বড় পর্দায় ছবি দেখা আসলে কতটা স্বস্তির, সেটা পাঁচ মাস পরে ফের উপলব্ধি করা গেল। মুঠোফোন সুবিধে দিতে পারে, কিন্তু তার স্ক্রিনে সেই ম্যাজিক তৈরি হয় না। বড় পর্দা ম্যাজিক আর ব্যাপ্তি দুটোই দিতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন কাটিয়ে সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে অক্ষয়কুমারের ‘বেল বটম’। সে ছবি কতটা লক্ষ্মীলাভ করবে, তা সময়ই বলবে। তবে দর্শককে হলে টানার উপাদান ছবিতে রয়েছে।
দিনকয়েক আগেই ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এই সময়ে দেশপ্রেমের ছবি গুরুত্ব পায়, সে ওটিটি হোক বা বড় পর্দা। ‘বেল বটম’ও সেই গোত্রের। আশির দশকে একের পর এক প্লেন হাইজ্যাকের ঘটনায় নাজেহাল ভারত সরকার। ইন্দিরা গাঁধীর শাসনের ওই পর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে আপাত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকলেও, নাটের গুরু কে বা কারা, তা বলে দিতে হয় না। প্রতিটি হ্যাইজ্যাকেই ভারতকে বড়সড় খেসারত দিতে হয়। একটি মাত্র লোক পারে পাকিস্তানের সব পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে, র এজেন্ট অংশুল মলহোত্র ওরফে বেল বটম (অক্ষয়)। বাস্তব ঘটনার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে কাল্পনিক উপাদান মিশিয়েই ছবিটি পরিবেশন করেছেন পরিচালক রঞ্জিত এম তিওয়ারি।
ছবিতে অক্ষয় থাকা মানে তিনিই সর্বেসর্বা। অক্ষয়ের চরিত্রের পেশা ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য যতটা দরকার, ছবিতে ঠিক ততটাই আছে। একই ভাবে হ্যাইজ্যাক পর্ব এবং কাহিনির প্রেক্ষাপট তৈরির অংশগুলোও ভাল। এই পরিমিতিবোধই ছবিটিকে ধরে রেখেছে।
বেল বটম
পরিচালনা: রঞ্জিত এম তিওয়ারি
অভিনয়: অক্ষয়, আদিল, বাণী, লারা
৫.৫/১০
তবে বেশ কিছু ‘কিন্তু’র জায়গাও আছে। র-এর এক সিনিয়র অফিসারের চরিত্রে রয়েছেন আদিল হুসেন, যার হাত ধরে অক্ষয় এজেন্সিতে যোগ দেয়। কিছু দিনের মধ্যেই সব পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনার রাশ বেল বটমের হাতে চলে যায়। বোঝা যায় না, শিষ্য গুরুকে মাত করল, না কি তিনি অক্ষয়কুমার বলেই এতটা গুরুত্ব? যে কারণে ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে এক কোণে চুপটি করে বসে থাকতে হয় র-এর প্রতিষ্ঠাতা আর এন কাওকে (ডেনজ়িল স্মিথ)। দুবাই সরকারকে অনাবশ্যক তোল্লাই দেওয়ার বিষয়টিও চোখে লাগে। খালিস্তান আন্দোলন নিয়ে তৎকালীন সরকারকে খোঁটা দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে কংগ্রেস সরকারের সে সময়ের সাফল্য তুলে ধরাও ব্যতিক্রম বইকি।
‘বেল বটম’-এর রেট্রো লুক দেখতে বেশ লাগে। হাইজ্যাকারদের সঙ্গে টক্কর এবং ক্লাইম্যাক্স পর্বও মসৃণ। ছবিটা পুরোপুরি অক্ষয়ের। তবে এখানে অভিনেতার নতুন করে কিছু দেওয়ার ছিল না। এ ধরনের ছবি ও চরিত্র তিনি আগেও করেছেন। বরাবরের মতো আদিল এ ছবিতেও ভাল। অক্ষয়ের স্ত্রীর চরিত্রে বাণী কপূর ও মায়ের চরিত্রে ডলি আলুওয়ালিয়া যথাযথ। হুমা কুরেশির বিশেষ কিছু করার ছিল না। ইন্দিরা গাঁধীর চরিত্রে লারা দত্তর লুক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেই লুকের পুরো কৃতিত্ব মেকআপ শিল্পীর। তবে লারার অভিব্যক্তির অভাব তিনিও ঢাকতে ব্যর্থ।
ছবির দু’ঘণ্টার সফরে সে অর্থে কোনও ঝাঁকুনি নেই। আবার বিষয় ও পরিবেশনগত দিক থেকে নতুনত্বও পাওয়া গেল না ‘বেল বটম’-এ।