Film Review

The Eken Review: রহস্যময় দার্জিলিং, ভরপুর রসিকতা আর একেনবাবুর কীর্তি, বাঙালির নববর্ষ জমজমাট

সিরিজের তুলনায় ছবির গল্প আরও টানটান, রহস্য-রোমাঞ্চ আরও বেশি। পটভূমি দার্জিলিং হওয়ায় চিত্রগ্রহণের সুযোগ বিস্তর পেয়েছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার রম্যদীপ সাহা। গল্পের বহু নাটকীয় মুহূর্ত আরও জমে উঠেছে পিছনের রোদ-ঝিকিমিকি কাঞ্চনজঙ্ঘার উপস্থিতিতে। আবার রহস্যের প্যাঁচ যত জড়িয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুয়াশা, মেঘ, অন্ধকার। ছবির গল্প যত অন্তিম মুহূর্তের দিকে এগিয়েছে, দার্জিলিংয়ের আবহাওয়াও সে ভাবে বদলেছে।

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১১:৪২
Share:

ছুটির মরসুমে গোয়েন্দা গল্পে খানিক অ্যাকশন না হলে বাঙালি আর কী দেখে হইহই করবে?

আপাতদৃষ্টিতে গোবেচারা ছোটখাটো মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক। মুখ খুললেই প্রবাদ-প্রবচন গুলিয়ে একাকার। খাবার দেখলে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারে না। বাংলা সাহিত্যে লম্বা, ছিপছিপে, প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দাদের ভিড়ে একেনবাবু অবশ্যই আলাদা। অনির্বাণ চক্রবর্তীর দক্ষ অভিনয়ে, সেই চরিত্রের পর্দা-সংস্করণকে বাঙালি ভারী ভালবেসে ফেলেছিল। ওটিটি মাধ্যম ‘হইচই’-এ ‘একেনবাবু’র পরপর পাঁচটি সিজন জনপ্রিয় হওয়ায় নির্মাতারা একেনবাবুকে বড় পর্দায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। সেই ভাবনা যে মন্দ ছিল না, নববর্ষের দুপুরে প্রায় হাউসফুল শো-ই তার প্রমাণ!

এই প্রথম বাংলা কোনও সিরিজ থেকে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হল। ইংরেজিতে বহু সফল এবং জনপ্রিয় সিরিজের শেষে কলাকুশলী ফের একত্রিত হয় বড় পর্দার জন্য। কোনও ছবি সফল হয়েছে, আবার কোনও ছবি সিরিজের জনপ্রিয়তার কাছাকাছিও পৌঁছতে পারেনি। ‘দ্য একেন’ কিন্তু প্রথম দলেই পড়বে। ‘একেনবাবু’ সিরিজের গল্পের বুনন, উপস্থাপনা, সম্পাদনা— সবই প্রত্যেকটি সিজনের সঙ্গে আরও দক্ষ হয়েছে। বড় পর্দায় একেনবাবুর উত্তরণও হয়েছে সেই ধারা বজায় রেখেই। এ বার একেনবাবু এবং তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাপি (সুহোত্র মুখোপাধ্যায়) ও প্রমথকে (সোমক ঘোষ) গল্প দার্জিলিংয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। রোদ-কুয়াশা-বৃষ্টির মাঝেই ঘনীভূত হয়েছে রহস্য। রহস্য যত জটিল হয়েছে,ততই সংলাপের হাসি-ঠাট্টায় মজে গিয়েছেন দর্শক।

Advertisement

​​​​​​​এই প্রথম বাংলা কোনও সিরিজ থেকে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি হল।

সিরিজের তুলনায় ছবির গল্প আরও টানটান, রহস্য-রোমাঞ্চ আরও বেশি। পটভূমি দার্জিলিং হওয়ায় চিত্রগ্রহণের সুযোগ বিস্তর পেয়েছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার রম্যদীপ সাহা। গল্পের বহু নাটকীয় মুহূর্ত আরও জমে উঠেছে পিছনের রোদ-ঝিকিমিকি কাঞ্চনজঙ্ঘার উপস্থিতিতে। আবার রহস্যের প্যাঁচ যত জড়িয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুয়াশা, মেঘ, অন্ধকার। ছবির গল্প যত অন্তিম মুহূর্তের দিকে এগিয়েছে, দার্জিলিংয়ের আবহাওয়াও সে ভাবে বদলেছে। আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি নেমেছে। আবার রহস্যের জট ছেড়ে যাওয়ার পর শেষ দৃশ্যে দেখা গিয়েছে তুলতুলে সাদা বরফও। দার্জিলিং যে গল্পের যোগ্য পরিপূরক হয়ে উঠতে পেরেছে, তার জন্য পরিচালকের (জয়দীপ মুখোপাধ্যায়) প্রশংসা প্রাপ্য।
সিরিজে দর্শক প্রমথ এবং বাপির চরিত্রে যাঁদের দেখে অভ্যস্ত, তাঁরা এই ছবিতে নেই। মুখ বদল হয়েছে। কিন্তু তাতে অসুবিধা তেমন হয়নি। বাপির ভূমিকায় সুহোত্র। তাঁকে দর্শক এমনিই ভালবেসে ফেলেছিলেন ‘গোরা’য় ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে চুটিয়ে অভিনয় করতে দেখার পর থেকে। প্রমথর চরিত্রে সোমকও ইউ টিউব-ফেসবুকের দৌলতে যথেষ্ট পরিচিত মুখ। তাই তাঁদের সঙ্গে সহজেই দর্শক মানিয়ে নিতে পারবেন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ে ‘মন্দার’খ্যাত দেবাশিস মণ্ডল এবং পায়েল সরকার। দেবাশিসের অভিনয় দক্ষতা ‘মন্দার’-এর দর্শকের কাছে অজানা নয়। এই ছবিতেও তিনি হতাশ করেননি দর্শককে। তবে লাস্যময়ী অভিনেত্রীর চরিত্রে পায়েলকে নিয়ে সম্ভবত যথেষ্ট খুঁটিয়ে ভাবা হয়নি। তাই তাঁর অভিনয়ের সুযোগও বাকিদের তুলনায় কম রয়ে গিয়েছে চরিত্রে।

সিরিজের সঙ্গে একটি বিষয় অবশ্য মিল রয়েছে ছবির— একেনবাবু। এই সিরিজের জনপ্রিয়তার বেশির ভাগ কৃতিত্বই এই এক জনের। গোবেচারা, খাই-খাই করা, ভুলভাল বকা এক টাকমাথা মাঝবয়সি লোক। যাকে নিয়ে পেরে ওঠে না তার বন্ধুরা। সারা ক্ষণই তার কীর্তিকলাপ দেখে হাসিতে ফেটে পড়েন দর্শক। আবার সে-ই নাকি শীর্ষ গোয়েন্দাদের এক জন! তার কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা যতটা অপ্রস্তুতে ফেলতে পারে সঙ্গীদের, ততটাই তারা অবাক হয় তার খুঁটিনাটি খেয়াল করার ক্ষমতায়। একেনবাবুর চোখকে যে ফাঁকি দিতে পারে না কিছুই! প্রয়োজনে এই গোলগাল মিষ্টি লোকটাই আবার বন্দুক চালাতেও পারে। এ বার তো সে দুষ্টলোককে রীতিমতো ঘাড়ধাক্কা মেরে কাবুও করে দিয়েছে! ছবিতেও একই রকম মিষ্টি, বুদ্ধি এবং বোকামির অদ্ভুত মিশেল, এবং রহস্যের জট ছা়ড়াতে একই ভাবে পারদর্শী একেনবাবু। অনির্বাণ চক্রবর্তী যেন একাই টেনে নিয়ে যান ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের ছবি। তাঁর অভিনয়ই দর্শককে বারবার একেনবাবুকে ভালবাসতে বাধ্য করবে। এখানেই ‘দ্য একেন’-এর জিৎ যেমন, তেমন কিন্তু হারও।

Advertisement

সিরিজের তুলনায় ছবির গল্প আরও টানটান, রহস্য-রোমাঞ্চ আরও বেশি।

বরবরই এই সিরিজে একেনবাবুর কীর্তিকলাপ যতটা যত্ন নিয়ে লেখা ও ভাবা হয়েছে, মূল রহস্য বুনতে কখনওই তেমন জোর দেওয়া হয়নি। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও সিরিজের প্রথম বা দ্বিতীয় সিজনের তুলনায় এ ছবির রহস্য অনেক বেশি আকর্ষণীয়, তাও বেশ কিছু আলগা সুতো রয়ে যায়। থেকে যায় কিছু প্রশ্ন এবং খটকা। ছবি দেখতে গিয়ে মনে হবে গল্পের বেশ কিছু সাবপ্লট ছুঁয়ে গিয়ে যেন আর শেষে সময়ের অভাবে ঘেঁটে দেখা হয়নি। ছবিতে হাসির দৃশ্য যতটা নিপুণ ভাবে তৈরি, অ্যাকশনের দৃশ্যের পরিচালনা ততটাই নড়বড়ে।

তবে এ-ও ঠিক, ছুটির মরসুমে গোয়েন্দা গল্পে খানিক অ্যাকশন না হলে বাঙালি আর কী দেখে হইহই করবে? ফলে নববর্ষের উপহার হিসেবে ছবির ‘প্যাকেজ’ মানানসই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement