হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে গত কয়েক বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিন্ন যৌনপ্রবৃত্তির ছবিগুলির একটি টেমপ্লেট সহজেই তৈরি করে ফেলা যায়। ছোট শহর, কাকা-কাকিমা-পিসিকে নিয়ে বড় সংসার, কথায় কথায় পাঞ্চলাইন, সামাজিক সচেতনতার বার্তা ইত্যাদি... হর্ষবর্ধন কুলকার্নির ‘বধাই দো’ এই মাপকাঠির একটি ছাড়া প্রায় সবক’টিই অনুসরণ করেছে। এতে ছবির উৎকর্ষ বেড়েছে, বাস্তবের অনেক কাছাকাছি মনে হয়েছে ছবিটিকে। তবে এই ছবি যে গতানুগতিকতার সব দোষ থেকে মুক্ত, তা নয়।
দেহরাদূনের শার্দূল ঠাকুর (রাজকুমার রাও) এক মহিলাপ্রধান থানার অফিসার। শারীরচর্চার বিশেষ শখ রয়েছে তার। স্কুলে ব্রতচারীর শিক্ষিকা সুমি (ভূমি পেডনেকর)। শার্দূলের রক্ষণশীল ঠাকুর পরিবার তার জন্য পাত্রী খুঁজতে ব্যস্ত। অন্য দিকে, একত্রিশ বছর বয়সি সুমিকেও বারবার তার মা মনে করিয়ে দেয় বিয়ের ‘বয়স’! সমকামী শার্দূল এবং সুমি পারস্পরিক বোঝাপড়া করে নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়। তাদের মধ্যে কোনও গোপনীয়তার পর্দা নেই। নবদম্পতির মধুচন্দ্রিমায় সঙ্গী শার্দূলের পার্টনার! সেখান থেকে ফিরে আসার পরে নবদম্পতির সঙ্গে থাকতে শুরু করে সুমির প্রেমিকা রিমঝিম (চুম দরাং)। সুমি-শার্দূলের মধ্যে আড়াল না থাকলেও, পাত্র-পাত্রীর পরিবার অবশ্য সত্যিটা জানে না। তাই ছবির শেষ সহজে অনুমেয়।
আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘শুভ মঙ্গল জ়াদা সাবধান’ এবং রাজকুমারের এই ছবির খানিক তুলনামূলক আলোচনা জরুরি। কারণ ছকভাঙা কনটেন্টভিত্তিক ছবির এই দুই নায়কের চরিত্রায়নে খানিক মিল রয়েছে। আয়ুষ্মানের মতো এই ছবির জন্য রাজকুমারকে বাইসেপস এবং অ্যাবস প্রদর্শন করতে হয়েছে। বড় পর্দার সমকামী সম্পর্কে বলিউডের নায়কেরা এখনও অবধি ‘মাচো’! মুদ্রার উল্টো পিঠও রয়েছে। পরিচালকের ‘হান্টার’ ছবির মুখ্য অভিনেতা গুলশন দেবাইয়াকে ছবিতে দেখানো হয়েছে সমকামী সম্পর্কের ‘কুইন’ হিসেবে। ভূমির বিপরীতে রয়েছেন নবাগতা চুম দরাং। এই কাস্টিং ছবিকে বেশ খানিক মাইলেজ দিয়েছে। পর্দায় এই অভিনব জুটিদের দেখতেও ভাল লেগেছে।
বধাই দো
পরিচালক: হর্ষবর্ধন কুলকার্নি
অভিনয়: রাজকুমার, ভূমি, সীমা, শিবা, গুলশন, চুম
৬.৫/১০
চেনা টেমপ্লেটের যে নিয়ম এই ছবি অনুসরণ করেনি, তা হল সংলাপে পাঞ্চলাইনের ঘনঘটা। কমেডি রয়েছে নিক্তি মেপে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গল্পের বাঁধন একটু আলগা হলেও, পরে অবশ্য ছবি গতি পায়।
রাজকুমার এবং ভূমির রসায়ন ছবিতে ফুটে উঠেছে। পার্শ্বচরিত্রে শিবা চড্ডাকে সাধারণত যে অবতারে দেখা যায়, তার চেয়ে খানিক আলাদা তাঁর এই ছবির চরিত্রায়ন। সীমা পহওয়া, লাভলিন মিশ্র, নীতেশ পাণ্ডের মতো অভিনেতারা নিজেদের চরিত্রে সুন্দর।
পরিবারকেন্দ্রিক দর্শকের কথা মাথায় রেখে বানানো এই ছবিগুলি বিনোদনের সঙ্গে আপস করতে চায় না। ফলে ছবিতে নেই কোনও সাহসী দৃশ্য বা কঠিন লড়াইয়ের রেখাপথ। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যেমন, সমকামীদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার, সমকামী পুলিশ অফিসার, সমকামী চরিত্রে উত্তর-পূর্বের এক অভিনেত্রী।
গতে বাঁধা বেশ কিছু ত্রুটি কাটাতে পারলেও, চিত্রনাট্যকে আরও একটু পোক্ত করা যেত। যেমন, ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে প্রেসক্রিপশন ছাড়া পরীক্ষা করানোর অনুমতি শুধুমাত্র হিন্দি ছবিই দেয়! ছোট শহরের বড় পরিবারে নায়ক-নায়িকা ছাড়া আর কেউ সংস্কারমুক্ত নয়...তনিষ্ক বাগচীর সুরে বেশ কয়েকটি গান ছবির আবহের সঙ্গে মানানসই।
ছবির প্রচারে ভূমি বলেছিলেন, ‘‘এক দশকে এমন একটা ছবি তৈরি হলেই যথেষ্ট নয়।’’ কথা বলার পরিসর তৈরি করার জন্য এই ধরনের ছবিতে বলিউডের আগ্রহ। সে উদ্দেশ্যে প্রায় সফল ‘বধাই দো’।