Jasraj

‘আমি গাইছি, উনি শুনছেন!’ পণ্ডিত জসরাজকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় রাশিদ খান

পণ্ডিত যশরাজের প্রয়াণ উপমহাদেশের সঙ্গীতজগতের বড় ক্ষতি। তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে বিশাল বড় শূন্যতা তৈরি করল!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৪
Share:

পণ্ডিত যশরাজ

আমার দাদামশাই উস্তাদ নিসার হুসেন খান আর পণ্ডিত জসরাজ ছিলেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। যাকে বলে ‘টোপিবদল ভাই’! পরস্পরকে খুব শ্রদ্ধা করতেন, ভালবাসতেন। সেই সূত্রেই পারিবারিক সংযোগ। আমি পণ্ডিতজির ব্যক্তিগত সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি। অনেক স্মৃতি জমে রয়েছে তাঁকে নিয়ে। সে সব অভিজ্ঞতা আর স্মৃতি আমার জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে। খুব স্নেহ করতেন আমায়। পণ্ডিতজির স্ত্রী মধুরা আন্টির স্নেহের কথাও কখনও ভুলব না! মুম্বইয়ে থাকাকালীন উনি চিকেন রান্না করলেই ডাক পেয়ে আমি হাজির! মধুরাজি নিজেও শিল্পী। আমাদের ঘরানারই। রামপুর ঘরানার। উনি তো কত বার কত জনকে যে ডেকে বলেছেন, ‘‘রাশিদকে শোনো! ও আমাদের ঘরানার বাচ্চা!’’

Advertisement

পণ্ডিতজির কত আসরে যে বুঁদ হয়ে শুধু শুনে গিয়েছি, তার হিসেব নেই! তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠান করার সৌভাগ্যও হয়েছে আমার বহুবার। এমনও হয়েছে যে, সকালে গাইবেন পণ্ডিতজি। আমি তো যাবই শুনতে। উনি বারণ করছেন। বলছেন আরাম করতে। কারণ, সন্ধ্যায় ওই একই মঞ্চে আমার অনুষ্ঠান। আমি মোটেই শুনতাম না বারণ। ওঁর গান শুনব না, হতে পারে না! আবার এমনও হয়েছে, আমি গাইছি আর শ্রোতার আসনে পণ্ডিত জসরাজ! এ সৌভাগ্যও হয়েছে আমার! জীবনে ভুলব না জয়পুরের আসরের কথা। পণ্ডিতজি মিয়াঁ-কি টোড়ি গাইছেন। ললিতও হতে পারে। ঠিক মনে নেই। কিন্তু সেই আসরে শ্রোতাদের অবস্থা মনে আছে! যে শ্রোতাদের মধ্যে ছিলাম আমিও। কণ্ঠমাধুর্য যে চারপাশ কী ভাবে বদলে দিতে পারে, তার পরিচয় পেয়েছিলাম!

পণ্ডিত জসরাজের সঙ্গীতভাবনার ব্যাপ্তি বিশাল। মেবাতী ঘরানাকে প্রতিষ্ঠিত করার সাঙ্গীতিক কৃৎকৌশল তো বটেই, পাশাপাশি আরও নানা ধরনের সঙ্গীত-প্রকরণকেও সমৃদ্ধ করেছেন। যেমন, হাভেলি সঙ্গীত। রাজস্থানের এই সঙ্গীত প্রকরণকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন পণ্ডিতজি। এ ছাড়া তো রয়েইছে তাঁর তুলনাহীন সব ভজন! ধর্মীয় ভাবনা তাঁর গানে আলাদা মাত্রা পেত। সে ভাবনা সর্বজনীন মিলনমন্ত্র। অশীতিপর বয়সেও তিনি মঞ্চে অনুষ্ঠান করতেন, অননুকরণীয় জাদুতে মোহিত করতেন শ্রোতাদের। হরিয়ানার এক ছোট্ট গ্রামে জন্মেছিলেন। সেখান থেকে শুরু করে তাঁর জয়যাত্রার ইতিহাস বিস্ময় তৈরি করে। গানবাজনার পরিবারে জন্ম। শুরুতে গানের পাশাপাশি তবলায় মনোনিবেশ। পরে পুরোপুরি কণ্ঠসঙ্গীতে মনোনিবেশ। শুধু মনোনিবেশই নয়, কণ্ঠসঙ্গীতকে স্বকীয়তায় ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

পণ্ডিত জসরাজের প্রয়াণ উপমহাদেশের সঙ্গীতজগতের বড় ক্ষতি। তাঁর প্রয়াণ আমার কাছে বিশাল বড় শূন্যতা তৈরি করল!

আরও পড়ুন: দিদির পর সুশান্তের বাবার বয়ান রেকর্ড ইডি-র

অনুলিখন: সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement