Sesh Pata Movie Review

এই প্রসেনজিৎকে চেনা দায়! কেমন হল অতনু ঘোষের ছবি ‘শেষ পাতা’? জানাচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন

‘আরো এক পৃথিবী’র পর দর্শকের জন্য বাংলা নববর্ষে অতনু ঘোষের উপহার ‘শেষ পাতা’। ছবির মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:১৭
Share:

‘শেষ পাতা’ ছবির অন্যতম চমক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ঋণ। শুধু টাকার মানদণ্ডে নয়, জন্ম-মৃত্যুর মাঝে মানুষ অন্যের থেকে বিভিন্ন ভাবে ঋণ নেয়। ঋণী হয়ে যায়। কিন্তু জীবনের সময়কাল শেষ হওয়ার আগে সেই ঋণ কি সে পরিশোধ করে যেতে পারে? ‘শেষ পাতা’ ছবিতে প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক অতনু ঘোষ।

Advertisement

সাধারণত অতনুর ছবিতে চরিত্রের আধিক্য থাকে না। কিন্তু সেই কতিপয় চরিত্রই এক বৃহৎ সমাজের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। স্বল্প পরিসরে গল্পটা একটু ধরিয়ে দেওয়া যাক। ছবির কেন্দ্র রয়েছে এক সময়ের ডাকসাইটে লেখক বাল্মীকি (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। জীবন সায়াহ্নে সে নিঃসঙ্গতার স্বীকার। তার অভিনেত্রী স্ত্রীকে কারা যেন খুন করে নগ্ন অবস্থায় ময়দানে ফেলে রেখে গিয়েছিল। বাল্মীকির অতীতের অন্ধকারতম দিকটিই বই আকারে ছাপিয়ে বাজারে ছড়িয়ে দিতে চায় প্রকাশক। এ দিকে বাল্মীকির ‘রাইটার্স ব্লক’-এর অন্যতম কারণ তার প্রতি সমাজের তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি। অগ্রিম বাবদ বাল্মীকির নেওয়া পারিশ্রমিক উদ্ধারে প্রকাশক এক বিচিত্র পথ বেছে নেয়। তার পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হয় লোন রিকভারি এজেন্ট শৌনককে (বিক্রম চট্টোপাধ্যায়)।

গার্গী রায়চৌধুরীর মায়াবী অভিনয় ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

বাল্মীকির চরিত্রে এই ছবির সবচেয়ে বড় চমক প্রসেনজিৎ। বার বার নিজেকে ভেঙে নতুন করে চমকে দিতে তিনি সিদ্ধহস্ত। সাম্প্রতিক ‘জুবিলি’র শ্রীকান্ত রায়ের পাশে এই ছবির বাল্মীকি— অভিনেতা হিসাবে দুই মেরুতে যে তাঁর অবাধ যাতায়াত, তা আরও এক বার প্রমাণ করলেন প্রসেনজিৎ। মেধার চরিত্রে গার্গী রায়চৌধুরীর মায়াবী অভিনয় ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনের শূন্যতা এবং বাল্মীকিকে আঁকড়ে ধরার ইচ্ছার আগুনে পুড়তে থাকা চরিত্রটিকে যথার্থ ফুটিয়ে তুলেছেন গার্গী। বাংলা সিরিয়াল এবং প্রথাগত ছবির বাইরে বিক্রমকেও নতুন ভাবে হাজির করেছে এই ছবি। তবে সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো চরিত্রটির রূপটানে আরও একটু যত্ন নেওয়া যেত। শৌনকের প্রেমিকার চরিত্রে রায়তি ভট্টাচার্যের অভিনয় সাবলীল।

Advertisement

বাংলা সিরিয়ালের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে বিক্রমকেও নতুন ভাবে হাজির করেছে এই ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

ছবি ঘোষণার পর থেকেই ‘শেষ পাতা’য় প্রসেনজিতের লুক নিয়ে কৌতূহল দানা বেঁধেছিল। ছবি জুড়ে প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু বাল্মীকিকে প্রসেনজিতের থেকে আলাদা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গীত ছবির নির্যাসকে সার্থক ভাবে ধরে রেখেছে। সৌমিক হালদারের ক্যামেরা বৃষ্টিভেজা কলকাতা ময়দান এবং শহরের অলিগলিতে খুব সুন্দর কিছু দৃশ্য ধরেছে। বিশেষ করে বহুতলের ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে একাকী বাল্মীকি— দৃশ্যটি তো ছবির পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।

ছবির শুরু দিকে একটি দৃশ্যে এক প্রকাশনা সংস্থার কর্মী এবং এক লোন রিকভারি এজেন্টের কথোপকথন মনে করিয়ে দেয় বতর্মান সমাজের ইঁদুরদৌড়কে। সে বুঝিয়ে দেয়, কী ভাবে দৈনন্দিন জীবনের শিরা-উপশিরায় ঢুকে পড়েছে ইএমআই! ঋণখেলাপি এবং পাওনাদারের লুকোচুরি এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ মোটিফ হলেও তা যেন নাগরিক জীবনের ক্রমবর্ধমান উচ্ছাকাঙ্ক্ষার শেষ পাতার দিকেই নির্দেশ করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement