অন্তিম: দ্য ফাইনাল ট্রুথ
পরিচালক: মহেশ মঞ্জরেকর
অভিনয়: সলমন, আয়ুষ, সচিন, উপেন্দ্র, যিশু
৫/১০
সলমন খানের ছবি বলতে যা বোঝায়, এ ছবি ঠিক তেমনটা নয়। এখানেও ভাইজানের ‘এন্ট্রি’, আর্তের রবিনহুড হয়ে গুন্ডা পেটানো, শার্ট খুলে হাতাহাতি... সবই রয়েছে। তবু এ ছবি সলমনের নয়। বরং অনেকটাই আয়ুষ শর্মার। ‘লাভযাত্রী’তে সলমন খানের ভগিনীপতির ডেবিউ কেউ মনে রাখুন বা না রাখুন, ‘অন্তিম’-এর শেষ কথা আয়ুষই। তাঁকে ময়দান ছেড়ে দিয়ে নেপথ্যে খেলেছেন সলমন।
গল্প, চিত্রনাট্য, অভিনয়... সলমনের ছবিতে এই বিষয়গুলি অন্য নিক্তিতে মাপা হয়ে থাকে সাধারণত। মরাঠি ছবি ‘মুলশী প্যাটার্ন’-এর ছায়ায় হিন্দিতে ‘অন্তিম’ তৈরি করেছেন মহেশ মঞ্জরেকর। সেই মহেশ, যাঁর পরিচালনায় হাতেখড়ি হয়েছিল ‘বাস্তব’ দিয়ে। যিনি পরিচালনা করেছেন ‘নটসম্রাট’। এ প্রসঙ্গ টেনে আনা এই জন্যই, কারণ পরিচালক হয়তো এ ছবিটিও পুলিশ-মাফিয়া সংঘর্ষের চেনা ছকে বেঁধে রাখতে চাননি। ক্লোজ়-আপে শুধুই সলমনের পেশি না দেখিয়ে তাঁকে খানিক অন্য অবতারে পেশ করতে চেয়েছিলেন।
এক সময়ের মহারাষ্ট্র কেশরী দত্তা পাটিল (সচিন খেড়েকর) নিজের জমি বেচতে বাধ্য হয় মাফিয়া নান্যা ভাইয়ের (উপেন্দ্র লিময়ে) চাপে পড়ে। দত্তার ছেলে রাহুল (আয়ুষ শর্মা) বদরাগী, বয়স কম হওয়ায় রক্তও গরম। জমি-জায়গা ছেড়ে শহরে আসার পরে পুণের মার্কেট ইয়ার্ড এলাকার ‘ভাই’ হয়ে ওঠে রাহুল। যুগে যুগে বঞ্চিত, পীড়িত কিশোরের মাফিয়া হয়ে ওঠার যে গল্প দেখিয়ে আসছে বলিউড, এ ছবিও ঠিক সেই পথেই হেঁটেছে। স্থানীয় গডফাদারের ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা, পরে তাকেই সরিয়ে দেওয়া, দাদাগিরি থেকে রাজনীতিতে প্রোমোশনের চেষ্টা... চেনা রাস্তাতেই এগোয় রাহুল। রাস্তার শেষে কী পরিণতি অপেক্ষা করে আছে, তা তাকে পরিবার বোঝায়, এমনকি পুলিশও। এই পুলিশ অফিসারটিই হলেন সলমন খান, ওরফে রাজবীর সিংহ। অন্তিম দৃশ্য কী হতে চলেছে, তা পরিষ্কার হয়ে যেতেই গল্পের বাঁধুনি আলগা হয়ে যায়।
দত্তা পাটিলের চরিত্রে সচিনের অভিনয় মনকাড়া হলেও মায়ের চরিত্রে ছায়া কদমের মতো অভিনেত্রীকে ব্যবহারই করা হয়নি। রাহুলের প্রেমিকা হিসেবে মহিমা মাকওয়ানার ভূমিকাও তথৈবচ। নারীর সম্মানরক্ষা ইত্যাদি নিয়ে গালভরা সংলাপ থাকলেও, চরিত্রায়নে তার ছাপ খুঁজে পাওয়া যায় না! রাহুলের প্রায় গোটা জীবনকাল দেখানো হলেও, রাজবীরের চরিত্রের পরিসর বেশ কম। কখনও সে আইন হাতে তুলে নিয়ে খুলি উড়িয়ে দেয় এমএলএ, গুন্ডাদের। আবার কখনও কৌশলে গ্যাং-ওয়ার লাগিয়ে দিয়ে কার্যসিদ্ধি করে। এই দ্বিচারিতার কারণ ঠিক ধরতে পারা গেল না। যেমন বোঝা গেল না, যিশু সেনগুপ্তের মতো অভিনেতা কেন গলির গুন্ডা হয়ে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন! এর চেয়ে ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তিনি আগে করেছেন হিন্দি ছবিতে।
এ ছবিতে সলমনের অভিনয় ইচ্ছাকৃত ভাবেই নিচু তারে বাঁধা। আর সুযোগ পেয়ে সবটা উজাড় করে দিয়েছেন আয়ুষ। শার্টলেস দ্বৈরথ, গণেশ পুজোর গানে বরুণ ধওয়নের ক্যামিয়ো, ওয়ালুষ্কা ডি’সুজ়ার আইটেম ডান্স... আয়োজনের ত্রুটি নেই। কিন্তু ‘অন্তিম’-এ যেন ফিকে হয়ে গেল গল্পটাই।