সূর্যবংশী
পরিচালক: রোহিত শেট্টি
অভিনয়: অক্ষয়, ক্যাটরিনা, অজয়, রণবীর, জ্যাকি, জাভেদ
৫.৫/১০
গত বছর মার্চ মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল রোহিত শেট্টির কপ ইউনিভার্সের ছবি ‘সূর্যবংশী’র। করোনা বাদ সাধায় অপেক্ষা দীর্ঘ হল। সেই অপেক্ষার ফল দর্শকের জন্য কতটা মিঠে হল, তা বোঝানোর জন্য পরিচালক নিলেন আড়াই ঘণ্টা। তার মধ্যে কতশত গোলাগুলি চলল, খান বিশেক গাড়ি উড়ল, পটাপট লোকজন আছাড় খেল... আর এই জগঝম্পটা করার জন্য একটা বস্তাপচা প্লট আমদানি করতে হল পরিচালককে। তবে রোহিত যেটা পারেন, সেটা তিনি করে দেখিয়েছেন— স্টাইলাইজ়ড অ্যাকশন। এই খেলায় তাঁকে মাত দেওয়া শক্ত।
কাহিনি শুরু হচ্ছে ১৯৯৩-এর বম্বে ব্লাস্টের ঘটনা দিয়ে। বিস্ফোরণের জন্য ১০ কেজি আরডিএক্স নিয়ে আসা হয়েছিল শহরে। তার মধ্যে কাজে লাগানো হয়েছিল ৪ কেজি। বাকি আরডিএক্স কোথায়? এবং তা দিয়ে ভবিষ্যতে আরবসাগরের তীরে আরও ভয়ানক বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। বম্বে ব্লাস্টের অন্যতম কান্ডারি বিলাল আহমেদ (কুমুদ মিশ্র) আশ্রয় নিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা লস্করের বড় চাঁই ওমর হাফিজ়ের (জ্যাকি শ্রফ) কাছে। সুযোগ বুঝে মজুত রাখা আরডিএক্স কাজে লাগানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কাট টু সাম্প্রতিক সময়, ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লস্করের পেয়াদারা মুম্বইয়ে একত্র হয় ফের বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। সেই ছক বানচালের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে বীর সূর্যবংশীর (অক্ষয়কুমার) উপরে। কাহিনির গৌরচন্দ্রিকায় এটুকুই যথেষ্ট। এর পর নানা কায়দায় ছবি জুড়ে ধরপাকড় চলতে থাকে।
অ্যাকশন সিকোয়েন্সের ফাঁকে অক্ষয়ের জন্য ক্যাটরিনা কাইফ এবং দুটো রোম্যান্টিক গানও বরাদ্দ করেছেন রোহিত। ‘মেরে ইয়ারা’ গানটির প্রয়োজন যদিও বা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু ‘টিপ টিপ বরসা পানি’? অক্ষয়-রবিনা টন্ডনের এই আইকনিক গান এ ক্ষেত্রে নস্ট্যালজিয়া জাগানোর বদলে বিরক্তিই বাড়িয়েছে।
ছবি জুড়ে একাধিক তাবড় অভিনেতা। গুলশন গ্রোভার, জ্যাকি শ্রফ, জাভেদ জাফরি, অভিমন্যু সিংহ, কুমুদ মিশ্র এবং আসিফ বসরা (প্রয়াত)... এঁরা প্রত্যেকেই ছবিতে বুদবুদের মতো ভেসে উঠলেন কিন্তু কোনও মনে রাখার মতো মুহূর্ত তৈরি হল না। আসলে সবটাই রাখা ছিল অক্ষয়ের জন্য। জবরদস্ত এন্ট্রি থেকে সংলাপ, অ্যাকশন। হেলিকপ্টার থেকে তাঁর নেমে আসা, ব্যাঙ্ককে কপ্টারে চড়ে চেজ় সিকোয়েন্সে অক্ষয় দুরন্ত। ক্যাটরিনার জন্য রোহিত একটাই ভাল দৃশ্য রেখেছিলেন, সেখানে অভিনেত্রী উতরে দিয়েছেন।
মসালা এন্টারটেনমেন্টের সব উপাদান রয়েছে ‘সূর্যবংশী’তে। কিন্তু নির্মাতাদের মাথায় রাখতে হবে, এটা ২০২১। গত দেড় বছরে দর্শকের হাড়েমজ্জায় ওটিটি ঢুকে পড়েছে। তাই ক্লিশে কাহিনিতে চকচকে মলাট লাগিয়ে শেষরক্ষা না-ও হতে পারে। প্রতিপক্ষ হিসেবে যেহেতু লস্কর জঙ্গিদের দেখানো হচ্ছে, তাই হিন্দু-মুসলমান তাস খেলার ভরপুর সুযোগ। দেশভক্ত কর্তব্যপরায়ণ মুসলমান, গণেশ মূর্তি বাঁচাতে সাহায্য করা মৌলবী... চড়া দাগের এই দৃশ্যায়নই ধর্মনিরপেক্ষতা দেখানোর একমাত্র উপায়? ছকের বাইরে গিয়ে কি কিছু করা যেত না?
এ ছবির ইউএসপি শেষ ১৫ মিনিট। পর্দায় বাজিরাও সিংহম (অজয় দেবগণ), সিম্বা (রণবীর সিংহ) এবং সূর্যবংশী একসঙ্গে ধুন্ধুমার অ্যাকশনে! রোহিত বোধহয় বুঝেছিলেন, এই ধাঁচের প্লটে একা অক্ষয়ও রক্ষা করতে পারবেন না। তাই কপ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির তিন সুপারস্টারকে ময়দানে নামিয়ে দিয়েছেন। ছবির মধ্য দিয়ে কায়দা করে সিংহমের পরবর্তী অভিযান যে পিওকে-তে হতে চলেছে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক।
বড় মাপের বাণিজ্যিক ছবির জন্য দর্শক, হলমালিক এবং প্রযোজক সকলেই অপেক্ষা করছিলেন। দর্শকের প্রশ্ন ছিল, এই ঘরানার ছবিতে কাঙ্ক্ষিত বিনোদন কি তাঁরা খুঁজে পাবেন? হলমালিকেরা দেখতে চাইছিলেন, ফর্মুলা ছবি ওটিটি জমানায় ক্লিক করছে কি না। সব প্রশ্নের জবাব মিলবে আগামী সপ্তাহে।