Netflix

নারী ক্ষমতায়নের ভুল গলিতে ইমতিয়াজ়

পতিতালয়ের কানাগলি থেকে শুরু প্রথম দৃশ্য।

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২০ ০০:৪০
Share:

শি (ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: অবিনাশ দাস ও আরিফ আলি
ক্রিয়েশন: ইমতিয়াজ় আলি
অভিনয়: অদিতি, বিজয়
৫/১০

Advertisement

ড্রাগ, সেক্স আর উওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট— ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরুর জন্য চেনা পপকর্ন রোম্যান্স ছেড়ে পরিচালক ইমতিয়াজ় আলি বেছে নিয়েছিলেন এই টানটান কম্বিনেশন, যা সাধারণত ফেল করার কথা নয়। এমন প্রেক্ষাপট চট করে দর্শকের আগ্রহ তৈরি করে। তবে এ বারেও হতাশ করলেন ইমতিয়াজ়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাঁর প্রথম ক্রিয়েশন ‘শি’ গোড়ায় আগ্রহ তৈরি করলেও শেষ অবধি তা ধরে রাখতে পারল না। তবে গতি মন্থর নয় বলেই সাতটি এপিসোড টানা দেখে ফেলা যায়। ক্রিয়েটর ইমতিয়াজ় হলেও সিরিজ়টি পরিচালনা করেছেন ‘আনারকলি অফ আরা’-খ্যাত অবিনাশ দাস এবং আরিফ আলি। এপিসোড যতই এগোয়, ড্রাগ র‌্যাকেট ধরে ফেলার চেয়েও এ কাহিনিতে বড় হয়ে ওঠে এক নারীর নিজেকে চিনতে পারা। আত্মউন্মেষ। তবে এই চেনার রাস্তাগুলো ঠিকঠাক তারে বাঁধা নয় বলেই বোধহয় ‘শি’ ছাপিয়ে যেতে পারে না গতানুগতিকতাকে।

পতিতালয়ের কানাগলি থেকে শুরু প্রথম দৃশ্য। এক সাধারণ মহিলা পুলিশ কনস্টেবলকে আন্ডারকভার অপারেশনের মুখ বানানো হয়, যার দায়িত্ব দেহপসারিণীর বেশে ড্রাগচক্রের এক মূল চাঁইকে আইডেন্টিফাই করা। গল্প এগোতেই স্পষ্ট হতে থাকে, ভূমিকে (অদিতি পোহানকর) ঘিরেই চিত্রনাট্য বুনেছেন ইমতিয়াজ়। বাড়িতে অসুস্থ মা, বখে যাওয়া বোন, ডিভোর্সের মামলা লড়ে ক্লান্ত ভূমিকে কাজের জায়গাতেও কেউ ‘মেয়ে’ বলে মনে করে না। এমনকি তার স্বামীও না। এই ‘ডরম্যান্ট’ সেক্সুয়ালিটিই কী করে হাতিয়ার হয়ে ওঠে তার, তা নিয়েই কাহিনি। এ সিরিজ়ের আর এক স্তম্ভ ড্রাগ এজেন্ট সস্যা (বিজয় বর্মা)। এই চরিত্রটি না থাকলে পরের এপিসোডগুলোয় এগোনো মুশকিল হত। ‘গাল্লি বয়’তে যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয়, সস্যা যেন তারই এক্সটেনশন। তাঁর মুখের প্রতিটি রেখা, চাহনি স্পষ্ট করে দেয়, তিনি কোন মাপের অভিনেতা। শোয়ের প্রথম ভাগ প্রায় একার কাঁধেই টেনে নিয়ে যান বিজয়। বিশেষ করে ইন্টারোগেশন চেম্বারে ভূমি এবং ইন্টেলিজেন্স অফিসার ফার্নান্ডেজ়ের (বিশ্বাস কিনি) সঙ্গে সস্যার জেরার দৃশ্যগুলিতে। অমিত রায়ের ঝকঝকে সিনেম্যাটোগ্রাফি, ধীরে বুনোটে বাঁধা থ্রিল, ড্রামা, সাসপেন্স... সব মিলিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত সিরিজ়টি ভালই এগোচ্ছিল। চোর-পুলিশ খেলার সমান্তরালে না এগিয়ে ভূমির কাহিনিই যখন মুখ্য হয়ে উঠল, তখন থেকেই গন্ডগোল শুরু। কী করে একজন সাধারণ, নিম্নপদস্থ কনস্টেবলকে কোনও ট্রেনিং ছাড়া প্রথমেই বিপজ্জনক আন্ডারকভার অপারেশনে ঠেলে দেওয়া হল? চাইলে এ মেয়ে অনেক কিছুই পারে, এমনটা ধরে নিয়েই বার বার ঝুঁকি নেওয়া যায় কি? ভূমির ‘কিলার ইনস্টিংট’-এর প্র্যাকটিকাল পরীক্ষাটিও অবাস্তব। ভূমি তার লাস্যে যখনই কোণঠাসা করতে চেয়েছে উল্টোদিকের পুরুষটিকে, প্রত্যেক বারই আশ্চর্য ভাবে অতিরিক্ত সময় পেয়েছে। বিপদের মুখ থেকে একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে বারেবারে। প্রত্যেক বার এমন ‘মিরাকল’ হতে পারে? ভূমির মুখের দিকে তাকিয়ে সস্যা একের পর এক ইনফরমেশন অকাতরে বিলিয়ে দেয় পুলিশের সামনে। শুধুমাত্র জেন্ডার পলিটিক্সের সামনে এত বড় ড্রাগ র‌্যাকেট ধ্বসে পড়ার মুখে, এ-ও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়! তদন্তের পাশাপাশি ভূমি তার গ্রুমড অবতার ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতেও। সাধারণ মেয়ে, যাকে কেউ নজরই করত না এতদিন, সে নিজের দিকে নজর কাড়তে শিখে যায়। শেষ পর্যন্ত এই হাতিয়ারকে অস্ত্র করেই সে পৌঁছে যায় আসল লোক নায়কের (কিশোর কুমার জি) কাছে। যে ড্রাগলর্ডকে এখানে চার্লস শোভরাজ-মার্কা একটি ফ্ল্যাট ক্যাপ পরানো হয়েছে! শেষ দৃশ্যের মোচড়টির জন্য কমবেশি আধঘণ্টার সাতটি এপিসোড দেখার ধৈর্য ধরতে হবে। তবে বড় পর্দার পরে এ বার ওয়েবেও যে ভাবে হতাশ করছেন ইমতিয়াজ়, তাতে মনে হচ্ছে তিনি বোধহয় নিজের হাতে করেই তাঁর ভক্ত-সংখ্যা কমাতে উদ্যত হয়েছেন!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement