প্রথম ভারতীয় অরিজিনাল সিরিজ় ‘সেক্রেড গেমস’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন পারেনি। পারেনি ‘মির্জ়াপুর টু’। রাজ এবং ডিকের ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ সিজ়ন টু সেই ধারার ব্যতিক্রম। দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্টেও এই সিরিজ়ের সাফল্য ওটিটির মানচিত্রে নতুন কিছু সম্ভাবনা খুলে দিল।
যে কোনও সফল সিরিজ়ের প্রথম কাজ, আগামী সিজ়নের জন্য আগ্রহ তৈরি করা। কিন্তু আগ্রহ জিইয়ে রেখে দর্শকের পাহাড়-সমান প্রত্যাশার পারদ পূর্ণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। বিশেষত, স্পাই-থ্রিলারের মতো ওটিটির অন্যতম পছন্দের জ়ঁরে দেশি-বিদেশি নানা সিরিজ় ছক্কা হাঁকিয়েই চলেছে। সেখানে দর্শককে ‘বিঞ্জ ওয়াচ’ করতে বাধ্য করা নতুন সিজ়নের প্রথম সাফল্য। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর সিজ়ন টু স্ট্যান্ড-অ্যালোন হিসেবেও বিঞ্জ ওয়াচের যোগ্য। আর যাঁদের প্রথম সিজ়ন দেখা, তাঁরা অবশ্যই চেনা চরিত্রগুলির সঙ্গে একাত্মবোধ করবেন।
প্রথম সিজ়নের শেষে আলগা সুতোগুলো কী ভাবে মিলবে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। কারণ দ্বিতীয় সিজ়নের ট্রেলারে তার আভাস ছিল না। আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে উত্তর শ্রীলঙ্কায় তামিল উগ্রপন্থীদের সংগ্রামের বিষয়টি যোগ করে নতুন সিজ়নের পটভূমি তৈরি করা হয়েছে। কে সংগ্রামী আর কে-ই বা জেহাদি, ঠিক করে দেয় রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এনআইএ-র আন্ডারকভার এজেন্ট শ্রীকান্ত তিওয়ারির (মনোজ বাজপেয়ী) মুখে শোনা যায় এই সংলাপ। সিরিজ়ে সরাসরি বলা না হলেও, তামিল সংগঠনটির সঙ্গে সত্তরের দশকের শেষে গড়ে ওঠা লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম, সংক্ষেপে এলটিটিই-র সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর নয়। তাদের মোডাস অপারেন্ডির আদলেই তৈরি করা হয়েছে সিরিজ়ের ক্লাইম্যাক্স। জন্ম নিয়েছে শ্রীকান্তের নেমেসিস রাজি (সমান্থা অক্কিনেনী)।
নতুন সিজ়নের মুক্তির আগেই তা নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে সরব হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। এলটিটিই-র সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও অনেক জল গড়িয়েছে। সে ইতিহাস কখনও বিতর্ক বহির্ভূত ছিল না। বিশেষত ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর হত্যার পিছনেও এই সংগঠন দায়ী ছিল। কিন্তু দক্ষিণের কিছু দ্বন্দ্বকামী মানুষ এখনও অনুধাবন করেননি যে, এই সিরিজ় বলিউডের ক্যানভাসে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির মুখ কতটা উজ্জ্বল করেছে।
দ্য ফ্যামিলি ম্যান (সিজ়ন টু)
পরিচালনা: রাজ-ডিকে, সুপর্ণ বর্মা
অভিনয়: মনোজ, সমান্থা, প্রিয়মণি, শারিব, অশ্লেষা, সীমা
৭.৫/১০
শ্রীকান্তের চরিত্রে মনোজ অসাধারণ। তাঁর আবেগ, অপরাধবোধ, সূক্ষ্ম হিউমর, অ্যাকশন বারবার বুঝিয়ে দেয়, কেন তিনি দ্য ফ্যামিলি ম্যান। কিন্তু এই সিরিজ়কে যে শিল্পী অন্য মাত্রা দিয়েছেন, তিনি সমান্থা। তামিল ও তেলুগু ছবির জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে সম্ভবত এমন চরিত্রে আগে দেখা যায়নি। প্রথম হিন্দি সিরিজ়ে তিনি উৎকর্ষের নতুন মাপকাঠি তৈরি করেছেন। গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষিত ইলম সংগ্রামীর চরিত্রে সমান্থার দেহসৌষ্ঠব, শরীরী ভাষা এবং চাহনি দেখার মতো। সিরিজ়ে তাঁর সংলাপ কম। হিন্দিতেও একটা টান রাখা হয়েছে। সূক্ষ্মতা ও পরিমিতিবোধের মধ্য দিয়ে চরিত্রটিকে তিনি অনন্য করে তুলেছেন।
ভাল অভিনয় সিরিজ়কে আকর্ষক করে তোলে। কিন্তু ন’টি পর্বে দর্শকের ধৈর্য ধরে রাখার জন্য গল্পের বুননের কোনও বিকল্প নেই। এই সিজ়নে মুহুর্মুহু চমক নেই, নেই ঘটনার ঘনঘটা। শেষটাও অনুমেয়। কিন্তু রাজ এবং ডিকে গল্পের মতো করে গল্প বলতে পারেন। আগের সিজ়নের বৈশিষ্ট্যগুলিকে যথাসম্ভব রেখে, তাঁরা গল্পটিকে এগিয়েছেন। কিছু পুরনো অনুষঙ্গও ফিরে আসে। এই সিজ়নে তাঁদের সঙ্গে পাঁচটি পর্ব পরিচালনা করেছেন সুপর্ণ বর্মা।
এই সিজ়নের একটি বড় অংশের কথোপকথন তামিল ভাষায়। তবে সাবটাইটেল-এর যুগে তা অন্তরায় নয়। একগুচ্ছ নতুন চরিত্র রয়েছে, তবে সমান্থা ছাড়া নজর কেড়েছেন রবীন্দ্র বিজয় (মুত্থু) এবং দেবদর্শিনী (উমায়াল)। শ্রীকান্ত ও সুচির (প্রিয়মণি) ট্র্যাক এ বার ঠিক জমেনি। কারণ প্রথম সিজ়নের শেষে তাদের সম্পর্ক যেখানে ছিল, দ্বিতীয় সিজ়নের শেষেও তাতে খুব একটা বদল নেই। তাদের মেয়ে ধৃতি (অশ্লেষা ঠাকুর) বরং লাইমলাইট পেয়েছে। শ্রীকান্তের বন্ধু-সহকর্মী তলপড়ের চরিত্রে শারিব হাশমি জবরদস্ত। তাদের একসঙ্গে বড়াপাও খাওয়া মিস করবেন দর্শক। পিএম বসুর চরিত্রে সীমা বিশ্বাস ভাল।
খামতি বলতে, সমান্থার মেকআপ গোটা সিরিজ়ে সাযুজ্যপূর্ণ ছিল না। যে ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গল্প এগিয়েছে, তা যে খুব নাড়িয়ে দেওয়ার মতো তেমনও নয়। আবহসঙ্গীতের ব্যবহার বোধহয় আরও একটু করা যেত। এই সিরিজ়ের একটি গুণ, প্রথম পর্ব থেকে গল্পের কেন্দ্রস্থলে ঢুকে পড়া। শ্রীকান্তের কর্পোরেট বস যে মন্ত্রই শেখাক, মিনিমাম অতিরঞ্জন এবং ম্যাক্সিমাম আনন্দই এই সিজ়নের প্রাপ্তি।