কেমন হল ‘সিটাডেল’? ছবি: সংগৃহীত।
গত কয়েক বছর ধরে যে কাজের জন্য চর্চায় রয়েছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, অবশেষে প্রকাশ্যে এল সেই ওয়েব সিরিজ়। প্রথম সারির এক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেল মার্ভেল খ্যাত রুশো ব্রাদার্সের ‘সিটাডেল’-এর প্রথম দু’টি এপিসোড। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস, ‘গেম অফ থ্রোন্স’ খ্যাত রিচার্ড ম্যাডেন, এবং ‘দ্য ডেভিল ওয়্যার্স প্রাডা’ খ্যাত অভিনেতা স্ট্যানলি তুচ্চি। সিরিজ়ের কার্যনির্বাহী প্রযোজক রুশো ব্রাদার্স হলেও পরিচালনার রাশ রয়েছে নিউটন থমাস সাইগেলের কাছে। একে বিপুল টাকা খরচ করে বানানো একটি স্পাই-থ্রিলার সিরিজ়, তার উপরে তার বিশ্বব্যাপী প্রচার— ‘সিটাডেল’ নিয়ে দর্শকের মধ্যে উৎসাহ ছিল গোড়া থেকেই। লন্ডন থেকে রোম হয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস— প্রচারে কোনও খামতিই রাখেননি সিরিজ়ের নির্মাতারা। সেই উৎসাহ আরও বাড়ে, যখন ‘সাকসেশন’, ‘টেড লাসো’র মতো সিরিজ়কে পিছনে ফেলে জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে গিয়েছিল প্রিয়ঙ্কা-রিচার্ডের নতুন সিরিজ়। তবে মুক্তি পেতেই বোঝা গেল, সেই সব উৎসাহকে প্রায় গভীর জলে ডুবিয়ে দিয়েছে সিরিজ়ের গল্প।
সিরিজ়ের প্রথম এপিসোডের শুরু উল্টোনো চলন্ত ট্রেনের ভিতরে। কয়েক সেকেন্ড পরে প্রচার ঝলকে দেখতে পাওয়া সেই লাল পোশাকে হাজির প্রিয়ঙ্কা চোপড়া জোনাস। চেহারার জৌলুস গতে বাঁধা গুপ্তচরের মতোই। পরনে টকটকে লাল পোশাক, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, সুন্দর করে কারসাজি করা এক ঢাল ঘন কালো চুল। সবটাই একেবারে নিখুঁত। এবং পুরনো। এর আগেও স্পাই-থ্রিলারে এমন নারী গুপ্তচরদেরই দেখেছেন দর্শক।
‘সিটাডেল’-এর প্রিয়ঙ্কা তার ব্যতিক্রম নন। তাঁর চলনে নতুনত্ব বিশেষ নেই, তবে বলনে তা ধরা পড়ল বটে। নিজের সব সংলাপের শেষেই জুড়ে দিয়েছেন ‘লভ’। সাধারণ ভাবে, ব্রিটেনের মানুষের কথা বলার মধ্যে এই শব্দের ব্যবহার বেশি। অথচ, সেই সংলাপগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যে ব্রিটিশ কথা বলার কায়দার প্রয়োজন, তা প্রিয়ঙ্কার উচ্চারণে নেই। এই বিশেষ শব্দ সংযোজন কি তবে স্রেফ টানা অনেক দিন ধরে ইউরোপে শুটিং করার ফল?
কথায় বার্তায় যতই খটকা লাগুক, প্রিয়ঙ্কার মারামারি কিন্তু ১০০ শতাংশ খাঁটি! সিরিজ়ের অ্যাকশন দৃশ্যে বডি ডবল ব্যবহার করেননি, নিজেই ঝুঁকি নিয়েছেন শুটিংয়ের সময়। তার জন্য প্রচুর ট্রেনিংও করেছেন দেশি গার্ল। তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। অ্যাকশন দৃশ্যের প্রিয়ঙ্কার উপর থেকে চোখ সরে না। এমনকি যে অ্যাকশন দৃশ্যে তাঁর পাশেই রয়েছেন ‘গেম অফ থ্রোন্স’ খ্যাত রিচার্ড ম্যাডেন, সেখানেও প্রিয়ঙ্কাকেই বেশি সাবলীল লেগেছে পর্দায়। অন্য দিকে রিচার্ড ম্যাডেনের অভিনয় এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে দাগ কাটেনি। তিনি মাপা, তবে মনে রাখার মতো নন। তবে, চমক দিয়েছেন স্ট্যানলি তুচ্চি ও লেসলি ম্যানভিল।
প্রথম দু’টি এপিসোডে পর্দায় খুব একটা বেশি সময় না পেলেও নিজেদের জাত চিনিয়েছেন স্ট্যানলি ও লেসলি।তবে এখনও পর্যন্ত ‘সিটাডেল’-এর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সিরিজ়ের গল্প নিয়ে। কখন যে তাঁদের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, আর কেনই যে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে এজেন্টদের স্মৃতি মুছে ফেলা হয়— তা বুঝে ওঠা দায়। স্মৃতি মুছে গেলেও কী করে যে প্রিয়ঙ্কার স্বপ্নে দেখা দেন রিচার্ড ম্যাডেন, তা বুঝে ওঠার জন্য বোধহয় অপেক্ষা করতে হবে পরের এপিসোডগুলোর। তবে, সেই সত্যি বলতে, প্রথম দুই এপিসোডের পরে ‘সিটাডেল’-এর বাকি এপিসোডের জন্য কতটা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবেন দর্শক, তা বলতে পারা মুশকিল।