সর্দার কা গ্র্যান্ডসন
পরিচালনা: কাশভি নায়ার
অভিনয়: নীনা, অর্জুন, রাকুল প্রীত, কুমুদ, সোনি
৪.৫/১০
নিজের প্রথম ফিচারের বিষয় হিসেবে দেশভাগ নিয়ে ফিল গুড ফ্যামিলি ড্রামা বেছে নিয়েছিলেন পরিচালক কাশভি নায়ার। এর নেপথ্যে ছিল আল জাজ়িরার একটি তথ্যচিত্র, যেখানে এক বৃদ্ধ দেশভাগের সত্তর বছর পরে লাহৌরে যান, নিজের ফেলে আসা বাড়িতে। এ ছবির নব্বই পেরোনো সর্দারও (নীনা গুপ্ত) লাহৌরে ফিরতে চায়, শেষ বারের মতো নিজের বাড়িটাকে একবার দেখবে বলে। সেই স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় তার নাতি অমৃক (অর্জুন কপূর)। তবে ছবিতে সর্দার পাকিস্তানে পাড়ি দেয় না, উল্টে বাড়িটিই তাঁর কাছে আনার ব্যবস্থা করা হয়। আর সেই বন্দোবস্ত করতে গিয়ে যে ফেয়ারি টেলের অবতারণা, তাতেই চোনা পড়েছে ফ্যামিলি ড্রামায়।
প্রথম দৃশ্য থেকেই পরিষ্কার, অমৃক যে কোনও কাজ করতে গিয়েই বেশ ল্যাজেগোবরে হয়। প্রেমিকা রাধার (রাকুল প্রীত সিংহ) সঙ্গেও তার এই নিয়েই ঝগড়া। প্রবাসে থাকা এই জুটি আবার বিজ়নেস পার্টনারও বটে, প্যাকার্স অ্যান্ড মুভার্স কোম্পানির। ঠাকুমার স্বপ্ন সত্যি করার যে দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামে অমৃক, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ও এমব্যাসির দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় তাকে। আর এখানেই যৌক্তিকতার অভাবে দেহ রাখে চিত্রনাট্য। ভিসার জন্য কান্নাকাটি, ‘স্ট্রাকচারাল রিলোকেশন’ কী, তা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশনের মাধ্যমে আধিকারিকদের বোঝানো, অনায়াসেই পাকিস্তানে প্রবেশের পারমিট পেয়ে যাওয়া— সীমানা পেরোনোর লড়াইয়ে ‘গদর’-এর সানি দেওলের চেয়েও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এ ছবির অমৃক! লাহৌর থেকে অমৃতসরে স্ট্রাকচারাল রিলোকেশন সত্যিই কী করে সম্ভব, তা বিশদে দেখালে বাড়িবদলের জার্নিটাই উপভোগ্য হতে পারত। তা না করে মেলোড্রামায় সময় নষ্ট করা হয়েছে। বাড়ি ভাঙার মুহূর্তে আমেরিকা থেকে রাধার আচমকা হাজির হওয়ার দৃশ্যেও বদহজমের ঢেকুর উঠবে।
তবে এ ছবির সত্যিকারের ফিল গুড ফ্যাক্টর নীনা গুপ্ত। যখনই তিনি পর্দায় এসেছেন, জমিয়ে রেখেছেন। নব্বইয়ের কোঠার প্রস্থেটিক্সে সাবলীল লেগেছে অভিনেত্রীকে। সর্দার আর তার পরিবারের হিংসুটে সদস্যদের খুনসুটিই ছবিকে কিছুটা হলেও ধরে রেখেছে। লাহৌরের মেয়রের চরিত্রে কুমুদ মিশ্র, অমৃকের মায়ের ভূমিকায় সোনি রাজদানের মতো সিনিয়র অভিনেতাদের তেমন ব্যবহার করা হয়নি। নায়িকা রাকুল প্রীতের স্ক্রিন টাইমও বেশ কম। যদিও এ ছবির আসল নায়িকা সর্দার অর্থাৎ নীনা। অমৃককে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য অর্জুন কপূরকে অবশ্য বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়নি।
ফ্ল্যাশব্ল্যাকে সর্দার আর তার স্বামীর চরিত্রে ধরা দিয়েছেন অদিতি রাও হায়দরি এবং জন আব্রাহাম। স্বল্প পরিসরে অদিতির প্রাণোচ্ছল অভিনয় ভাল লাগে। ছবির অন্যতম প্রযোজক বলেই জন ক্যামিয়ো চরিত্রে ধরা দিয়েছেন, তা স্পষ্ট।
নিখিল আডবাণীর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর কাশভি তাঁর প্রথম ফিচারের বিষয় বাছাইয়ের জন্য নম্বর পেলেও প্রয়োগে রয়ে গিয়েছে বিস্তর খামতি। নাতিপুতি নিয়ে সর্দারও তাই শেষরক্ষা করতে পারল না।