সংসারের চাপে দুই বোনকেই অভিনয় শুরু করতে হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক জন চলে গিয়েছিলেন খ্যাতির শীর্ষে। আর এক বোন এখন বিস্মৃতির আড়ালে। শোনা যায়, বোন রাধাকে পরবর্তী সময়ে অভিনয় করতে দেননি দিদি রেখা, নিজেই।
রেখা এবং রাধার বাবা ছিলেন বিখ্যাত চিত্র পরিচালক জেমিনি গণেশন। প্রথম স্ত্রী আলামেলুর সঙ্গে বিবাহিত অবস্থাতেই গণেশন বিয়ে করেছিলেন সাবিত্রীকে। এ ছাড়াও তাঁর সম্পর্ক ছিল অভিনেত্রী পুষ্পাবল্লীর সঙ্গে। গণেশন এবং পুষ্পাবল্লীর দুই মেয়ে হলেন রেখা এবং রাধা। কিছু সূত্র অবশ্য দাবি করে, গণেশন এবং পুষ্পাবল্লী পরে বিয়ে করেছিলেন।
বাবার সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ না হলেও সৎ বোনদের সঙ্গে ছোট থেকেই ভাল সম্পর্ক ছিল রেখা ও রাধার। মায়ের পাশে দাঁড়াতে রেখা ছোট থেকেই অভিনয় করতে শুরু করেন।
গণেশনের সঙ্গে সম্পর্কের আগে পুষ্পাবল্লী বিয়ে করেছিলেন আইনজীবী রঙ্গচারীকে। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য ৬ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। স্বামীকে ছেড়ে দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকতেন পুষ্পাবল্লী।
দুই পক্ষের পাঁচ সন্তানকে একাই বড় করেছিলেন পুষ্পাবল্লী। রেখা ও রাধাকে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত নিজের সন্তান বলেই মানতে চাননি গণেশন।
তামিল ও তেলুগু ছবির অভিনেত্রী পুষ্পাবল্লীর কাছে অভিনয়ের সুযোগ ক্রমশ কমে আসছিল। পরিবর্তে তাঁর মেয়ে রেখার কাছে শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করার সুযোগ আসতে থাকে।
অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে কোনও দিন ছিল না রেখার। চেয়েছিলেন স্বাভাবিক শৈশব কাটাতে। কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পড়াশোনায় ইতি টেনে অভিনয়জীবনে পা রাখতে বাধ্য হন তিনি।
তার পরেও বার বার অভিনয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রেখা। কিন্তু পারেননি মায়ের কথা ভেবে। চেন্নাই থেকে বলিউডে অভিনয় করতে এসেছিলেন রেখা। প্রথম দিকে হিন্দি তাঁর কাছে দুর্বোধ্য ছিল। কিন্তু রক্তরক্ষণ সত্ত্বেও অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
রেখার বোন রাধা যখন অভিনেত্রী হতে চাইলেন, তখন কিন্তু তীব্র আপত্তি জানালেন রেখা। তিনি চাননি, লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরার মোহে তাঁর বোনের জীবনও ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাক।
তার পরেও অবশ্য অভিনয় করেছিলেন রাধা। কিছু তামিল ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কোনও দিনই প্রথম সারির নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি। দর্শকরদের মতে, রেখার সঙ্গে তাঁর চেহারার সাদৃশ্যও আছে।
বেশ কিছু পণ্যের মডেলিং করলেও বলিউডেও নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেননি রাধা। ধীরে ধীরে বিনোদন জগতের বৃত্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি।
পরবর্তীতে রাধা বিয়ে করেন তাঁর বাল্যবন্ধু উসমান সৈয়দকে। পেশায় মডেল উসমান হলেন পরিচালক এস এম আব্বাসের ছেলে।
বিয়ের পরে অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন রাধা। স্বামীর সঙ্গে থিতু হন আমেরিকায়। সেখানে তিনি এক জন প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী। অবসরে নৃত্যচর্চাও করে থাকেন।
দিদি রেখার সঙ্গেও রাধার সম্পর্ক ভাল। মাধুরী দীক্ষিত-সহ বহু বলিউড তারকার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা রিক্কু রাকেশ নাথের মেয়ে বিয়েতে রেখা ও রাধা ধরা দিয়েছিলেন একই ফ্রেমে।
প্রসঙ্গত জেমিনি গণেশনের বাকি সন্তানদের সঙ্গেও রেখা ও রাধা সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
জেমিনি গণেশনের বড় মেয়ে রেবতী স্বামীনাথন একজন অঙ্কোলজিস্ট। আমেরিকায় গবেষণা করেন ক্যানসার নিয়ে। মেজো মেয়ে কমলা সেলভারাজও চিকিৎসক। থাকেন চেন্নাইয়ে। সেজো মেয়ে নারায়ণী এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক। চতুর্থ কন্যা জয়া শ্রীধর ফিটনেস এক্সপার্ট।
গণেশনের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিত্রীর দুই সন্তান। মেয়ে বিজয়া চামুণ্ডেশ্বরী এবং ছেলে সতীশ কুমার। বিজয়ার ছেলে অর্থাৎ গণেশনের নাতি পা রেখেছেন অভিনয়জীবনে। সতীশ কুমার অবশ্য দীর্ঘ দিন আমেরিকাপ্রবাসী।
বিরল হলেও কোনও কোনও অনুষ্ঠানে বাকি বোনেদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে রেখাকে। তাঁর মতো গ্ল্যামারকুইন না হলেও বাকি বোনেরা এবং একমাত্র ভাই নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত।