একশো সতেরো মিনিটের ছবিতে, একশো মিনিটই বিদ্যুৎ জামওয়ালের অ্যাকশন। এবং সেটা দেখানোই হয়তো নির্মাতাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। তাই কোনও মতে একটা গল্প খাড়া করা হয়েছে। ওটিটিতে কনটেন্ট ভিত্তিক ছবির জমানায় ডিজ়নি প্লাস হটস্টার রিলিজ় ‘সনক’ একেবারেই বেমানান। হস্টেজ-অ্যাকশন ড্রামা জ়ঁরেই অসংখ্য ভাল ছবি রয়েছে। অথচ কাহিনির একটা মজবুত কাঠামো নির্মাণের চেষ্টা একেবারেই করলেন না পরিচালক কণিষ্ক বর্মা।
ছবি শুরু হচ্ছে ভিভান (বিদ্যুৎ) ও অংশিকার (রুক্মিণী মৈত্র) ছুটি কাটানোর মুহূর্ত দিয়ে। হঠাৎই অংশিকা অসুস্থ বোধ করে। জানা যায় হার্টের জটিল এক ব্যাধিতে সে আক্রান্ত, সার্জারি একমাত্র উপায়। চিকিৎসার বিপুল খরচ বহন করতে নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে দেয় ভিভান। সার্জারির পরে সুস্থ অংশিকার বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু সব ভাল হলে বিদ্যুৎ তাঁর স্টান্ট দেখাবেন কী করে! হাসপাতালে একদল দুষ্কৃতী হামলা করে। পণবন্দি করে ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের। ওই হাসপাতালেই অস্ত্র সরবরাহকারীদের এক চাঁই বন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই দুষ্কৃতীদের আগমন।
ভারতীয় প্রশাসনকে ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্র সাপ্লাই দেওয়া এবং তার ফলে জওয়ানদের মৃত্যু... এমন স্পর্শকাতর বিষয়কে ভীষণ হেলাফেলা করে ব্যবহার করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষিতগুলোও খাপছাড়া। আসলে চোখধাঁধানো অ্যাকশন দেখানোর উদ্দেশ্যই যদি মুখ্য হয়, তা হলে বাকি সব গৌণ হয়ে যায়। দুষ্কৃতী দলের প্রধান সাজু (চন্দন রায় স্যান্যাল)। ওই দলে গোটা বারো সদস্য। তাদের মধ্যে কেউ এশীয়, কেউ কৃষ্ণাঙ্গ, কেউ সাদা চামড়ার। কেন এই পাঁচমিশালি দলবাজি, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই ছবিতে। গোটা ছবিতে পুলিশের ভূমিকাও বোঝা যায় না। পুলিশ অফিসার জয়ন্তী ভার্গবের চরিত্রে নেহা ধুপিয়া। কিন্তু অক্ষমের আস্ফালন ছাড়া তাঁর চরিত্রের আর কিছু করার ছিল না। স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে যেতে আসা ভিভান একাই কুম্ভ হয়ে রক্ষা করে।
সনক
পরিচালনা: কণিষ্ক বর্মা
অভিনয়: বিদ্যুৎ, রুক্মিণী, নেহা, চন্দন
৪.৫/১০
ভিভান ডায়াবেটিক। সুগার নেমে গেলে তার শরীরে সার থাকে না। একটি দৃশ্যে দেখানো হচ্ছে, আহত ভিভান নার্সারির মধ্যে পড়ে রয়েছে। নিজেকে চাঙ্গা করার জন্য সেখানে রাখা দুধের বোতলের আলমারিতে গুলি চালায় সে। কাচের বোতল ভেঙে মেঝেতে দুধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুধ চেটে খেয়ে সুস্থ হয় ভিভান! ওটিটিতে অভ্যস্ত দর্শক এগুলো হজম করবেন? সনক কথার অর্থ ক্রোধ। সেটাই না নির্মাতাদের জন্য বুমেরাং হয়ে যায়।
এ ছবির ভাল অংশ বলতে বিদ্যুতের অ্যাকশন দৃশ্যগুলোই। ছবিতে তাঁকে মিক্সড মার্শাল আর্টস ট্রেনার হিসেবে দেখানো হয়েছে। বেশ অভিনব কয়েকটি স্টান্ট সিকোয়েন্স রয়েছে। হাসপাতালের স্ক্যান রুমের ভিতরে যন্ত্রের ম্যাগনেটিক কারসাজি কিংবা ফিজ়িয়োথেরাপি রুমের অ্যাকশন দৃশ্যগুলো উপভোগ্য। আরও একটা ভাল দিক, অনাব্যশক গান গুঁজে না দেওয়া।
বিদ্যুতের হিরো অবতার দর্শানোর সব রকম বন্দোবস্ত ছিল। তবে রোম্যান্টিক দৃশ্যে তাঁর আড়ষ্টতা চোখে পড়ে। চন্দন রায় সান্যালের মতো অভিনেতাকে ব্যবহারই করা হয়নি। রুক্মিণী মৈত্রের এটা প্রথম হিন্দি ছবি। অভিনেত্রীর ভাগ্য খারাপ, প্রথম ছবিতে তাঁর করার মতো কিছু ছিল না। তবে রুক্মিণীর যা অ্যাপিয়ারেন্স, তাতে তিনি ভবিষ্যতে বলিউডে ভাল চরিত্র পেতে পারেন।