যখন আতঙ্কের আর এক নাম ‘চাইনিজ় ভাইরাস’ কিংবা ‘হিন্দি-চিনি’ সীমান্তের পরিস্থিতি যখন যুদ্ধকালীন, তখন এ দেশের মাটিতে এ দেশেরই কিছু নাগরিক আবার হয়তো ‘আউটসাইডার’ মনে করবেন নিজেদের। হয়তো তেমনটা ভাবতে বাধ্য করবেন তাঁদেরই কিছু সহ-নাগরিক। ‘ইন্ডিয়ান’ আর ‘নর্থ-ইস্ট’-দের চিরকালীন ঠোকাঠুকির মধ্যেই যে সহাবস্থান, সেখানে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের মানুষদের ঘর ভাড়া না পাওয়া, করোনার আবহে অসংখ্য নার্সের বাড়ি ফিরতে বাধ্য হওয়া— এ সব ঘটনা এত দিনে চোখ-সওয়া হয়ে গিয়েছে। বৈষম্যমূলক আচরণের খবর কাগজে বা সিনেমার পর্দায় দেখা সত্ত্বেও অজান্তে অংশ নিই কোণঠাসা করার অভ্যেসে। ‘মাইন্ডসেট’ এমনই বিষম বস্তু, যা গড়ে উঠতে যত সময় লাগে, ভাঙতে তার চেয়েও বেশি। তবু নির্ভেজাল সারল্যে বোনা একটি ফুড মুভি যখন সেই সমস্যাকে তুলে ধরার চেষ্টা করে, তার প্রশংসা প্রাপ্য বইকি।
দিল্লির কসমো-কালচারের এক কোণে জায়গা করে নেওয়া একঝাঁক উত্তর-পূর্বের তরুণ-তরুণীর গল্প। কেউ চাকরির চেষ্টায়, কেউ দোকান খুলেছে, কেউ আইএএস-এর পরীক্ষা দিতে এসেছে। নিত্যদিনের কথা শোনানোর লাইসেন্স-সমেত তাদের বাড়ি ভাড়া দিয়েছে এক প্রবীণা। সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ আর বিয়ের তারিখ একসঙ্গে পড়েছে মিনমের, নাগাল্যান্ড থেকে ভিডিয়ো কলে সারা হবে বিয়ে, প্রাচীন রীতি মেনে। মিনমের বন্ধুরা সারপ্রাইজ় পার্টির আয়োজন করতে চায়। কিন্তু কপালে হাত পড়ে স্পেশ্যাল ডিশ তৈরি করতে গিয়েই। স্মোকড পর্ক উইথ আখুনি রাঁধার গন্ধ যাতে পড়শির জানালায় না পৌঁছয়, তারই ফিকির বার করার চেষ্টা সারা ছবিতে। আর এর মধ্য দিয়েই ধরা হয়েছে দিল্লির বুকে তাদের ‘প্রান্তিক’ হয়ে থাকার স্ট্রাগল, হেনস্থা হওয়ার গ্লানি ও পাল্টা ঘুরে দাঁড়ানো, বন্ধুত্ব ও প্রেমের ঘেঁটে যাওয়া সমীকরণ। এবং এ সবের পাশাপাশি এক ডেকচি আখুনি নিয়ে তাদের ‘বিড়ম্বনা’!
সনাতন নাগা পাকপ্রণালীতে ফারমেন্টেড সয়াবিনের আখুনিতে ভেজানো স্মোকড পর্ক যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে আবশ্যিক। তা তৈরি করার জন্য কখনও গ্যারাজ, কখনও ছাদে রান্না চাপাতে হয় মিনমের বন্ধুদের। শুধু রান্নার গন্ধ, চেহারার বৈশিষ্ট্য কিংবা চরিত্রের প্রশ্ন নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান’দের কাছে অপদস্থ হওয়াই নয়, বন্ধুদলেও ‘নর্থ-ইস্ট’-এর সঙ্গে ‘নেপালি’র দূরত্ব তৈরি হয়। তবে এ ছবি দূরত্ব মেটানোর তাগিদ থেকে তৈরি, তাই শেষে বেনডাংকে ভুলে যাওয়া হিন্দি গানের কথা ধরিয়ে দেয় তার দিল্লিওয়ালা দোস্ত শিব, ‘নেপালি’ উপাসনাকে কাছে টেনে নেয় মিনম, চানবিরা।
আখুনি
পরিচালনা:
নিকোলাস খারকোনগর
অভিনয়: সায়নী গুপ্ত, লিন লাইশ্রাম, বিনয় পাঠক
৬.৫/১০
উপাসনার চরিত্রে সায়নী গুপ্তের অভিনয় ও সাবলীল সংলাপ প্রশংসনীয়। চানবির চরিত্রে লিন লাইশ্রাম, বাড়িওয়ালির ভূমিকায় ডলি আলুওয়ালিয়ার অভিনয়ও ভাল লাগে। তবে বিনয় পাঠক, আদিল হুসেনের মতো অভিনেতাকে প্রায় ব্যবহারই করা হয়নি ছবিতে। তাজদার জুনেদের সঙ্গীত কিছু দৃশ্যকে মনে রাখার মতো করে তুলেছে। সমাজের রূঢ় দিক, তার বৈপরীত্যে সংবেদনশীলতা, হাস্যরস, বন্ধুত্ব দিয়ে তৈরি ‘আখুনি’ পরিবেশনার গুণেই মনটা বেশ ভাল করে দেয়।