অতিমারি নতুন সৃষ্টির অনুঘটক। অ্যামাজ়ন প্রাইমের ‘আনপজ়ড’-এর পরে নেটফ্লিক্সের নিবেদন তামিল অ্যান্থলজি সিরিজ় ‘নবরস’। তামিল ইন্ডাস্ট্রির অতিমারি-পীড়িত প্রান্তিক শিল্পীদের সাহায্যের জন্য মণি রত্নম এবং জয়েন্দ্র পঞ্চপকেশন সিরিজ়টির প্রযোজনা করেছেন। একত্রিত হয়েছেন দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির তারকারা। রেবতী, প্রকাশ রাজের পাশাপাশি তামিল সুপারস্টার সূর্য, মালয়ালি অভিনেত্রী পার্বতী স্বমহিমায় বিরাজমান। কমবেশি তিরিশ মিনিটের ন’টি গল্পে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোধ, ভয়, করুণা, প্রেমের মতো সহজাত আবেগ। আছে শান্তির বার্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, জাগতিক যুক্তি-বুদ্ধির ঊর্ধ্বে পরাবাস্তবকে ছুঁয়ে দেখার উদ্যম। ন’টি ভিন্ন রসের গল্পগুলির মধ্যে চারটি ছাড়া বাকিগুলো যেন জমাট বাঁধেনি। ছোট গল্পের নির্যাস ধরা থাকে ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’-এর মন্ত্রে। কিন্তু বেশিরভাগ গল্পের ক্ষেত্রে রেশ ধরে রাখার বিষয়টি ফুটে ওঠেনি।
অ্যান্থলজি শুরু হয় বিজয় নাম্বিয়ার পরিচালিত ‘ইধিরি’ দিয়ে। মুখ্য চরিত্রে রেবতী, প্রকাশ রাজ এবং বিজয় সেতুপতি। মণি রত্নমের লেখা এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে পাপ-পুণ্য, অপরাধ-শাস্তি, হিংসা-ক্ষমার মতো গভীর ধারণাগুলির দ্বৈরথ। সাবিত্রীর (রেবতী) স্বামীকে খুন করে ধীনা (বিজয়)। পরে সাবিত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে আসে সে। কিন্তু খুনের নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি দায় কার? ছবির প্রথম দৃশ্যে স্ক্রিন ভাগাভাগি করে দেখানো হয় সাবিত্রী এবং ধীনাকে। দৃশ্যটির তাৎপর্য বোঝা যায় গল্পের শেষ দৃশ্যে। ভাবনা, রূপায়ণের জন্য এগিয়ে থাকবে ছবিটি।
এই সিরিজ়ের তৃতীয় গল্প ‘প্রজেক্ট অগ্নি’তে অভিনয় করেছেন অরবিন্দ স্বামী। পরিচালক কার্তিক নরেন। টাইম ট্রাভেল, অবচেতন মনের বাস্তব রূপ—ক্রিস্টোফার নোলানের প্রিয় বিষয় এই ছবির মুখ্য রস। ছবিতে চরিত্রদের নাম বিষ্ণু (অরবিন্দ), কৃষ্ণ (প্রসন্ন)। ভারতীয় পুরাণের চিন্তাভাবনা এবং সমসময়ের পপুলার কালচারকে মেশাতে চেয়েছেন পরিচালক। ছবির শুরুটা জমাটি হলেও, শেষটা দাগ কাটে না।
অরবিন্দ স্বামী পরিচালিত ‘রৌদ্রম’ ছবিটি অভিনেতার জন্য নতুন সাফল্যের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ছবি হিসেবেও বেশ ভাল। বিষয়টি চেনা। তবে যে ভাবে শেষ দৃশ্যে ‘রৌদ্রম’ (রাগ) আবেগটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কাহিনির অন্তর্নিহিত দু’টি গল্পের টাইমলাইনকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা বাহবার যোগ্য। অভিনয় করেছেন শ্রীরাম, ঋত্বিকার মতো স্বল্প পরিচিত অভিনেতারা।
রথীন্দ্রন আর প্রসাদ পরিচালিত ‘ইনমাই’ ছবির মুখ্য চরিত্রে পার্বতী এবং সিদ্ধার্থ। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য গল্পের ত্রুটি উপেক্ষা করা যায়। দুই অভিনেতাই তাঁদের দিক থেকে চোখ সরাতে দেন না দর্শককে। মুসলিম ভাবাবেগ, জিনের মতো লোকগাথাকে কেন্দ্র করে ‘ভয়’ আবেগের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গল্পে।
‘সামার অব নাইন্টি টু’ ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে যোগী বাবু। প্রিয়দর্শন পরিচালিত গল্পটি সিরিজ়ের বাকি গল্পগুলির চেয়ে একেবারে আলাদা। ‘মালগুড়ি ডেজ়’-এর মতো হাস্যরস, ফেলে আসা সময়কে ছুঁয়ে দেখার প্রচেষ্টা রয়েছে। যোগীবাবু, রম্যা নম্বীসানের জন্য উপভোগ্য ছবিটি।
সিরিজ়ের শেষ ছবি ‘গিটার কম্বি মেলে নিন্দ্রু’। গৌতম বসুদেব মেনন পরিচালিত গল্পের মুখ্য চরিত্রে সূর্য এবং প্রজ্ঞা রোজ় মার্টিন। গল্পের রস ‘শৃঙ্গার’ অর্থাৎ প্রেম। গিটারের ছন্দে এবং অসম বয়সের প্রেমের রঙে গল্পটি ভালই ছিল। কিন্তু গোটা ছবিজুড়ে শুধুই সংলাপ, যা ক্লান্তিকর।
এ ছাড়া বসন্ত এস সাই পরিচালিত ‘পায়েসম’ ছবিটি সম্ভাবনাময় প্লট নষ্ট করেছে। কার্তিক সুব্বারাজ পরিচালিত ‘পিস’ মানবতার বার্তা দিলেও, কোথাও যেন ছন্দচ্যুত হয়েছে। সর্জুনের ‘থুনিন্থা পিন’ গল্পটি একেবারেই দাগ কাটে না।
অ্যান্থলজি গল্প নেটফ্লিক্সের এখন প্রথম পছন্দ। তবে হিন্দি হোক বা তামিল, তিরিশ মিনিটের গল্পে দর্শককে বুঁদ করতে এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি ছবিকরিয়েদের।