‘জুবিলি’-তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের ‘জুবিলি’ রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে চারদিকে। চল্লিশের দশকের শেষের দিকে হিন্দি ছবির গল্প ওটিটি-তে সাজিয়েছেন পরিচালক। বম্বে টকিজের গল্প এবং অশোক কুমারের উত্থানের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায় এই ওয়েব সিরিজ়ে। অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়োজ়ে প্রথম পাঁচটি পর্ব মুক্তি পাওয়ার পর থেকে নড়চড়ে বসেছে গোটা বলিউড। ওটিটি-তে এত বড় পরিসরে কাজ এর আগে দেখা যায়নি। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণালি ইতিহাস সযত্নে তুলে ধরেছেন বিক্রমাদিত্য এবং সৌমিক সেন। এই সিরিজ়ে অন্যতম মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রথম দিন থেকেই শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে যাচ্ছে তাঁর ফোন। দর্শক-সমালোচকদের মনে ধরেছে এই সিরিজ়। স্বাভাবিক ভাবেই আপ্লুত প্রসেনজিৎ।
ওটিটি-তে এটাই প্রথম কাজ প্রসেনজিতের। এর আগেও বহু ওয়েব সিরিজ়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। হিন্দি-বাংলা দুইয়েরই। কিন্তু সেগুলি তেমন পছন্দ হয়নি। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন সঠিক সময়ের। সবুরে যে মেওয়া ফলেছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। হাসিমুখে প্রসেনজিৎ বললেন, ‘‘আমি সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) হাত ধরে ‘অটোগ্রাফ’ দিয়ে মাল্টিপ্লেক্সে ঢুকেছিলাম। সে বছর প্রচণ্ড হিট হয়েছিল। তার পর এখন জুবিলি দিয়ে আমি ওটিটি-র যাত্রা শুরু করলাম। প্রথম কাজই এত ভালবাসা পাচ্ছে দর্শকের। এটা মায়ের আর ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া আর কী বলুন তো!’’
‘জুবিলি’-র একটি দৃশ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
অতীতের হিন্দি ছবি এবং ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের সম্পর্কে প্রচলিত এবং বিভিন্ন আখ্যান থেকে উপাদান সংগ্রহ করে পরিচালক এই সিরিজ়কে সাজিয়েছেন। তাই গল্পের পরতে পরতে বাস্তবের সঙ্গে মিল খুঁজে পেতে পারেন অনেকে। রয়েছে রায় টকিজ়ের মালিক শ্রীকান্ত রায় (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়)। সে এক জন ‘স্টার মেকার’। তার ব্যবসার অংশীদার এবং স্ত্রী সুমিত্রা কুমারী (অদিতি রায় হায়দারি)। সুমিত্রা আবার ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠিত নায়িকাও বটে। রয়েছে শ্রীকান্তের ছায়াসঙ্গী থুড়ি বিশ্বস্ত অনুচর বিনোদ দাস (অপারশক্তি খুরানা) এবং তার স্ত্রী রত্না (শ্বেতা বসু প্রসাদ)। রয়েছে করাচি থেকে আসা উদবাস্তু জয় খন্না (সিদ্ধান্ত গুপ্ত) যে পরিচালক হতে চায়। এ ছাড়াও রয়েছে সিনেমায় বিনিয়োগকারী সমশের ওয়ালিয়া (রাম কপূর) এবং তাঁর রক্ষিতা নিলোফার (ওয়ামিকা গাব্বি)। আপাতত সিরিজ়ের পাঁচটি পর্ব (মোট ১০টি পর্ব) মুক্তি পেয়েছে।
সিনেমার জৌলুসের আড়ালে যে প্রতিযোগিতা, প্রতিশোধ, লালসার অন্ধকার জগতের কথা শোনা যায়, বিক্রমাদিত্য এবং সৌমিক সেন (সিরিজ়ের অন্যতম স্রষ্টা) সেই সমান্তরাল পৃথিবীকে ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু বাস্তবকে বাদ দিয়ে নয়। যেমন শ্রীকান্ত রায় চরিত্রটিকে দেখলে তৎকালীন বম্বে টকিজ়ের কর্ণধার হিমাংশু রাইয়ের কথা মনে পড়ে। বিনোদের মদন কুমার হয়ে ওঠার সঙ্গেও অশোক কুমারের উত্থানের মিল রয়েছে। সুমিত্রা দেবী আর জমশেদের পরকীয়া মনে করাবে দেবীকা রানি এবং নজমুল হুসেনের বিতর্কিত প্রেমপর্ব। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে কি জয় খন্না চরিত্রটিকে গড়ে তোলা হয়েছে রাজ কপূরের আদলে? নাকি পাকিস্তান থেকে আসা যশ চোপড়ারই অন্য রূপ? হতে পারে তাঁরা সকলেই এই চরিত্রের অনুপ্রেরণা।
বিক্রমাদিত্যের পরিচালনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? প্রসেনজিৎ বললেন, ‘‘আমি তো বারবার বলি বিক্রম এখন পরিচালক হয়ে উঠতে পারেনি। ও এখনও ভন্সালীর (সঞ্জয় লীলা ভন্সালী) এডি হয়েই রয়ে গেল! আমি সেটে কোনও দিন ওকে বসতে দেখিনি। মনিটারে দাঁড়িয়ে শট দেখে। কোনও দিন শুনলাম না, কোনও এডিকে বলছেন কোনও কাজ করতে। সব দৌড়ে দৌড়ে নিজে করবে। ও অতুলনীয়!’’
সিরি়জ়ের প্রোডাকশন ডিজাইন আলাদা করে নজর কেড়েছে সকলের। সেট ডিজাইন, কস্টিউম, মেকআপ, প্রপ— সবই নিখুঁত। প্রসেনজিৎ জানালেন, তিনি নিজেও সেট দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনতলা হোটেলের সেট যে পুরোটা বানিয়ে ফেলা যায়, তা উনি ভাবতেও পারেননি। স্বাধীন ভারতে মুম্বই শহর, সেখানকার স্টুডিয়োপাড়া, রেফিউজি ক্যাম্প, রাস্তাঘাট, প্রেক্ষাগৃহ— গোটা শহর হুবহু তুলে ধরতে যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছে গোটা টিম, তা দেখে মুগ্ধ প্রসেনজিৎ।
মুম্বইয়ে সিরি়জ়ের প্রচারে হাজির ছিলেন প্রসেনজিৎ। অনেকেই সিরিজ়ের প্রিভিউ দেখে বলেছেন, সব পর্বই বড় পর্দায় দেখার মতো। অভিনেতার কথায়, ‘‘অনেক প্রশংসা পেয়েছি। অনেকে এসে বলেছেন, এই সিরিজ় ওটিটিতে যে মাপকাঠি তৈরি করে ফেলেছে, তা টপকাতে এখন অনেক খাটতে হবে।’’