Cinema

উসকে দিল মরাঠা আবেগ

সিনেমার আখ্যান পরিচিত। ১৬৬৫-তে পুরন্দরের চুক্তি অনুযায়ী শিবাজি ২৩টি দুর্গ মুঘলের হাতে তুলে দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম কোন্ধানা।

Advertisement

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৩৭
Share:

এই চরিত্রটিকে নিয়ে মরাঠা আবেগ বড় কম নয়। মরাঠি কবিতার বিশেষ সংরূপ ‘পোয়াড়া’, বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় হরিনারায়ণ আপ্তের উপন্যাস, তা কেন্দ্র করে মরাঠি সিনেমা— বীর তানাজি মালুসারে ফিরে আসেন বারবার। আসে কোন্ধানা (ঋষি কৌডিন্যের নামানুসারে) দুর্গের বিখ্যাত সিংহগড় হয়ে ওঠার আখ্যান, মরাঠা-বীরত্বের কাহিনি। এই কাহিনিকেই সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে মরাঠা আবেগের আধারে দেখাতে চাইল ওম রাউতের ‘তানাজি: দি আনসাং ওয়ারিয়র’ সিনেমাটি।

Advertisement

সিনেমার আখ্যান পরিচিত। ১৬৬৫-তে পুরন্দরের চুক্তি অনুযায়ী শিবাজি ২৩টি দুর্গ মুঘলের হাতে তুলে দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম কোন্ধানা। ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণে এই দুর্গ পুনরুদ্ধার শিবাজির (শরদ কেলকার) জন্য জরুরি। তার জন্য মুঘলের দুর্গরক্ষক রাজপুত উদয়ভান সিংহ রাঠৌরকে (সেফ আলি খান) পর্যুদস্ত করতে হবে। শিবাজির ‘ডান হাত’ তানাজি (অজয় দেবগণ) এই দায়িত্ব নিজেই নেন। পরে ধুন্ধুমার যুদ্ধ। প্রচলিত আখ্যান নিয়ে খুব বেশি নাড়াচাড়া করেননি লেখক প্রকাশ কাপাডিয়া।

তবে মোটের উপর এই নাড়াচাড়া না করাটা যদি ইতিহাসের নিরিখে প্রাপ্তি হয়, তা হলে সিনেমার আখ্যানের অপ্রাপ্তিও সেখানেই। কারণ, গল্প এক রেখেও চরিত্রের বুনট বা পরত সংযোজন আরও মজবুত হতে পারত। তা না হওয়ায় তানাজি ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীবাইয়ের (কাজল) রসায়ন দু’-একটি দৃশ্য ছাড়া জমাট বাঁধেনি। তবে অল্প সুযোগ সত্ত্বেও অভিনয়ে কাজল অনন্য। অজয়ও যথেষ্ট মানানসই। অভিনয়ে সেরা প্রাপ্তি সেফ হলেও, তাঁকে দেখে মনে পড়ে ‘পদ্মাবত’-এর আলাউদ্দিন খিলজিরূপী রণবীর সিংহকে। অন্য ভূমিকায় পদ্মাবতী রাও (জিজাবাই), শরদ, লিউক কেনি (ঔরঙ্গজেব) প্রমুখ চলনসই।

Advertisement

তানাজি: দি
আনসাং ওয়ারিয়র
পরিচালনা: ওম রাউত
অভিনয়: অজয়, সেফ, কাজল
৬/১০

এ সব বাদে সিনেমাটির সেরা প্রাপ্তি প্রযুক্তির ব্যবহার। নানা পর্ব ‘ভিএফএক্স’-এর কল্যাণে চমৎকার। বেশ মানানসই জীবজন্তুর অ্যানিমেটেড-অবয়ব। তবে যুদ্ধ-দৃশ্যে তানাজি তথা মরাঠা সৈন্যদের বিশ্বস্ত গোসাপটির (যশোবন্তী) অস্তিত্ব আরও একটু প্রকাশ পেলে ভাল হত। দৃশ্য-দর্শনে চোখের আরাম অনিবার্য। এর জন্য কৃতিত্ব সিনেমাটোগ্রাফার কেইকো নাকাহারার। সিনেমার আবহ, গান সঙ্গতিপূর্ণ।

সংলাপে শিবাজির ‘স্বরাজ্য’র স্বপ্ন বা ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য বিস্তারের স্পৃহা ফুটে ওঠে। পরিষ্কার হয় গেরুয়া পতাকার সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বে ইতিহাসের ‘প্রচলিত’ ধারণাকেই আধার (‌যেমন, ‘হিন্দুর বিরুদ্ধে হিন্দুকে লড়িয়ে দেওয়া’র মতো সংলাপ) করা হয়েছে। সমসময়ের বিচারে এ সব সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব হিসেবে ঠেকতে পারে। কিন্তু সিনেমায় শিবাজির দরবারে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ বা ঔরঙ্গজেবের রাজপাট পরিচালনায় হিন্দুদের ভূমিকা ভারতবর্ষের সম্প্রীতির ইতিহাসকেই প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে খুঁজে পান ইতিহাস-সচেতন দর্শক।

আর অবশ্যই প্রাপ্তি তানাজির জীবন। ছেলের বিয়ে অসমাপ্ত রেখে তাঁর দুর্গ জয় করতে যাওয়া, শাসক শিবাজির তুলনায় বন্ধু শিবাজি, বাবা, স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এমনকি প্রতাপগড়ে দোকানদারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা, এ সবই সম্পূর্ণ তানাজিকে সামনে আনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement