Webseries

আলো আঁধারির নাগরদোলায়...

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০১:২৬
Share:

‘নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু...’ ওয়েব সিরিজ় দেখতে গিয়ে একশো বছরেরও বেশি আগে লেখা একটা গান যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। তবে তার সঙ্গে মাথার মধ্যে চলতে থাকা ‘তাতা থৈথৈ’ থেকে বেরোনো যাচ্ছে না কিছুতেই। জার্মান ওয়েব সিরিজ় ‘ডার্ক’ জুড়ে টাইম অ্যান্ড স্পেসের আজব খেলা। সাম্প্রতিক কালের পরিচালকদের মধ্যে ক্রিস্টোফার নোলান এ খেলায় সিদ্ধ। কিন্তু তার ছবিও যেন ‘ফেল’ হয়ে যাচ্ছে ‘ডার্ক’-এর ক্রিয়েটর বারান বো ওডার-ইয়ানসে ফ্রিসের জোড়াফলার কাছে।

Advertisement

আপনার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আপনার প্রবীণ বয়স, নিজের মাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন অন্য শতাব্দীর কেউ... হিসেবে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! ‘ডার্ক’-এর তিনটে সিজ়ন জুড়েই এই খেলা চলতে থাকে। জার্মানির ছোট্ট শহর ওয়েনডেনের চারটে পরিবারের মধ্যে ঘুরতে থাকে গল্প। শহরের বৈশিষ্ট্য বলতে, একটা গুহা আর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, যার গুরুত্ব কোনও চরিত্রের চেয়ে কম নয়। কাহিনি শুরু হয়েছিল মিকেল নিয়েলসনের হারিয়ে যাওয়া দিয়ে। সে রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে চরিত্রেরা পাড়ি দেয় অন্য সময়ে, অন্য জগতে। সেই প্যারালাল ইউনির্ভাস আবার আবর্তিত হচ্ছে আর এক রহস্যের অনুসন্ধানে। প্রথম থেকে তৃতীয় সিজ়নের মাঝে জোনাস (লুই হফম্যান), মার্থা (লিসা ভিকারি) হানা (মায়া শুনা), উলরিখ (অলিভার মাসুচি) চরিত্রের ডায়মেনশনও বদলাতে থাকে।

টাইম অ্যান্ড স্পেসের নাগরদোলার আবর্তে সৃষ্টির আদি রহস্যের সূত্র উন্মোচিত হতে থাকে। অ্যাডাম আর ইভ, তারা প্রেমিক-প্রেমিকা না কি প্রতিপক্ষ? এরা সৃষ্টির মূল না কি আলো-আঁধার, শুভ-অশুভের ধারক-বাহক? প্রেম-পরকীয়া, বন্ধুত্ব, প্রতিহিংসা, সন্তানের জন্য আকুতি— মানব সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিকগুলোর সঙ্গে ফি‌জ়িক্সের জটিল সমীকরণকে মিলিয়েছেন পরিচালকদ্বয়। প্রাথমিক ভাবে ২০১৯, ১৯৮৬ এবং ১৯৫৩ এই টাইমফ্রেমে গল্প চলছিল। সিরিজ় যত এগোয় বদলাতে থাকে সময়, জুড়ে যায় নতুন দুনিয়া। এক দুনিয়া থেকে অন্য দুনিয়ায় চরিত্রদের অনায়াস বিচরণে ঘোর লাগে। প্রথম সিজ়নের চেয়ে দ্বিতীয় সিজ়নে গল্প এক বছর এগিয়ে যায়। তার সঙ্গে জুড়ে যায় ২০৫৩ এবং ১৯২১ সালের কিছু ঘটনা। তৃতীয় সিজ়নেও একই ভাবে মূল কাহিনির সঙ্গে অন্য যুগের রেফারেন্স চলে আসে। প্রথম সিজ়ন দেখার পরে চরিত্রগুলোকে সাজিয়ে যদি একটা ফ্যামিলি ট্রি করা হয়, দ্বিতীয়, তৃতীয় সিজ়নে তা বদলে যায়। সময় আর শতাব্দীর নিরিখে পাল্টে যেতে থাকে চরিত্রদের সমীকরণ।

Advertisement

ডার্ক- সিজ়ন থ্রি(ওয়েব সিরিজ়)
ক্রিয়েটর: বারান বো ওডার, ইয়ানসে ফ্রিসের
অভিনয়: লুই হফম্যান, লিসা ভিকারি, মায়া শুনা,
অলিভার মাসুচি
৭.৫/১০

প্রতিটি পর্যায়েই ঘটনা পরম্পরার সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক ডিটেল ছুঁয়ে যাওয়া আছে। তা সে সিক মুন্ডার মতো কট্টরপন্থীদের উল্লেখই হোক বা প্রথম-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রেফারেন্স। ২০৫০ সালের অংশ যখন দেখানো হচ্ছে, তখনকার পরিবেশে খটকা লাগে। অতীতে যে জায়গাটা সবুজে ভরা ছিল, তা মরুভূমিতে পরিণত। এটাই কি তা হলে আগামী প্রজন্মের ভবিতব্য?

সিরিজ় দেখতে দেখতে অ্যাড্রিনালিন রাশ বেড়ে যাওয়ার অনেকটা দায় এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িকের। প্লটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেম্যাটোগ্রাফি, আর্ট ডিরেকশন ভাবনার গভীরতা বোঝায়। তিনটে সিজ়ন জুড়ে দর্শকের বোধ, বুদ্ধি নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন নির্মাতারা। যেই মনে হবে সুতোটা ধরে ফেললেন তখনই আবার গিঁট পড়ে যাচ্ছে। প্রথম সিজ়নের আগ্রহ দ্বিতীয়তে কনফিউশনে পরিণত হয়। শেষ সিজ়নে মীমাংসা হলেও, মাঝের কিছু এপিসোড ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। কারণ সময় যত গড়িয়েছে চরিত্রের সংখ্যা বেড়েছে, তাদের ডায়মেনশন বদলেছে। অতিরিক্ত জটিলতা সৃষ্টির কি খুব প্রয়োজন ছিল? শেষটা দেখার পর অনেক অংশ অবান্তর মনে হয়।

‘ডার্ক’কে কেন সেরা সাই-ফাই ড্রামা বলা হচ্ছে, তা বুঝতে গেলে সিরিজ়ের দর্শনটা বুঝতে হবে। ‘যতবার তুমি জননী হয়েছ, ততবার আমি পিতা/ কত সন্তান জ্বালালো প্রেয়সী তোমার আমার চিতা...’ অ্যাডাম আর ইভ বারেবারে ফিরে এসেছে, ফিরে এসেছে জোনাস আর মার্থাও। বদলে গিয়েছে সময় আর পারিপার্শ্বিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement