হাফ কুকড

বিহারের সিমরন অঞ্চল থেকে দিল্লির এক নামী কলেজে পড়তে আসে মাধব ঝা (অর্জুন কপূর)। কলেজ অ্যাডমিশনের ইন্টারভিউতেই সে বুঝিয়ে দেয়, সে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না কিন্তু এই কলেজে পড়ার জন্য যে যোগ্যতা দরকার, তা তার আছে।

Advertisement

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০০:২৬
Share:

হাফ গার্লফ্রেন্ড

Advertisement

পরিচালনা: মোহিত সুরি

অভিনেতা: শ্রদ্ধা কপূর,
অর্জুন কপূর, বিক্রান্ত মেসি

Advertisement

৪/১০

বিহারের সিমরন অঞ্চল থেকে দিল্লির এক নামী কলেজে পড়তে আসে মাধব ঝা (অর্জুন কপূর)। কলেজ অ্যাডমিশনের ইন্টারভিউতেই সে বুঝিয়ে দেয়, সে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না কিন্তু এই কলেজে পড়ার জন্য যে যোগ্যতা দরকার, তা তার আছে। মাধব ইন্টারভিউয়ারদের বলে, ‘‘আপনি কাকে নেবেন? যোগ্য কাউকে, না কি যে কয়েক হাজার দূরের একটা দেশের ভাষা গড়গড়িয়ে বলতে পারে, তাকে?’’ হাততালি পড়ার মতো সংলাপ! এই জেদের জন্য নিউ ইর্য়কে আন্তর্জাতিক স্তরে মাধব যখন হিন্দিতে বক্তৃতা দিচ্ছে তখন
এক ইংরেজ প্রতিনিধি তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ‘‘মাধব ঝা ইজ নট আ নেম, মাধব ঝা ইজ অ্যাটিটিউড।’’

এই ছেলেই কলেজে রিয়া সোমানিকে (শ্রদ্ধা) দেখে প্রেমে পড়ে যায়। মাধবের জীবনে তখন একটাই লক্ষ্য, ‘রিয়া’। সিনেমা দেখা, হ্যাংআউট, বাস্কেটবল খেলা ইত্যাদির পর চূড়ান্ত ধনী পরিবারের মেয়ে রিয়া যখন জানায়, সে বড়জোড় মাধবের হাফ গার্লফ্রেন্ড হতে পারবে, তখন হাঁসজারুর
মতো হাফ গার্লফ্রেন্ড কী বস্তু, তা মাধবও যেমন বুঝতে পারল না, তেমন দর্শকও!

রিয়ার বিয়ে হয়ে গেল মাত্র ১৯ বছর বয়সে। রিয়া কলেজ ছেড়ে দিল। বর কিন্তু মাধব নয়! তা হলে? উত্তর আছে ছবিটিতে।

শ্রদ্ধার অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাঁকে পরদায় দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাঁর স্টাইলিং তারিফ করার মতো। কিন্তু অন্য দিকে একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় হয়ে অজুর্নকে ভীষণ মোটা ও আনফিট দেখতে লেগেছে। ‘ইশকজাদে’, ‘গুন্ডে’র রোম্যান্টিক অর্জুন এখানে অনুপস্থিত। বিহারি বন্ধু ও রুমমেটদের চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা কিন্তু বিহারি সংলাপ উচ্চারণ ও অভিনয়ে গোল দিয়েছে অর্জুনকে। বিশেষ করে মাধবের রুমমেটের চরিত্রে শৈলেশ ওরফে বিক্রান্ত চোখে পড়ার মতো অভিনয় করেছেন। ছবিতে বেশ কিছু গান ব্যবহার করা হয়েছে। গানগুলো হালকাভাবে মন ছুঁলেও মনে রাখার মতো নয়।

ছবিটিতে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। যেমন, রিয়ার মন খারাপ হলে, সে রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে ইন্ডিয়া গেটের ছাদে চলে যেত। সে মাধবকেও নিয়ে যায়। ইন্ডিয়া গেটের রক্ষীদের চোখে ফাঁকি দিয়ে তার মাথায় উঠে বসা, এই দৃশ্যটি দেখানো দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে কতটা উচিত? উত্তর নেই। কলেজে অ্যাডমিশন পাওয়ার আগেই ওই কলেজের বাস্কেটবল টিমে খেলতে শুরু করে অর্জুন! সিমরনের রাজ পরিবারের ছেলে মাধব। তার বিধবা মা (সীমা) গ্রামের ছেলেদের জন্য একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সেটার প্রধান শিক্ষিকাও সে-ই। রাজার সেই জৌলুস না থাকলেও গ্রামসুদ্ধ লোক রাস্তাঘাটে মাধবকে দেখলেই রাজকুমারের সম্মান
দিয়ে প্রণাম করে। সেই মাধব অধিকাংশ সময় যাতাযাত করে বাসের মাথায় চড়ে! এ দিকে সে দিল্লিতে বন্ধুদের সঙ্গে দামি ক্লাবে যায়, মাল্টিপ্লেক্সে নিয়ে যায় রিয়াকে, তাকে ইমপ্রেস করতে ৪০০ টাকার পপকর্ন খাওয়ায়! ছবির একটা বাঁকে রিয়া কাউকে কিছু না বলে হারিয়ে যায়। চিঠিতে জানিয়ে যায়, তার ক্যানসার হয়েছে এবং সে আর মাত্র তিন মাস বাঁচবে। তাকে খুঁজতে মাধব নিউ ইয়র্কে চলে গেল। কারণ রিয়ার স্বপ্ন ছিল নিউ ইয়র্কে জ্যাজ বারে গান গাওয়ার। যে মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে সে নিউ ইয়র্কে গান গাইতে যাবে? ছবিতে এই রকম ছোট-ছোট প্রশ্ন মাঝেমাধেই উত্তর না দিয়ে চলে গিয়েছে। মাধবের মায়ের স্কুলে শৌচালয় তৈরি করার জন্য পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটসের এনজিওর দ্বারস্থ হতে হয় মাধবকে। স্কুলে বিল গেটস নিজে আসেন। বিলের সামনে হিন্দিতে বক্তৃতা দিয়ে তাঁর মন জয় করে নেয় মাধব। কিন্তু বিলের মুখ এত খারাপ করে হলোগ্রাম করা হয়েছে যে তা হজম করা কঠিন। চোখে পড়বে, বাস্কেটবলে অর্জুনের ডামি ব্যবহারও!

কলেজপ্রেম, মান-অভিমান, ধনী-গরিব বৈষম্য, মাতৃভাষা বনাম ইংরেজি, মেয়েদের শিক্ষা, পিছিয়ে পড়া রাজ্য, ডিভোর্সি মেয়েদের সমস্যা, আত্মবিশ্বাস সব কিছু একটা হাঁড়িতে চড়িয়ে যে সুস্বাদু রান্না মোহিত সুরি করতে চেয়েছিলেন, তা আসলে ‘হাফ কুকড’ রয়ে গেল। এর কিছুটা দায় অবশ্যই এই ছবির গল্পকার ও অন্যতম প্রোডিউসার চেতন ভগতেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement