টিপিক্যাল চরিত্রগুলি যেন জীবন থেকে তুলে আনা। তবে ‘ফোর মোর শটস প্লিজ়!’-এর দ্বিতীয় সিজ়নের পরে এই সিরিজ়েও রাজীব সিদ্ধার্থকে খানিক ম্যানারিজ়ম-দুষ্ট লাগল। আশা করা যায়, মকরন্দ দেশপাণ্ডে এবং রোহিণী হট্টংগড়ীর মতো প্রতিভাদের পরের সিজ়নে আরও একটু বেশি পাওয়া যাবে।
আগামী সিজ়নে সৌম্যা-নেত্রার যুগলবন্দি বদলে যেতে চলেছে টক্করে। শেষ এপিসোডটি শুরু করে দিয়ে গেল সেই প্রতীক্ষার।
আরও পড়ুন: রাজকে এত খুশি হতে আগে কখনও দেখিনি: শুভশ্রী