‘প্রজাপতি’ কেমন হল? ছবি: সংগৃহীত।
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের কী চাওয়ার থাকতে পারে? সত্তোরোর্ধ্ব পেনশনভোগী গৌর চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ছেলে-মেয়েরা কাছে থাকবে... এর চেয়ে বেশি চাওয়ার কী থাকতে পারে এ বয়সে?’’
মধ্যবিত্ত গৌর আর তাঁর ছেলে জয় কলকাতার বাসিন্দা। গৌরের স্ত্রী গত হয়েছেন ছেলে জয়ের পাঁচ বছর বয়সে। জয় এক জন ওয়েডিং প্ল্যানার। প্রচণ্ড ব্যস্ত। বাবাই দু’বেলা রান্না করেন, ছেলেকে টিফিন করে দেন, বাড়ির সব কিছু সামলান। এই বয়সে তাঁর একটাই স্বপ্ন। ছেলের বিয়ে দিয়ে বাড়িতে বৌ আনবেন। কিন্তু ছেলেকে বিয়ে করায় কার সাধ্য?
এ ভাবেই চলছিল জীবন। এর মধ্যে হঠাৎই গৌরের দেখা হয়ে যায় তার কলেজের বন্ধু কুসুমের সঙ্গে। ব্যস, তার পরেই বাধে ‘গন্ডগোল’। একাকিত্বে ভোগা গৌর কুসুমকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু সমাজ কি ছেড়ে দেবে? এমনকি, যে ছেলেকে ঘিরে গৌরের সারা দিন-রাত কাটে, সেই ছেলে বা বিবাহিত মেয়েই কি মেনে নেয় বাবার এই সিদ্ধান্ত?
ছবিটি বাবা-ছেলের ভূমিকায় দেব-মিঠুনের ছবি বলে প্রচার পেলেও আসলে ছবিটি মিঠুন-মমতা শঙ্করের। এবং তাঁদের বন্ধুত্বের।
এই নিয়েই গল্প অভিজিৎ সেন পরিচালিত, অতনু রায়চৌধুরী নিবেদিত ছবি ‘প্রজাপতি’র। প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে, এই ছবিটি উৎসর্গ করা হয়েছে তরুণ মজুমদারকে। তাই ড্রামা, পাল্টা ড্রামাতে ভরপুর ছবি। দেখতে খারাপ লাগে না। এর আগে দেব-অতনুর জুটিতে ‘টনিক’ সুপারহিট হয়েছিল। এ বারও সে পথে হেঁটেছেন এই জুটি। একেবারে মধ্যবিত্ত পারিবারিক গল্প, তার চাপান-উতোর, এবং শেষে ক্লাইম্যাক্স।
‘টনিক’-এর মতো দেব এই ছবিতেও একেবারে মধ্যবিত্ত। নেই তাঁর কোনও সুপারস্টারের মতো এন্ট্রি, স্লো-মোশনে দেবের বিখ্যাত দৌড় বা নাচ। একটাই সম্বল তাঁর— অভিনয়। সেখানে দেব অনেকটাই পরিণত। তাঁর উচ্চারণ বহু গুণ পরিশীলিত হয়েছে। জয়ের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। সুন্দরও।
কিন্তু ছবিটি বাবা-ছেলের ভূমিকায় দেব-মিঠুনের ছবি বলে প্রচার পেলেও আসলে ছবিটি মিঠুন-মমতা শঙ্করের। এবং তাঁদের বন্ধুত্বের। যে বন্ধুত্বের আঁচ লাগে জয়-মালার জীবনেও। মমতা শঙ্কর এ ছবির কুসুম। ম়়ৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’র ৪৭ বছর পর আবার একসঙ্গে ছবিতে অভিনয় করলেন মিঠুন-মমতা। দুই বন্ধু হিসেবে তাঁদের দৃশ্যগুলো অসাধারণ।
তবে ছবি কার যদি বলতে হয় তা হলে বলতে হবে অবশ্যই মিঠুন চক্রবর্তীর। তিনি কোন মাপের অভিনেতা, তা মিঠুন পরতে পরতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কী অবলীলায় তিনি মুহূর্তে শরীরী ভঙ্গিমা বদলেছেন, দেখলে তাক লেগে যায়। এত বছর পর বাংলা ছবিতে মিঠুনের এই অভিনয় নিঃসন্দেহে বড় পাওনা দর্শকের। অভিনেতা হিসেবে মমতা শঙ্করেরও তুলনা নেই।
অন্য অভিনেতারা এই দুই অভিনেতাদের বা বলা ভাল মিঠুনকে সঙ্গত করেছেন মাত্র। এবং ভালই সঙ্গত করেছেন। সে দেবই হোন, বা ঈশিতা (মালা) কিংবা কনীনিকা (গৌরের মেয়ে)। ছোট্ট চরিত্রে কৌশানী মুখোপাধ্যায়ও ভাল। আরও একটি বিশেষ ত্রিভুজ আছে ছবিতে। মিঠুন-খরাজ মুখোপাধ্যায়-অম্বরীশ ভট্টাচার্যের ত্রয়ীও। তিন জনই দুর্দান্ত অভিনেতা। তাঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ কথপোকথন ছবির জান বলা যেতে পারে। তবে শেষের দিকে অতটা মেলোড্রামা না হলেই বোধ হয় ভাল হত। যদিও হলে অনেককেই দেখা গেল চোখ মুছতে। তার মানে ছবি সফল। একটা ‘ফিল গুড’ ব্যাপার আছে ছবিতে। সেই কাটতিতেই ছবি চলবে বলে আশা করা যায়।
ছবির সঙ্গীত (অনুপম রায়-সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়- রথীজিৎ) ভাল। ছবির গান শুনতে ভালই লাগে। তবে ছবির গুরুত্বপুর্ণ মুহূর্তে একটি গান যেন ছবির গাম্ভীর্যকে কিছুটা খেলো করে। চিত্রগ্রাহক গোপী ভগত অন্যান্য ছবির মতোই দারুণ কাজ করেছেন। বেনারসে তোলা তাঁর দৃশ্যগুলি খুবই সুন্দর। শুভদীপ দাসের চিত্রনাট্য এবং সংলাপ ভালো হলেও মাঝেমাঝে একটু উঁচু তারে বাঁধা লাগে।
এ ছবি মিঠুনের। তাই এত বছর পর তাঁকে যদি দর্শক দেখতে যান, তা হলে হতাশ হবেন না।