Mumbai Saga

বম্বে থেকে মুম্বই অ্যাকশনে সরগরম

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৯
Share:

আশি-নব্বইয়ের দশকের বম্বে, ধুন্ধুমার অ্যাকশন, তুখোড় ওয়ানলাইনার... বম্বে থেকে মুম্বই হয়ে ওঠার গল্প জমজমাট। কিন্তু গল্পের ভিত পোক্ত নয়। মুম্বইয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সমান্তরালে চলা আন্ডারওয়র্ল্ডের গল্প এই ছবির উপজীব্য। কিন্তু এ গল্প বলিউডে নতুন নয়। সঞ্জয় গুপ্তর লেখা ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’ বা ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াডালা’র চিত্রনাট্য অনেক মজবুত ছিল। জমজমাট অ্যাকশন ও অভিনয়গুণে ‘মুম্বই সাগা’ উতরে গেলেও গল্পের বুনটে রয়ে গেল ত্রুটি।

Advertisement

একটি সাধারণ ছেলে অমর্ত্য রাওয়ের (জন আব্রাহাম) গ্যাংস্টার হয়ে ওঠার গল্পকে কেন্দ্র করেই ছবি আবর্তিত হয়।তোলা দেবে না বলে অমর্ত্য একাই লড়ে যায় এলাকারা তোলাবাজ গায়তোণ্ডের (অমোল গুপ্তে) গুন্ডাদলের সঙ্গে। গায়তোণ্ডেকে শায়েস্তা করায় সে নজরে পড়ে মুম্বইয়ের রাজা ‘ভাউ’য়ের (মহেশ মঞ্জরেকর)। অমর্ত্য হয়ে ওঠে ‘ভাউ’য়ের ডান হাত। চেনা গল্প রং বদলায় ছবির চরিত্রায়ণ ও অভিনয়গুণে।

ছবিতে আশি-নব্বইয়ের দশকের বম্বে তুলে ধরা হয়েছে, যখন মরাঠি ভাবাবেগে পরিপূর্ণ ‘আখখা মুম্বই’। একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে, বম্বে হয়ে উঠছে মুম্বা দেবীর ‘মুম্বই’। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা চিত্রনাট্যে ‘ভাউ’কে দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না কার আদলে এই চরিত্রনির্মাণ। তা আরও স্পষ্ট করেছে পিছনে উড্ডীয়মান পতাকার রং। যোগ্য সঙ্গত করেছে মহেশের সংলাপ ‘মরাঠিকো জো টোকেগা, মরাঠি উসকো ঠোকেগা।’ ভাউকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন মহেশ। অসাধারণ অমোল গুপ্তেও। গায়তোণ্ডের চরিত্রে ঠান্ডা মাথায় হাসতে-হাসতে ঢিমে স্বরে কথা বলা অমোল এ ছবির অন্যতম প্রাপ্তি।

Advertisement

মুম্বই সাগা

পরিচালক: সঞ্জয় গুপ্ত

অভিনয়: জন, মহেশ, ইমরান, অমোল, সুনীল

৫.৫ /১০

অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত হলেও সুনীল শেট্টি, গুলশন গ্রোভারও মুগ্ধ করেছেন। বরং পেশিশক্তিতে বলীয়ান জনের অভিব্যক্তিতে এখনও তেমন পরিবর্তন আসেনি। তবে ছবিতে তাঁর টোল ফেলা হাসির কয়েক ঝলক দারুণ ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিতে ইমরান হাশমির প্রবেশ অনেক পরে। কিন্তু এ ছবির ইমরান বারেবারে মনে করিয়ে দেন ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’-এর ইমরানকে। আর সেখানেই মার খেয়েছে বিজয় সারভারকরের চরিত্রটি। নজর কেড়েছেন রাহুল রায়ও। তবে প্রতীক বব্বর, কাজল আগরওয়ালের উপস্থিতি সে ভাবে নজর কাড়ে না।

বহু দিন পরে বড় স্ক্রিনে খালি হাতের অ্যাকশন, গাড়ি ওড়ানোর দৃশ্য, গুলির মৌতাত, বাইক চেজ় সিকোয়েন্স দেখে বেশ তরতাজা লাগে। মহারাষ্ট্রের মেজাজ ধরা পুরো ছবিতে, তা আরও বাঙ্ময় করেছে গণেশ পুজোর গান ‘ডঙ্কা বাজা।’ অ্যাকশনে মন জয় করে নিয়েছেন জন। আর জনের সংলাপে ওয়ানলাইনারের ব্যবহার বেশ প্রশংসনীয়। ‘তেরি গাড়ি বুলেটপ্রুফ হ্যায়, তু নহি’ বা ‘ধোকেবাজ়ি কা খাসিয়াত হ্যায় কি দেনেওয়ালা অকসর কোয়ি খাস হি হোতা হ্যায়’... লাইনগুলো মনে থেকে যায় হল থেকে বেরিয়েও।

ছবির সব চরিত্রের লুকে রেট্রো ফিল থাকলেও জনের লুক আধুনিক কেন বোঝা গেল না। পুরনো বম্বের বাতাবরণে হঠাৎ হানি সিংহের গানও বিরক্তিকর আর বেমানান। ছবির প্রথমার্ধ যতটা যত্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধ ততটা আকর্ষক নয়। আর ছবির ক্লাইম্যাক্সেও সঞ্জয়োচিত সেই ম্যাজিক টাচ অনুভব করা গেল না। এভিয়েশনের জ্বালানি-বোঝাই গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ভিতরের মানুষ বেঁচে গেল! শুধু তা-ই নয়, চোখের পলকে পায়ে হেঁটে রানওয়ের দূরত্ব অতিক্রম করে গুলিও করল। বলিউডের ছবিতে পুড়ে যাওয়া, গুলি খাওয়ার পরেও তারকারা কী-কী করতে পারেন... সেই তালিকায় নবতম স‌ংযোজন হতে পারে এই ছবির ক্লাইম্যাক্স।

তবে ওটিটিকে পাল্টা দিতে সিনেমা হলে ম্যাজিক তৈরি করতে জন যে কসরত কম করেননি, তা বেশ স্পষ্ট ছবিতে। দেশজ অ্যাকশন প্যাকেজ নিয়ে আবার সিনেমা হল জমজমাট। ঝিমিয়ে পড়া প্রেক্ষাগৃহে বহুদিন বাদে বলিউড যেন বলে উঠল, ‘লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement